প্রভাত রিপোর্ট : চলমান টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা হয়েছে অম্লমধুর। গ্রুপপর্বের পর সুপার এইটে শেষ ম্যাচ খেলতে মঙ্গলবার ২৫ জুন ভোরে মাঠে নামছে আফগানিস্তানের বিপক্ষে। যদিও এই ম্যাচের আগে নানা সমীকরণ রয়েছে। সোমবার রাতে মুখোমুখি ভারত-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচের উপর অনেককিছু নির্ভর করছে। লাল সবুজ দলের সম্ভাবনার শেষ সুতোয় ঝুলছে সেমিফাইনালে খেলা। শেষ মুহূর্তে এসে জমে উঠেছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। মারকাটারি এই আসরে সুপার এইটের গ্রুপ-১-এ নিজেদের প্রথম দুই ম্যাচের দুটিতেই হেরেছে বাংলাদেশ, অন্যদিকে দুটিতেই জিতেছে ভারত। তবে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে আফগানিস্তানের দারুণ জয়ে সেমিফাইনালের লাইনআপ এখনও চূড়ান্ত হয়নি। তাই কোনো পয়েন্ট না পেলেও কাগজে-কলমে শেষ চারে ওঠার সুযোগ আছে বাংলাদেশেরও। ভারত-অস্ট্রেলিয়া ও বাংলাদেশ-আফগানিস্তান ম্যাচে যদি অস্ট্রেলিয়া ও আফগানিস্তান জেতে, তাহলে তিন দলের পয়েন্ট সমান ৪ করে হবে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ নিশ্চিতভাবেই বাদ পড়বে। বাকি দুই দলের মধ্যে ভারত নেট রানরেটে এগিয়ে থাকায় তারা সুবিধাজনক অবস্থানে থাকবে।
এখন ভারতের নেট রানরেট +২.৪২৫। তাদের পেছনে ফেলে সেমিফাইনালে উঠতে হলে অস্ট্রেলিয়া (+০.২২৩) ও আফগানিস্তানকে (-০.৬৫০) নিজেদের শেষ ম্যাচ জিততে হবে বড় ব্যবধানে। ভারতের নেট রানরেট ছাড়িয়ে যেতে অস্ট্রেলিয়াকে জিততে হবে অন্তত ৪১ রানে। আর আফগানিস্তানের তখন সেমিফাইনালে যেতে হলে বাংলাদেশের বিপক্ষে জিততে হবে কমপক্ষে ৮৩ রানে। তবে ভারতের বিপক্ষে যদি অস্ট্রেলিয়া ১ রানে জেতে, নেট রানরেটে অস্ট্রেলিয়াকে পেছনে ফেলে সেমিফাইনালে উঠতে বাংলাদেশের বিপক্ষে আফগানিস্তানকে জিততে হবে ৩৬ রানে। আর অস্ট্রেলিয়া যদি রান তাড়ায় জেতে শেষ বলে, তাহলে তাদের রানরেট পেছনে ফেলতে ১৬০ রানের লক্ষ্যে ১৫.৪ ওভারের মধ্যে জিততে হবে আফগানদের। আর যদি ভারত ও বাংলাদেশ নিজেদের খেলায় জেতে তাহলে ৬ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপের শীর্ষ দল হিসেবে সেমিফাইনালে উঠবে ভারত।
অন্য তিন দলের পয়েন্ট হবে সমান ২ করে। তখন নেট রানরেটের ভিত্তিতে দ্বিতীয় দল হিসেবে সেমিফাইনালে উঠবে অস্ট্রেলিয়া, বাংলাদেশ ও আফগানিস্তানের একটি। বাংলাদেশকে সেমিফাইনালে যেতে হলে নিজেদের আফগানিস্তানের বিপক্ষে জিততে হবে ৩১ রানে। পাশাপাশি ভারতের কাছে অস্ট্রেলিয়াকে হারতে হবে ৫৫ রানে। তাহলেই কেবল সেমিতে যেতে পারবে নাজমুল হোসেন শান্তর দল। এদিকে