• বুধবার, ০২ এপ্রিল ২০২৫, ০৩:১৮ অপরাহ্ন

বাংলাদেশের আইসিটি সেক্টর: উন্নয়ন ভাবনা ও করণীয়

প্রভাত রিপোর্ট / ১৩৮ বার
আপডেট : শনিবার, ১৫ মার্চ, ২০২৫

মোহাম্মদ ফারুক আহমেদ
সিইও, আইসিএস সিস্টেম সলিউশন
কমিউনিটি ম্যানেজার, ওপেন সোর্স বাংলাদেশ অ্যালায়েন্স

বাংলাদেশের আইসিটি সেক্টরের উন্নয়ন শুধুমাত্র সরকারের প্রতিনিধি, প্রযুক্তি কোম্পানি, একাডেমিক প্রতিষ্ঠান, বিনিয়োগকারী কিংবা বেসিসের সদস্যদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। বরং, BASIS, e-CAB, BACCO এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের জন্যও এই খাতের টেকসই উন্নয়ন অত্যন্ত জরুরি।
বর্তমানে আমরা এমন এক পরিস্থিতির সম্মুখীন যেখানে আইসিটি সেক্টরের উদ্যোক্তারা পর্যাপ্ত কাজ পাচ্ছেন না। দীর্ঘ ১৪ বছরের বৈষম্যমূলক সিন্ডিকেট ব্যবসা এবং উন্নয়নের নামে নানা অনিয়ম এ খাতের প্রবৃদ্ধিকে ব্যাহত করেছে। ফলে, সমগ্র খাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
তাই, এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া আবশ্যক: কাঠামোগত সংস্কার ও নীতিগত সুপারিশ
✅ বাণিজ্যিক সংগঠন যেমন BASIS, e-CAB, BACCO-এর কাঠামোগত সংস্কার করে এগুলোকে আরও কার্যকর এবং ক্ষমতাবান করা।
✅ আইসিটি সেক্টরের সংস্কার প্রস্তাবনা চূড়ান্ত করে তা সরকারের কাছে উপস্থাপন করা।
✅ ভ্যাট ও ট্যাক্স মওকুফসহ প্রণোদনা পদ্ধতি সহজ করা।
✅ সরকারি প্রকল্পে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা।
✅ সফটওয়্যার খাতকে দুর্নীতি ও সিন্ডিকেটমুক্ত করা।
✅ দেশীয় সফটওয়্যার কোম্পানিগুলোর স্বার্থ রক্ষার জন্য সফটওয়্যার আমদানি সীমিত করা এবং অবৈধ বিদেশি জনবল ফেরত পাঠানো।
স্টার্টআপ ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য বিশেষ নীতিমালা
🔹 বাংলাদেশের ডিজিটাল উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হলে স্টার্টআপ ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের সরকারি প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। তবে, বর্তমান পাবলিক প্রকিউরমেন্ট রুলস (PPR) অনুসারে নতুন কোম্পানিগুলোর সরকারি কাজ পাওয়া কঠিন। এই সমস্যার সমাধানে কিছু কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে—
🔹 ইনোভেটিভ প্রকল্পে স্টার্টআপদের অংশগ্রহণ: আইসিটি বিভাগ উন্মুক্ত প্রস্তাবনা আহ্বান (Open Proposal Call) করতে পারে, যেখানে নতুন কোম্পানি বা উদ্যোক্তারা অংশ নিতে পারবেন। যোগ্য দল বাছাইয়ের জন্য লাইভ ডেমো প্রদর্শনের ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে।
🔹 বড় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ছোটদের সমান প্রতিযোগিতার সুযোগ: নির্দিষ্ট কিছু সরকারি প্রকল্পের ক্ষেত্রে শর্ত আরোপ করা যেতে পারে, যাতে বার্ষিক রাজস্ব ২ কোটি টাকার বেশি হলে তারা ছোট প্রকল্পে অংশ নিতে না পারে।
🔹 বড় প্রকল্পের ১০% কাজ ছোট কোম্পানির জন্য সংরক্ষণ: ২৫ কোটি টাকার ওপরে যেকোনো প্রকল্পের ক্ষেত্রে অন্তত ১০% কাজ ছোট কোম্পানিকে আউটসোর্সিং করতে বাধ্য করা।
🔹 বড় কোম্পানিগুলোকে আন্তর্জাতিক বাজারে উৎসাহিত করা: সফটওয়্যার রপ্তানি বাড়ানোর জন্য সরকার পররাষ্ট্র ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বড় কোম্পানিগুলোকে বৈদেশিক বাজারে কাজের সুযোগ করে দিতে পারে।
ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা
সঠিক নীতিমালা গ্রহণ করা গেলে আগামী ৫-৬ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ সফটওয়্যার রপ্তানির ক্ষেত্রে একটি শক্তিশালী অবস্থানে পৌঁছাবে। তরুণদের জন্য ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে, নতুন উদ্যোক্তা তৈরি হবে এবং স্থানীয় সফটওয়্যার শিল্প আরও সমৃদ্ধ হবে।
উপসংহার :
আইসিটি সেক্টরের টেকসই উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন সুসংগঠিত নীতি ও কাঠামোগত সংস্কার। সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে এবং সরকারের কাছে কার্যকর সুপারিশ উত্থাপন করতে হবে, যাতে বাংলাদেশ দ্রুততম সময়ের মধ্যে একটি প্রযুক্তি-সমৃদ্ধ জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারে।
“ডিজিটাল বাংলাদেশ” থেকে “সফটওয়্যার এক্সপোর্ট হাব”—আমাদের পরবর্তী গন্তব্য। আসুন, আমরা একসঙ্গে কাজ করি এবং দেশীয় সফটওয়্যার ইন্ডাস্ট্রির সুরক্ষা নিশ্চিত করি।
ধন্যবাদ!


আপনার মতামত লিখুন :
এই বিভাগের আরও