আজ
|| ৮ই এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ || ২৫শে চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ || ৯ই শাওয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
এক বছরে বিশ্বের শীর্ষ ১০ অতিধনীর কার সম্পদ বাড়ল, কার কমল
প্রকাশের তারিখঃ ৭ এপ্রিল, ২০২৫
প্রভাত অর্থনীতি : বিশ্বে ধনীদের ধনসম্পদের পরিমাণ বেড়েই চলেছে। বদৌলতে প্রতিবছর বিলিয়নিয়ার বা শতকোটিপতির সংখ্যা বাড়ছে। সেটিই প্রতিফলিত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বখ্যাত ফোর্বস সাময়িকীর সদ্য প্রকাশিত বৈশ্বিক বিলিয়নিয়ার লিস্ট বা অতিধনীদের নিয়ে তৈরি করা তালিকায়। ফোর্বস–এর এবারের তালিকায় রেকর্ড ৩ হাজার ২৮ জন অতিধনীর নাম স্থান পেয়েছে। অতিধনীর এই সংখ্যা গত বছরের চেয়ে ২৪৭ জন বেশি। তাতে প্রথমবারের মতো বিশ্বে বিলিয়নিয়ার বা শতকোটিপতির সংখ্যা ৩ হাজার ছাড়িয়েছে।
গত ৭ মার্চ পর্যন্ত বিশ্বের যেসব অতিধনীর সম্পদের পরিমাণ কমপক্ষে ১ বিলিয়ন বা ১০০ কোটি মার্কিন ডলার বা তার চেয়ে বেশি ছিল, তাঁদের নামই ফোর্বস–এর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এখানে শীর্ষ ১০ অতিধনীর সম্পদের হিসাব তুলে ধরা হয়েছে।
১. ইলন মাস্ক: বিশ্বের নাম্বার ওয়ান বিলিয়নিয়ার বা এক নম্বর অতিধনী ব্যক্তির জায়গাটি যেন নিজের করে নিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ইলন মাস্ক, যিনি সাতটি কোম্পানির সহপ্রতিষ্ঠাতা। কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাতা কোম্পানি টেসলা, রকেট প্রস্তুতকারী স্পেসএক্স ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক স্টার্টআপ এক্সএআই প্রভৃতি। ফোর্বস–এর ২০২৫ সালের শতকোটিপতি তালিকায় ইলন মাস্কের নিট সম্পদের মূল্য উল্লেখ করা হয়েছে ৩৪২ বিলিয়ন বা ৩৪ হাজার ২০০ কোটি মার্কিন ডলার, যা গত বছর ছিল ১৯৫ বিলিয়ন ডলার। এক বছরে তাঁর সম্পদ বেড়েছে প্রায় ১৪৭ বিলিয়ন ডলার।
২. মার্ক জাকারবার্গ: ফোর্বস–এর এবারের তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে আছেন আরেক জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম মেটার সহপ্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ। গত এক বছরে তাঁর সম্পদ বেড়েছে ৩৯ বিলিয়ন ডলার। ২০২৫ সালের তালিকায় তাঁর নিট সম্পদমূল্য উল্লেখ করা হয় ২১৬ বিলিয়ন বা ২১ হাজার ৬০০ কোটি ডলার। গত এক বছরে তাঁর সম্পদ বেড়েছে ৩৯ বিলিয়ন ডলার। মাত্র ১৯ বছর বয়সে ২০০৪ সালে ফেসবুক প্রতিষ্ঠা করেন মার্ক জাকারবার্গ। ২০২১ সালে ফেসবুকের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় মেটা। ২০১৫ সালে জাকারবার্গ এবং তাঁর স্ত্রী প্রিসিলা চ্যান ঘোষণা দেন যে তাঁরা মেটায় থাকা তাঁদের শেয়ারের ৯৯ শতাংশ দান করে দেবেন।
৩. জেফ বেজোস: ই-কমার্স জায়ান্ট অ্যামাজনের সহপ্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোস এবারে ২১৫ বিলিয়ন ডলার নিট সম্পদ নিয়ে ফোর্বস–এর তালিকায় তৃতীয় অবস্থানে রয়েছেন। গত এক বছরে মার্কিন এই ধনকুবেরের সম্পদমূল্য বেড়েছে ২১ বিলিয়ন ডলার। ১৯৯৪ সালে তিনি অ্যামাজন প্রতিষ্ঠা করেন। জেফ বেজোস দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকা এবং ব্লু অরিজিন নামক একটি মহাকাশযান নির্মাতা কোম্পানির মালিক। ২০২২ সালের নভেম্বরে সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বেজোস জানান, তিনি জীবদ্দশায় তাঁর বেশির ভাগ সম্পদ দান করে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছেন। এ ছাড়া বেজোস ২০৩০ সালের মধ্যে জলবায়ুবিষয়ক কর্মকাণ্ডে ১০ বিলিয়ন ডলার অনুদান দেয়ার কথা জানান।
