বুধবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৩ আশ্বিন ১৪৩১
Proval Logo

পুঁজিবাজারে দরপতন অব্যাহত

প্রকাশিত - ২১ আগস্ট, ২০২৪   ০৯:০১ পিএম
webnews24

প্রভাত অর্থনীতি : আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ৪ কর্মদিবসে উত্থানের পর থেকে পুঁজিবাজারে টানা দরপতন চলছে। দেশে লুটপাট, নিরাপত্তাহীনতায় ব্যবসা বাণিজ্য থমকে থাকার মধ্যে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর শেয়ারদর কমল টানা ৫ কর্মদিবস। সূচক লাফ দেয়ার সময় লেনদেন ২ হাজার কোটি টাকা ছুঁয়ে ফেললেও এখন তা নেমে এসেছে ৫০০ কোটি টাকার ঘরে। দরপতনে বিনিয়োগকারীরা হতাশ, তারা ক্ষুব্ধ। কেউ কেউ অবশ্য বলছেন, অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় এসেছে, পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ বিএসইসিতে নতুন চেয়ারম্যান এসেছেন, তাদেরকে সময় দিতে হবে। ব্যক্তি শ্রেণির বিনিয়োগকারি জসিম উদ্দিন বলেন, আজকে বাজারে অনেক খবর আসল। ‘মার্কেট প্লেয়ারদের’ ব্যাংক হিসাব চাওয়া হয়েছে, ব্যাংক খাতে পরিবর্তন আসছে। একটা চক্র তো বাজারে থেমে গেল। তারাও তো লেনদেন করে, তাদের কাছে বড় বড় তহবিল আছে। তারা না আসায় লেনদেন তো কমবে, বাজার পড়বে। একটু সময় লাগবে বুঝতে।

ডিএসই ব্রোকারেজদের সংগঠন ডিবিএ সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, আমাদের ব্যক্তি বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ সক্ষমতা তো কম। শেয়ার দর বেড়ে যাওয়ার সময়ে তারা কিনেছিল, আর্থিক খাতে কিছু অনিয়ম এখন বের হচ্ছে সংবাদ মাধ্যমে। অনেক কিছুই এতদিন প্রকাশ না হওয়ায় কারসাজি চক্রটি সম্পর্কে জানতে পারছেন বিনিয়োগকারীরা। তাই কেউ কেউ বিক্রি করছেন, একটু সময় দিতে হবে ঘুরে দাঁড়াতে। বুধবার সপ্তাহের চতুর্থ কর্মদিবসে ১১টি কোম্পানির দর বৃদ্ধির দর হারিয়েছে ৩৭১ টি। ফ্লোর প্রাইসে থাকা ছয়টি কোম্পানিসহ মোট ১২টি আগের দিনের দরে হাতবদল হয়েছে।

দরপতনের সর্বোচ্চ সীমা ৩ শতাংশ নির্ধারিত থাকার পরেও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সাধারণ সূচক-ডিএসইএক্স কমেছে ১ দশমিক ৮৯ শতাংশ বা ১০৮ পয়েন্ট। অথচ গত ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর চার কর্মদিবসে ৭৮৬ পয়েন্ট সূচক বাড়ার পর বিনিয়োগকারীরা উৎফুল্ল হয়ে উঠেছিল। এরপর ৮ কর্মদিবসে সূচক পড়ল ৪০৮ পয়েন্ট। এর মধ্যে ৫ দিনেই পড়ল ৩৪৫ পয়েন্ট। লেনদেন গত ১১ অগাস্ট ছিল দুই হাজার কোটি টাকার কিছু বেশি। সেটি ধারাবাহিকভাবে কমতে কমতে দাঁড়িয়েছে ৫৩৬ কোটি টাকায়। বুধবার দিন শেষে ডিএসইএক্সের ৫ হাজার ৬০৬ পয়েন্টে যা গত ১১ অগাস্ট ছিল ৬ হাজার ১৫ পয়েন্ট, যদিও এক সময় ৬ হাজার ২০০ পয়েন্টের কাছাকাছি চলে গিয়েছিল সেদিন।