বাংলাদেশকে হারিয়েই সেমিফাইনালে যেতে চায় আফগানরা। সুপার এইটে সবশেষ ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দুর্দান্ত এক জয় দিয়ে গ্রুপ ওয়ানের হিসাব উলট পালট করে দিয়েছে আফগানিন্তান। ৪ দলের কোনো দলেরই এখনো সেমিফাইনাল নিশ্চিত হয়নি। পরবর্তী ম্যাচে আফগানিস্তান চায় বাংলাদেশকে হারিয়ে সেমির টিকেট কাটতে। অজিদের বিপক্ষে জয়ের পর আফগান অধিনায়ক রশিদ খান বলেন, ‘অস্ট্রেলিয়াকে হারানোর অনুভূতি দারুণ। এই জয় দল ও দেশের জন্য অনেক বড় অর্জন। যা আমরা ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপে করতে পারিনি, এমনকি অস্ট্রেলিয়ায় ২০২২ বিশ্বকাপেও করতে পারিনি এবার তা পূর্ণ হলো।’
অস্ট্রেলিয়াকে হারানোর পর এখন আফগানিস্তানের সেমিফাইনালে খেলার দারুণ সুযোগ আছে। সেমিতে খেলার সুযোগ সম্পর্কে রশিদ খান বলেন, ‘অস্ট্রেলিয়াকে হারানোর পর আমাদের জয় মাত্র শুরু হলো। সেমিফাইনালে খেলার সব সুযোগ আমাদের আছে।’ ১৪৮ রান বড় সংগ্রহ না হলেও রশিদের বিশ্বাস ছিল এই রান দিয়েই জেতা সম্ভব। রশিদ বলেন, ‘১৪০ রান এই মাঠে আমাদের জন্য ভালো সংগ্রহ। ব্যাট হাতে আমরা ভালোভাবে শেষ করতে পারিনি এটা সত্যি। কিন্তু এ ধরনের পিচে আপনাকে সবসময় সংগ্রাম করতে হবে রানের জন্য। তবে শুরুটা ভালোভাবে হওয়ায় আমরা মোটামুটি লড়াই করার সংগ্রহটা পেয়েছি। আমরা জানতাম, যদি শান্ত থাকি, তবে এই রান নিয়ে জিততে পারব।’ এই ম্যাচে আফগানিস্তানের জয়ের অন্যতম নায়ক গুলবদিন নাইব। ৪ ওভারে ২০ রান দিয়ে ৪ উইকেট নেওয়া গুলবদিন নাইবের প্রশংসা করে আফগান অধিনায়ক বলেন, ‘এটাই দলের সৌন্দর্য। দলে অনেক বেশি অলরাউন্ডার থাকায় বিকল্প পাওয়া যায়। ওর হাতে আপনি যখনই বল তুলে দেবেন, সে তা হাসিমুখে গ্রহণ করে। যেভাবে গুলবদিন বল করেছে, তার অভিজ্ঞতা দারুণ কাজে লেগেছে’।
এদিকে শেষ চারে ওঠার লড়াইয়ে সবচেয়ে কঠিন সমীকরণের সামনে দাড়িয়ে বাংলাদেশ। চার দলের সামনেই যেমন সেমির দুয়ার খোলা, তেমনি চার দলেরই হয়েছে বাদ পড়ার শঙ্কা। আফগানদের জয় টুর্নামেন্টে টিকিয়ে রেখেছে বাংলাদেশকে। তবে টানা দুই হারের পাশাপাশি নেট রানরেটেও অনেক পিছিয়ে থাকায় বাংলাদেশের জন্য সেমিতে ওঠার সমীকরণ সবচেয়ে কঠিন। সম্ভাবনায় এগিয়ে গ্রুপের অন্য তিন দল। প্রথম দুই ম্যাচ জেতার পাশাপাশি রানরেটও সমৃদ্ধ হওয়ায় সেমিতে কার্যত এক পা দিয়ে রেখেছে ভারত। একটি করে জয় ও হারে অস্ট্রেলিয়া ও আফগানিস্তানের পয়েন্ট সমান দুই করে। রানরেটে অস্ট্রেলিয়া এগিয়ে থাকলেও শেষ ম্যাচে তাদের দিতে হবে অগ্নিপরীক্ষা। আর বাংলাদেশ রয়েছে নানা সমীকরণের সামনে দাঁড়িয়ে।
প্রভাত/আসো