৪. ল্যারি এলিসন: যুক্তরাষ্ট্রের সফটওয়্যার জায়ান্ট ওরাকল করপোরেশনের নির্বাহী চেয়ারম্যান, প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা ও সহপ্রতিষ্ঠাতা ল্যারি এলিসন। এর আগে তিনি ৩৭ বছর কোম্পানির সিইও ছিলেন। প্রতিষ্ঠানটির প্রায় ৪০ শতাংশ মালিকানা তাঁর হাতে। তিনি এখন ১৯২ বিলিয়ন ডলারের সম্পদের মালিক, যা গত বছরের চেয়ে ৫১ বিলিয়ন ডলার বেশি। অনেকগুলো সফটওয়্যার কোম্পানি অধিগ্রহণের মাধ্যমে ক্রমাগতভাবে বড় হয়েছে ওরাকল।
৫. বার্নার্ড আর্নল্ট ও পরিবার: মোট ৭৫টি ফ্যাশন ও কসমেটিকস ব্র্যান্ডের সমন্বয়ে গঠিত এলভিএমএইচ সাম্রাজ্যের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ফরাসি ধনকুবের বার্নার্ড আর্নল্ট। এলভিএমএইচের অধীনে রয়েছে লুই ভুটন, গুচি, ক্রিশ্চিয়ান ডিওর প্রভৃতি বিখ্যাত ব্র্যান্ড। গত বছর ২৩৩ বিলিয়ন ডলারের সম্পদ নিয়ে ফোর্বস–এর বিলিয়নিয়ার তালিকায় তিনি প্রথম স্থান দখল করলেও এবার পঞ্চম স্থানে নেমে গেছেন। গত এক বছরে তাঁর সম্পদ ৫৫ বিলিয়ন ডলার কমে ১৭৮ বিলিয়ন ডলারে নেমেছে।
৬. ওয়ারেন বাফেট: যুক্তরাষ্ট্রের ওয়ারেন বাফেটের সম্পদও গত এক বছরে প্রায় ২১ বিলিয়ন ডলার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫৪ বিলিয়ন ডলার, যা এক বছর আগে ছিল ১৩৩ বিলিয়ন ডলার। ৯৪ বছর বয়সী ওয়ারেন বাফেট বিশ্বে ‘বিনিয়োগ গুরু’ বা সর্বকালের অন্যতম সফল বিনিয়োগকারী হিসেবে বিবেচিত। বাফেটের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের নাম বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ে, যা জাইকো (বিমা কোম্পানি), ডিউরাসেল (ব্যাটারি নির্মাতা) ও ডেইরি কুইনসহ (রেস্তোরাঁ চেইন) অসংখ্য কোম্পানির মালিক। আর বেশ কিছু কোম্পানিতে তাঁর শেয়ার তথা বিনিয়োগ রয়েছে। বাফেট তাঁর সম্পদের ৯৯ শতাংশের বেশি দান করার কথা জানিয়েছেন। সে লক্ষ্যে এখন পর্যন্ত তিনি প্রায় ৬২ বিলিয়ন ডলার দান করেছেন।
৭. ল্যারি পেইজ: মার্কিন প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠান গুগলের সহপ্রতিষ্ঠাতা ল্যারি পেইজের সম্পদমূল্য গত এক বছরে প্রায় ৩০ বিলিয়ন ডলার বেড়ে ১৪৪ বিলিয়ন ডলারে উঠেছে। ১৯৯৮ সালে স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সহপাঠী সের্গেই ব্রিনের সঙ্গে মিলে গুগল প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। এরপর ব্রিনের সঙ্গে মিলে পেইজ গুগলের সার্চ ইঞ্জিন উন্নত করার কাজ করে গেছেন; উদ্ভাবন করেছেন নতুন অ্যালগরিদম।
৮. সের্গেই ব্রিন: ১৩৮ বিলিয়ন ডলারের সম্পদ নিয়ে অষ্টম স্থানে রয়েছেন গুগলের আরেক সহপ্রতিষ্ঠাতা সের্গেই ব্রিন। এক বছরে তিনি ২৮ বিলিয়ন ডলার সম্পদ বাড়িয়েছেন। মার্কিন নাগরিক সের্গেই ব্রিন ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে গুগলের মূল প্রতিষ্ঠান অ্যালফাবেটের প্রেসিডেন্ট পদ থেকে সরে দাঁড়ান। ২০০৪ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয় গুগল।
৯. অ্যামনচিও ওর্তেগা: স্পেনের ধনকুবের অ্যামেচিও ওর্তেগা ফ্যাশন জগতে আরেক পরিচিত নাম। ১৯৭৫ সালে অ্যামেচিও ওর্তেগা ও তাঁর সাবেক স্ত্রী রোজালিয়া মেরা প্রতিষ্ঠা করেন ইনডিটেক্স। আরও সাতটি ব্র্যান্ড রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির অধীনে। গত এক বছরে তাঁর সম্পদ বেড়েছে প্রায় ২১ বিলিয়ন ডলার। বদৌলতে ২০২৫ সালে তাঁর নিট সম্পদমূল্য দাঁড়িয়েছে ১২৪ বিলিয়ন ডলার।
১০. স্টিভ বলমার: মাইক্রোসফটের সাবেক প্রধান নির্বাহী (সিইও) স্টিভ বালমার গত এক বছরে প্রায় তিন বিলিয়ন ডলারের সম্পদ হারিয়েছেন। তারপরও তিনি বর্তমান বিশ্বের দশম শীর্ষ ধনী। বর্তমানে তিনি প্রায় ১১৮ বিলিয়ন ডলার সম্পদের মালিক। মার্কিন নাগরিক স্টিভ বলমার ১৯৮০ সালে স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এমবিএ প্রোগ্রাম ছেড়ে মাইক্রোসফটে যোগ দেন। ২০০০ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত মাইক্রোসফটে সিইও ছিলেন।
Copyright © 2025 প্রভাত. All rights reserved.