অন্তর্বর্তী সরকারের বেছে নেয়া মাশরুর রিয়াজ বিএসইসির চেয়ারম্যান হতে রাজি না হওয়ার পর গত সোমবার নেতৃত্বে আসেন খন্দকার রাশেদ মাকসুদ। তিনি নেতৃত্বে আসার পর টানা তিন কর্মদিবস দরপতন হল বাজারে। ডিএসইর প্রধান সূচকের পাশাপাশি কমেছে অন্য দুটি সূচকও। ডিএসই শরিয়া সূচক কমেছে ২ দশমিক ৩০ শতাংশ বা ২১ পয়েন্ট, সেরা ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই৩০ সূচক কমেছে ২ দশমিক ১ পয়েন্ট বা ৪৫ পয়েন্ট। বিনিয়োগকারীদের ‘মন খারাপের’ এই দিনে সবচেয়ে বেশি দর বেড়েছে দুর্দশাগ্রস্ত ব্যাংক এনবিএলের। খেলাপি ঋণ জর্জর ব্যাংকটির পর্ষদ পুনর্গঠন করে বিএনপি নেতা আবদুল আউয়াল মিন্টু অন্তর্ভুক্তির খবরে শেয়ারদর সার্কিট ব্রেকার ছুঁয়ে লেনদেন হয়েছে। আগের দিন দর ছিল ৬ টাকা ৯০ পয়সা, এক দিনে দর বাড়তে পারত ৬০ পয়সা, ততটাই বেড়ে দিন শেষে দর দাঁড়িয়েছে ৭ টাকা ৫০ পয়সা।

এছাড়া রাষ্ট্রায়ত্ত ন্যাশনাল টি কোম্পানির দর ৬.০৯ শতাংশ, আবদুল আউয়াল মিন্টোর মালিকানাধীন বন্ধ কোম্পানি দুলামিয়া কটনের দর ৪.৭৪ শতাংশ, তার আরেক কোম্পানি কে অ্যান্ড কিউয়ের দর ৩.৬৮ শতাংশ, প্রাইম ব্যাংক ফার্স্ট আইসিবি এএমসিএল মিউচুয়াল ফান্ডের দর ৩.৫৭ শতাংশ, ইউসিবি ব্যাংকের দর ২.২০ শতাংশ, এটলাস বাংলাদেশের দর ২.১২ শতাংশ, লাভেলো আইসক্রিমের দর ২.০৮ শতাংশ, রূপালী ব্যাংকের দর ১.৮৮ শতাংশ ও সানলাইফ লাইফ ইন্স্যুরেন্সের দর বেড়েছে ১.৫০ শতাংশ। দরপতনের সর্বোচ্চ সীমা ৩ শতাংশ থাকলেও পর্ষদ ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার দর হারিয়েছে ৬.৪৫ শতাংশ, এটা কীভাবে হল সেটি বিনিয়োগকারীদের কাছে স্পষ্ট নয়।

অন্যদিকে দর হারানো ২৬০টিরও বেশি কোম্পানি পতনের সর্বোচ্চ সীমা ৩ শতাংশ বা কাছাকাছি নেমে লেনদেন শেষ করেছে। পতনের শীর্ষ দশে ইসলামী ব্যাংক ছাড়াও ছিল টেকনো ড্রাগস, এসিআই ফরমুলেশন, রূপালী লাইফ, লিবরা ইনফিউশন, সিপার্ল বিচ রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা কোহিনুর ক্যামিকেলস, গ্রামীণ ফোন ও উত্তরা ফাইন্যান্স। শীর্ষ ১০ কোম্পানির কারণেই সূচক কমেছে ৫৪ দশমিক ৬০ পয়েন্ট। কোম্পানিগুলো হল গ্রামীণ ফোন, ব্রিটিশ আমেরিকান ট্যোবাকো, ওয়ালটন, রবি, ইসলামী ব্যাংক, ইউনাইটেড পাওয়ার, স্কয়ার ফার্মা, ব্র্যাক ব্যাংক, লাফার্জ হোলসিম সিমেন্ট ও ইউনিলিভার।

ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে সঙ্গে থাকুন
ওয়েব নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

আরও পড়ুন