রবিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৩ ভাদ্র ১৪৩১
Proval Logo
পিএসসির প্রশ্নফাঁস

কাজ শুরু করেছে তদন্ত কমিটি, ‘সন্দেহে’ প্রশ্ন প্রণয়নকারীরাও

প্রকাশিত - ১০ জুলাই, ২০২৪   ০৯:০৫ পিএম
webnews24

প্রভাত রিপোর্ট : বিসিএসসহ বিভিন্ন সরকারি চাকরিতে নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা নিয়ে ‘বড় প্রশ্নের’ মুখে পড়েছে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। গত ১২ বছরে অন্তত ৩০টি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের খবর গণমাধ্যমে প্রকাশের পর চরম আস্থার সংকটে পড়েছে সাংবিধানিক এ প্রতিষ্ঠানটি। জনমনে যে বিরূপ প্রভাব পড়েছে, তা কাটিয়ে আস্থা ফেরাতে এখন মরিয়া পিএসসি। এজন্য প্রশ্নফাঁসে জড়িতদের ধরতে করা হয়েছে তদন্ত কমিটি। পুরোদমে কাজও শুরু করেছেন কমিটির সদস্যরা।

কমিটির সদস্যরা জানান, স্বাধীনভাবে কাজ করার এখতিয়ার দেওয়ায় সব পক্ষকে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন তারা। পিএসসির কর্মকর্তা-কর্মচারী থেকে শুরু করে প্রশ্ন প্রণয়নকারী এবং বিশেষজ্ঞ; কাউকেই সন্দেহের বাইরে না রেখে চলছে তদন্তকাজ।
জানতে চাইলে তদন্ত কমিটির প্রধান পিএসসির যুগ্মসচিব ড. আব্দুল আলীম খান জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমাদের তদন্তকাজ সম্পন্ন করার জন্য ১৫ দিন সময় দেওয়া হয়েছে। যেসব ইস্যু নিয়ে কাজ করতে বলা হয়েছে, সেগুলো নিয়ে আমরা স্বাধীনভাবে কাজ করছি।’

তিনি বলেন, ‘গত সোমবার রাতে তদন্ত কমিটি গঠনের পরই অন্য দুজনের সঙ্গে আমার আলাপ হয়েছিল। গতকাল মঙ্গলবার আমরা বসেছিলাম। এটা নিয়েই এখনো কাজ করছি। আশা করি, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত শেষে প্রতিবেদন দিতে পারবো।’
সন্দেহের তালিকায় প্রশ্ন প্রণয়নকারীরাও!
পিএসসির অধীনে অনুষ্ঠিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্র যেভাবে প্রণয়ন, ছাপা এবং কোন সেটে পরীক্ষা হবে- তা নির্ধারণ করা হয়; তাতে প্রশ্নফাঁস খুবই কঠিন বলে মনে করেন পিএসসির কর্মকর্তারা।

তদন্ত কমিটিতে দায়িত্বপ্রাপ্ত দুজন নাম প্রকাশ না করে জাগো নিউজকে জানান, তারা চ্যানেল টোয়েন্টিফোর টেলিভিশনে প্রচারিত প্রতিবেদন দেখে, বিবেচনাযোগ্য সব বিষয়ে নোট নিয়েছেন। প্রশ্নপত্র প্রণয়নকারী থেকে কেন্দ্রে পৌঁছানো পর্যন্ত কোন কোন অংশীজন এসব কাজে জড়িত থাকেন, তাদের সবার আলাদা আলাদা অবস্থান নির্ণয় করা হচ্ছে।

কমিটির ওই দুজনের মধ্যে একজনের ভাষ্য, ‘টিভিতে প্রচারিত প্রতিবেদনে যে ছেলেটিকে চাকরিপ্রার্থী করে চক্রের কাছে পাঠানো হয়েছিল, তিনি ফিরে এসে বলেছেন ৮৫টা প্রশ্ন কমন পড়েছে। অর্থাৎ, তাকে যে প্রশ্ন বা সাজেশন পড়ানো হয়েছিল, তার মধ্যে এগুলো কমন পড়েছে। সেক্ষেত্রে প্রকৃত প্রশ্ন তাকে হুবহু দেওয়া হয়েছিল কি না, সেটা তদন্তের বিষয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রশ্ন প্রণয়নকারীরা নিজেরা জানেন না যে তার তৈরি করা প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা হচ্ছে কি না। তারপরও অনেক সময় নিজেদের আত্মীয়-স্বজনদের সেটা সাজেশন আকারে দেন। সেখান থেকে অনেক সময় কমন পড়ে যেতে পারে। এজন্য প্রশ্ন প্রণয়নকারীদেরও সন্দেহের তালিকায় রেখেছি আমরা।’

