আজ
|| ১৬ই এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ || ৩রা বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ || ১৭ই শাওয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
জাতীয় প্রেস ক্লাবে অবিলম্বে নির্বাচন দাবি জাতীয়তাবাদী সাংবাদিক ফোরামের
প্রকাশের তারিখঃ ১৫ এপ্রিল, ২০২৫
প্রভাত রিপোর্ট : জাতীয়তাবাদী সাংবাদিক ফোরামের চেয়ারম্যান আবু সালেহ ও মহাসচিব জাহাঙ্গীর আলম প্রধান আজ মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) এক যুক্ত বিবৃতিতে গণহত্যা মামলায় অভিযুক্ত জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আইয়ুব ভূঁইয়াসহ ব্যবস্থাপনা কমিটির সকল কর্মকর্তা ও সদস্যের পদত্যাগ দাবি করেছেন। একই সঙ্গে অবিলম্বে নতুন ব্যবস্থাপনা কমিটির নির্বাচন দাবি করেছেন।
বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, গঠনতন্ত্র অনুযায়ী গত ডিসেম্বরে বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। দেশে সামরিক শাসন বা জরুরি অবস্থা না থাকা সত্ত্বেও ডিসেম্বরে দ্বি-বার্ষিক সাধারণ সভার আগেই বিশেষ সাধারণ সভা ডেকে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির দোহাই দিয়ে জামায়াত সমর্থকদের পেশিশক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে কমিটির মেয়াদ আরো এক বছর বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। অথচ সাংবাদিকদের অন্যান্য প্রতিষ্ঠান যেমন- ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি, ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন, ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের নির্বাচন গত বছরের শেষে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী অনুষ্ঠিত হয়। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাচনও সরাসরি ভোটের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
নেতৃদ্বয় উল্লেখ করেন, বর্তমান ব্যবস্থাপনা কমিটি অবৈধ হয়ে পড়েছে। এর আগে জুলাই বিপ্লবের পর জনৈক ছাত্র সমন্বয়ককে ক্লাবে ডেকে এনে বিপ্লবের চেতনার পরিপন্থী আওয়ামী লীগ সমর্থকদের একটি তালিকা সই করানো হয়। এতে মূল ভূমিকা পালন করে জাতীয় প্রেস ক্লাব ও সাংবাদিক ইউনিয়নের জামায়াতপন্থী কতিপয় সদস্য। এরা সাংবাদিক ইউনিয়ন অফিসে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটায়। ওই তালিকা অনুযায়ী এবং তালিকা বহির্ভূত বেশ কয়েকজনের সদস্যপদ বাতিল করা হয়। এ ক্ষেত্রে আওয়ামী সমর্থক সাংবাদিক নেতাদের কয়েকজনের সদস্যপদ আবার বহাল রাখা হয়! গঠনতন্ত্রের ক্রমাগত লঙ্ঘনের মধ্যদিয়ে ইচ্ছামাফিক উদ্দেশ্যমূলকভাবে সদস্যপদ বাতিল বা স্থগিত করা এই কমিটির নিত্যকর্ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। যে কারণে সকল মত-পথের সম্মিলন কেন্দ্র হিসেবে খ্যাত প্রেস ক্লাবে আজ ভূতুড়ে পরিবেশ বিরাজ করছে। জাতীয় প্রেস ক্লাবে দুদকের মামলার আসামিদের পৃষ্ঠপোষকতায় অনুষ্ঠান করার মহাযজ্ঞ চলছে।
যে বিশেষ সাধারণ সভায় কমিটির মেয়াদ বাড়ানো হয়, তাতে জাতীয়তাবাদী সাংবাদিক ফোরামের কয়েকজন সিনিয়র কর্মকর্তা ভিন্নমত প্রকাশের জন্য দাঁড়ালে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী নজিরবিহীনভাবে তাদের উপর আক্রমণ করা হয়। তাদের বক্তব্য রাখার সুযোগ দেওয়া হয়নি। আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগও দেওয়া হয়নি। উল্টো তারা বিষোদগারের মধ্যে পড়েন। পরে তাদের সদস্যপদ বাতিল করা হয়। যে বাতিল সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য। মিথ্যা অভিযোগগুলোর একটি ছিল বিএনপি মহাসচিব মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে জাতীয় প্রেস ক্লাবে অসহযোগিতার কারণ, যা সম্পূর্ণ মিথ্যা। যা জানতে পেরে বিএনপি মহাসচিব ক্লাব সভাপতিকে চিঠি দিয়ে জানান যে, যাদেরকে ওই ঘটনার জন্য দায়ী করা হয়েছে, তারা তাঁকে সহযোগিতা করেছেন। কিন্তু তাতেও ব্যবস্থাপনা কমিটির বোধোদয় হয়নি। যা হোক, এক্ষণে জাতীয় ক্লাবের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক, যিনি ফেনী কলেজে পড়াকালে একসময় ছাত্র শিবির করতেন এবং আওয়ামী সাংবাদিক ফোরামে যোগ দিয়ে প্রেস ক্লাবের নির্বাচন করেন, যার বিরুদ্ধে সম্প্রতি জুলাই গণহত্যার সঙ্গে জড়িত থাকায় একটি মামলা রুজু হয়। ফলে আইয়ুব ভূঁইয়ার আর জাতীয় প্রেস ক্লাবের কর্মকর্তা বা সদস্য থাকার অধিকার নেই। উপযুক্ত দৃষ্টান্ত অনুযায়ী জাতীয়তাবাদী সাংবাদিক ফোরাম মনে করে একই সঙ্গে ক্লাবের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হাসান হাফিজ এবং সদস্য কাদের গনি চৌধুরীর সদস্যপদ থাকাও বাঞ্ছনীয় নয়। কেননা তারা স্বৈরাচারের আত্মস্বীকৃত সহযোদ্ধা কুখ্যাত শাহ আলমের মালিকানাধীন বসুন্ধরা গ্রুপের ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়াতে জুলাই বিপ্লবের পর যোগ দেন। অথচ এই বিপ্লবের অন্যতম নায়ক শহীদ আবু সাঈদের ভাইকে বসুন্ধরা গ্রুপ চাকরি দিতে চাইলে তিনি তা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেন। অথচ হাসান হাফিজ ও কাদের গনি চৌধুরীর নৈতিকতা ছিল বিপথগামী। কিন্তু কমিটি বিএনপি মহাসচিবের চিঠিকে আমলে নেয়নি।
নেতৃবৃন্দ আরো জানান, সম্প্রতি ক্লাবের নতুন সদস্য বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার প্রধান সম্পাদক মাহবুব মোরশেদের সদস্যপদ বাতিল করা হয়েছে। কারণ দেখানো হয় যে, তিনি ইউনিয়নবিরোধী ভূমিকা পালন করছেন। সাংবাদিক ইউনিয়নের জামায়াতপন্থীরা তার বিরুদ্ধে সক্রিয়। অন্যদিকে ব্যবস্থাপনা কমিটি অনির্বাচিত সদস্য দুই নেত্রী সম্পর্কে কটূক্তিমূলক কবিতার উল্লেখ করে ফেসবুকে দেওয়া পোস্টের কারণে বাসসের এমডির মোশেদের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করেছেন। এর পর পরই মাহবুব মোরশেদের সদস্যপদ বাতিল করা হয়। অন্যদিকে এই মামলার আসামি করা হয়েছে জাতীয়তাবাদী সাংবাদিক ফোরামের অন্যতম কর্মকর্তা সিনিয়র ফটোসাংবাদিক আসাদুজ্জামান আসাদকে। তাকে আওয়ামী লীগের অর্থ যোগানদাতা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে! অথচ জনাব আসাদ বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী একজন নিবেদিত নেতা। আমরা এহেন মিথ্যা মামলার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং রাজনৈতিক ভোল পাল্টানোর ইতিহাস উন্মোচনের দাবি জানাচ্ছি। জেনারেল এরশাদ, জামায়াত সংশ্লিষ্ট ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন, যা তদানীন্তন ফ্যাসিবাদী বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন কর্তৃক জেনারেল মঈনের ঘনিষ্ঠ এই ব্যক্তি আওয়ামী শাসনামলে প্রয়োজনীয় যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও অনুমোদনপ্রাপ্ত হয়।
বিবৃতিতে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতির শূন্যপদে অবিলম্বে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি জানিয়ে বলা হয়, ইউনিয়নের জামায়াতপন্থীরা ভারপ্রাপ্ত সভাপতি দিয়ে কাজ চালিয়ে যাওয়ার পাঁয়তারা করছে।
Copyright © 2025 প্রভাত. All rights reserved.