জাহিদ বাবু, শ্রীপুর: ঢাকার উত্তরা থেকে টঙ্গী কলেজ গেইট পর্যন্ত প্রায় সাড়ে চার কিলোমিটার পথে রয়েছে উড়াল সড়ক। এরমধ্যে একটি লুপ টঙ্গী স্টেশন রোড অপরটি চেরাগআলী এলাকায় নেমেছে। রাজধানীর বিমানবন্দর থেকে গাজীপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত বিআরটি সড়ক দিয়ে যাত্রীবাহী বাসসহ বিভিন্ন পরিবহন চলাচল করে। বিআরটি সড়ক দিয়ে ট্রাক, কাভার্ডভ্যানসহ ভারী যানবাহন চলাচল নিষেধ থাকলেও তা না মেনে দেদারসে চলছে এসব পরিবহন। তবে মাঝে মধ্যে টঙ্গী ও বড়বাড়ি এলাকায় এসব পরিবহনকে বিআরটি রোড থেকে বের করে দিতে দেখা যায় পুলিশকে। রাস্তার কারণে গাজীপুরের আলোচিত টঙ্গী থেকে চৌরাস্তা পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার সড়কে যানজটে কোনো শঙ্কা নেই। তবে বিআরটি প্রকল্পের কারণে বিভিন্ন স্থান সংকুচিত হওয়ায় যানজট সৃষ্টি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ঈদে যাত্রীদের ঘরে ফেরার জন্য বিশেষ কিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে গাজীপুর মেট্রোপলিটন ট্রাফিক বিভাগ।
যাত্রীদের সড়ক পারাপারের জন্য বিআরটির নির্মাণাধীন ওভার ব্রিজগুলোর একটিও চালু হয়নি। ফলে বিপুল সংখ্যক মানুষ যেখান সেখান দিয়ে রাস্তা পারাপার হন। এতে যেমন ঘটে দুর্ঘটনা, তেমনি যানবাহনের গতি কমে সৃষ্টি হয় যানজটের। পবিত্র ঈদুল ফিতরের ছুটিতে ঘরমুখো মানুষকে গাজীপুর পার করাই বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে পুলিশ। প্রতিবছর শিল্প সমৃদ্ধ এই জেলা থেকে লাখ লাখ মানুষ ঈদের ছুটিতে গাজীপুর ত্যাগ করে। এসব মানুষের বেশিরভাগই বাসে করে গন্তব্যে যায়। ঘরমুখো যাত্রীদের গন্তব্যে পৌঁছে দিতে হিমশিম খেতে হয় পুলিশ ও প্রশাসনকে।
বিআরটি সড়কে কোনো যানবাহন বিকল হয়ে পড়লে বিপত্তির আর শেষ থাকে না। কারণ বিআরটি সড়কে কোনো যানবাহন প্রবেশ করলে সেটিকে ডান বা বাম দিকে কোনো সড়কেই বের করার কোনো সুযোগ নেই। অথবা বিকল গাড়িটিকে পাশ কাটিয়ে আসার মতো কোনো জায়গাও নেই। আর রেকার দিয়ে ওই বিকল পরিবহনটিকে সরানোরও কোনো ব্যবস্থা নেই। এতে ওই সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।
এ উড়াল সড়ক হয়েই ঢাকা থেকে সমস্ত যানবাহন টঙ্গী গাজীপুর হয়ে দেশের উত্তরাঞ্চলের প্রায় ৩৭টি জেলায় চলাচল করে। ঈদের ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার জন্য প্রায় একই সময়ে যাত্রীরা বাসা থেকে বের হন। আর অগণিত যানবাহন ও যাত্রীদের চাপে সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এছাড়া দেখা দেয় পরিবহন সংকট। ফলে যাত্রীরা ট্রাক, পিকআপসহ অন্যান্য বিকল্প যানবাহনে করে ঝুঁকি নিয়ে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা দেন।
এছাড়া এবারের ঈদে ঘরমুখো মানুষের জন্য গাজীপুরের কালিয়াকৈরে চন্দ্রা ত্রিমোড় একটি টার্নিং পয়েন্ট। প্রতিবছর চন্দ্রাতে ঈদে ঘরমুখো লাখ লাখ মানুষের ভিড় জমে থাকে গন্তব্যে যাওয়ার জন্য। এতে জনজট ও যানজটের কারণে ওই এলাকায় যাত্রীদের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়। তবে প্রতি বছরের মতো এবারো জেলা পুলিশ ও হাইওয়ে পুলিশ যানজট নিরসনে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে।
গাজীপুর জেলা পুলিশ সুপার ড. চৌধুরী মো. যাবের সাদেক জানিয়েছেন, ঈদে ঘরমুখো যাত্রীরা যেন স্বাচ্ছন্দ্যে গন্তব্যে যেতে পারেন সেজন্য জেলা পুলিশ বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। বিশেষ করে গণপরিবহনগুলোকে শৃঙ্খলার মধ্যে আনা হবে। যাত্রী নেওয়ার পর রাস্তায় কোনো যানবাহনকে থামতে দেওয়া হবে না। যত দ্রুত সম্ভব যাত্রী ও গণপরিবহনগুলোকে গাজীপুর পার করে দেওয়া হবে।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) এসএম আশরাফুল আলম গণমাধ্যমকে বলেন, ঢাকা থেকে যেসব যাত্রীবাহী পরিবহন গাজীপুর হয়ে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে যাবে সেসব যানবাহনগুলোকে দ্রুত গাজীপুর পার করে দেওয়া হবে। আর সেজন্য দুটি বিআরটি লেন এবং একটি সড়ক লেন ব্যবহার করা হবে। যাতে বেশি সংখ্যক পরিবহন গাজীপুর থেকে বের হতে পারে। এছাড়া ঈদের পর যাত্রীরা যখন কর্মস্থলে ফিরবে তখনও তিন লেন ব্যবহার করে যানবাহনগুলোকে ঢাকায় প্রবেশ করানো হবে। তিনি বলেন, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় ট্রাফিক পুলিশকে সহায়তা করার জন্য বেশ কিছু সংখ্যক ট্রাফিক ভলানটিয়ার নিয়োগ করা হবে। তারা যানজট নিরসনে সড়কের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে কাজ করবে। তিনি আরও জানান, এবার আশুলিয়া সড়কে অনেকটা খানাখন্দ থাকায় অনেক পরিবহন গাজীপুরের ওপর দিয়ে যাবে। এতে এ সড়কে গতবারের চেয়ে যানবাহনের চাপ বেশি পড়বে। ঈদের আগে মহাসড়ক থেকে অবৈধ দোকান পাট ও থ্রি-হুইলার উচ্ছেদ করা হবে।