আজ
|| ২০শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ || ৭ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ || ২১শে শাওয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
দেশে মোবাইল ফোন কীভাবে আসলো, বর্ণনা করলেন ড. ইউনূস
প্রকাশের তারিখঃ ৯ এপ্রিল, ২০২৫
প্রভাত রিপোর্ট: প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বিনিয়োগ সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেশে টেলিকম শিল্প চালুর গল্প শুনিয়েছেন। গ্রামীণ ব্যাংক থেকে গ্রামীণফোনের আবির্ভাব কীভাবে হলো, তা বর্ণনা করেন তিনি। বুধবার (৯ এপ্রিল) রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে এই আয়োজন করা হয়। প্রধান উপদেষ্টা তার বক্তব্যে ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষের বিবরণ তুলে ধরে বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনি যে দেশেই বসবাস করেন না কেন, আপনার ভেতর ছোট একটি ১৯৭৪ বসবাস করে। আপনারা সেটা (অভাব) দেখতে চান না, লুকিয়ে রাখেন মানুষকে অর্থ সহায়তা দেওয়ার মাধ্যমে। আমি সবসময় বলে আসছি, জনগণের অর্থ গরীব মানুষকে দেওয়ার মধ্যে কোনও সমাধান নেই। সমাধান আছে অবকাঠামো তৈরির মাধ্যমে, মানুষের শক্তিকে বের করে নিয়ে আসার মধ্যে। ক্ষুদ্র ঋণ একটি সামান্য উদ্যোগ। একটা উন্মত্ত পরিকল্পনা তৈরি করা হলো সরকারের টেলিফোনের লাইসেন্স ইস্যু করার মাধ্যমে। আমাদের টেলিফোনের প্রয়োজন ছিল না। বেশিরভাগই কাজ করে না। টেলিফোন কোম্পানির জন্য লাইসেন্স লাগবে কেন তাহলে? সরকার জিজ্ঞেস করে টেলিফোন কোম্পানি দিয়ে কী করবেন। আমি বললাম যে গরীব নারীদেরকে দিবো। আমরা লাইসেন্স পেলাম। গ্রামীণ ব্যাংকের পর গ্রামীণফোন প্রতিষ্ঠিত হলো।’
ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘আমাদের জ্ঞান না থাকায় কেউ অংশীদার হতে চাইতো না। কারণ বাংলাদেশে মোবাইল ফোনের কোনও জায়গা ছিল না, কোনও বাজার ছিল না। তাই আমরা অনেক আন্তর্জাতিক দুয়ারে ঠকঠক করলাম। কেউ সাড়া দিল না। অবশেষে আমি ব্যক্তিগতভাবে নরওয়ের একজনকে চিনতাম যিনি টেলিনরের চেয়ারম্যান ছিলেন। আমি তাকে বোঝালাম এবং সাহায্য চাইলাম। আমি বোঝালাম যে কেন বাজারে মোবাইল ফোন আনতে চাই এবং নারীদের দিতে চাই। উনি গুরুত্ব সহকারে নিলেন কিন্তু তার কোম্পানির বোর্ড তার সঙ্গে রাজি হলো না। তারা বাংলাদেশকে কোনোভাবেই চিনতে পারলো না, নাম কখন শুনেনি নাকি। যতবারই টেলিনরের বোর্ড প্রত্যাখ্যান করে তিনি বারবার সেটা নিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করেন। অবশেষে তিনি রাজি করাতে পারেন। তখনকার সমীক্ষা বলে, ২ লাখ মোবাইল গ্রাহক পাওয়া যাবে। আমি বললাম— কী বলেন! এর চেয়ে ১০ গুণ পাওয়া যাবে। এটি এখন দেশের সবচেয়ে বড় মোবাইল ফোন কোম্পানি।’
শুরুর দিকে শুধু গ্রামীণ ব্যাংকের গরীব নারীরা ফোন নিতে পারতো উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘ফোন কীভাবে ব্যবহার করতে হয় তারা জানতো না। আমরা প্রশিক্ষণ দিলাম। শিগগিরই লাখ খানেক নারী সারা দেশে ফোন সেবা দেওয়া শুরু করলো। এটি এতটাই জনপ্রিয় হলো যে সবাই ফোন নেওয়া শুরু করলো। পুরো কোম্পানির সার্বিক চিত্র পাল্টে দিলো। ঠিক তখন অন্যান্য দেশে মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলো ব্যবসা সম্প্রসারণ শুরু করলো, তাদের ফোকাস ছিল শহরগুলো। সংবাদপত্রে আমাদের খবর তুলে ধরা হলো, তাদের না। তখন থেকেই বিশ্ব জানল গ্রামে কীভাবে মোবাইল ফোন গেলো। টেলিফোন শিল্প বৈশ্বিকভাবে পাল্টে গেলো। এগুলো বলার কারণ হচ্ছে— পৃথিবীকে বদলাতে উন্মত্ত বুদ্ধিতে বাংলাদেশ ভরপুর।’
Copyright © 2025 প্রভাত. All rights reserved.