শুধুই রেলওয়ের প্রশ্নফাঁসের তদন্ত সম্ভব!
বেসরকারি টিভি চ্যানেলের প্রচারিত প্রতিবেদনটিতে ১২ বছর ধরে বিসিএসসহ বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁসের ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি করা হয়েছে। গঠিত তদন্ত কমিটিকেও সব বিষয় নিয়েই তদন্ত করতেও এখতিয়ার দিয়েছে পিএসসি।

তবে পিএসসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানান, যে বিসিএসের চূড়ান্ত সুপারিশ এবং গেজেট হয়ে গেছে, সেটা নিয়ে তদন্ত এবং তা বাতিলের এখতিয়ার পিএসসির নেই। ফলে সেটা নিয়ে কাজ করা সম্ভবও নয়।

তদন্ত কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্তরা জানান, তাদের প্রথম নজর গত ৫ জুলাইয়ে রেলওয়ের উপ-সহকারী প্রকৌশলী পদের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের ঘটনাটি। সেদিন আদৌও প্রশ্নফাঁস হযেছিল কি না, সেটা সবার আগে বের করাটা জরুরি। সঙ্গে এ ঘটনায় কারা জড়িত, সেটাও তুলে আনা হবে।

১২ বছর আগের প্রশ্নফাঁস বিষয়ে তদন্ত হবে কি না, হলে কীভাবে— এমন প্রশ্নের জবাবে কমিটির একজন বলেন, ‘এটা এখতিয়ারে আছে কি না, তা দেখতে হবে। সুযোগ থাকলে সবকিছু নিয়েই কাজ করা হবে।’
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে পিএসসির চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসাইন জাগো নিউজকে বলেন, ‘তদন্ত কমিটি কাজ করছে। সব বিষয়ে তাদের কাজের স্বাধীনতা রয়েছে। যাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন, সেটা করবেন। প্রতিবেদন হাতে পেলে কমিশন সভায় আনুষ্ঠানিকভাবে সিদ্ধান্ত হবে।’

প্রশ্নফাঁস-কাণ্ডে যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে পিএসসি
গত ৭ জুলাই রাতে প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ তুলে প্রতিবেদন প্রচার করে বেসরকারি টেলিভশন চ্যানেল টোয়েন্টিফোর। এর পরদিন ৮ জুলাই নিজেদের অবস্থান তুলে ধরে ব্যাখ্যা দেয় পিএসসি। সেখানে প্রশ্নফাঁস অসম্ভব বলে দাবি করে সংস্থাটি। যদিও ওই ব্যাখ্যার শেষদিকে উল্লেখ করা হয়, ‘তারপরও বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে’।

একইদিন রাতে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে পিএসসি। কমিটিতে প্রধান করা হয় পিএসসির যুগ্মসচিব ড. আব্দুল আলীম খানকে। কমিটির সদস্যসচিব করা হয় পরিচালক মোহাম্মদ আজিজুল হককে এবং একমাত্র সদস্য হিসেবে রাখা হয় আরেক পরিচালক দিলাওয়েজ দুরদানাকে।
পরদিন ৯ জুলাই পিএসসি প্রশ্নফাঁসে জড়িত থাকার মামলায় সিআইডির হাতে গ্রেফতার পাঁচ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্ত করে পিএসসি। তারা হলেন—পিএসসির উপ-পরিচালক আবু জাফর, উপ-পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম, সহকারী পরিচালক আলমগীর কবির, ডেসপাস রাইডার খলিলুর রহমান ও অফিস সহায়ক সাজেদুল ইসলাম।

প্রভাত/টুর

ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে সঙ্গে থাকুন
ওয়েব নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

আরও পড়ুন
উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন চিকিৎসক নেতৃবৃন্দ
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহতদের সংবাদ সম্মেলন