প্রভাত সংবাদদাতা, ধোবাউড়া: ময়মনসিংহের সীমান্তবর্তী উপজেলা ধোবাউড়া। এই উপজেলা ভারতের মেঘালয় রাজ্যের সীমান্তঘেঁষা। বর্ষা মৌসুমে পাহাড় থেকে ঝর্ণার পানি নিচে নামে। সেই পানিই ভরসা ধোবাউড়ার ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীসহ স্থানীয়দের। পাহাড়ি ছড়ায় বালু সরিয়ে গর্ত করে পানি সংগ্রহ করেন তারা। এই পানির সংকট দেখা দিলে সংগ্রহ করা হয় পুকুরের পানি। উপজেলার দক্ষিণ মাইজপাড়া ও ঘোষগাঁও ইউনিয়নের অন্তত ৮টি গ্রামের মানুষ বিশুদ্ধ পানির সংকটে পড়েছেন। ফলে পুকুর ও ছড়ার পানিই তাদের জীবনধারণের একমাত্র ভরসা হয়ে উঠেছে। তবে এই পানি পান করে পেটের পীড়া, চর্মরোগসহ নানা ধরনের রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন তারা। এমন ভোগান্তির সমাধান চেয়ে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন ভুক্তভোগীরা।
স্থানীয়রা জানান, উপজেলার দক্ষিণ মাইজপাড়া ইউনিয়নের গিলগড়া, কাশিপুর, বাকপাড়া, শানখলা, পঞ্চনন্দপুর গ্রাম ও ঘোষগাঁও ইউনিয়নের গোলইভাংগা, চন্দকোনাসহ আরও কয়েকটি এলাকা পাহাড়ি অঞ্চল। এসব গ্রামের গুটিকয়েক মানুষ বেশি টাকা ব্যয় করে সাবমারসিবল পাম্প বসালেও বেশিরভাগ মানুষ অর্থাভাবে তা পারছে না। ফলে ভাগ্যে জুটছে না বিশুদ্ধ পানি।
স্থানীয় মতিন মিয়া গণমাধ্যমকে বলেন, পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় নলকূপ স্থাপন করা খুব কঠিন। কারণ নিচে পাথরে আটকে যায় পাইপ। তারওপর বেশিরভাগ মানুষ আর্থিকভাবে অসচ্ছল। ফলে খরচ অনেক বেশি হওয়ার কারণে নলকূপ সবাই স্থাপন করতে পারে না। সরকারিভাবেও নলকূপ স্থাপন করে সহায়তা না করায় মানুষ খুব ভোগান্তিতে পড়েছে। বাধ্য হয়ে বর্ষাকালে বৃষ্টির পানি আর শুকনো মৌসুমে পুকুর ও পাহাড়ি ছড়ার পানি পান করতে হয়। দক্ষিণ মাইজপাড়া ইউনিয়নের গিলাগড়া এলাকার বাসিন্দা আমেনা খাতুন। তিনি নিয়মিত পাহাড়ি ছড়ায় বালু সরিয়ে গর্ত করে পানি সংগ্রহসহ পুকুর থেকে পানি সংগ্রহ করেন।
আমেনা খাতুন বলেন, ‘কতো নেতা-ফেতা আর সরকারি লোকরে টিউবওয়েলের ব্যবস্থা কইরা দিবার কইলাম। কিন্তু হগলেই (সবাই) আশ্বাস ছাড়া কাজের কাজ কইরা দিছে না। ভালা পানি না পাইয়া এইতা বাজে পানি দিয়াই রান্নাবান্নার কাজসহ খাইতাছি। ভালা পানি না পাইয়া অনেক কষ্ট করন লাগতাছে। আমরার কাছে বিশুদ্ধ পানি পাওয়া পানি সোনার হরিণ। জেসমিন বেগম নামের আরেকজন বলেন, ‘আমরা ছড়ার পানি খাই। কলসে কইরা পানি বাড়িত নিয়া কিছুক্ষণ রাইখা দিলে ময়লা নিচে জমে থাকে। তহন খাই। এই পানি খাইয়্যা মাঝেমধ্যেই পেট ব্যথা করে। অনেকের বিভিন্ন রোগ অইতাছে। বাড়িতে নলকূপ স্থাপন কইরা দিলে খুব ভালা অইতো।’
ইতি চিসিম নামে এক আদিবাসী নারী বলেন, ‘জানি এসব পানি খাওয়া ঠিক না। কী আর করার, তৃষ্ণাতো মিটাতে অইবো। তাই খাইতাছি। বহু মানুষ বিশুদ্ধ পানির জন্য হাহাকার করতাছে। সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’
গভীর নলকূপের ব্যবস্থা করার আশ্বাস দিয়ে দক্ষিণ মাইজপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির বলেন, সীমান্ত এলাকায় পাইপ অনেক গভীর পর্যন্ত স্থাপন করতে হয়। এতে খরচও বেড়ে যায়। অনেক সময় পাইপ পাথরে পড়ে যায়। গত তিন বছরে সীমান্ত এলাকায় ১০টি গভীর নলকূপের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আরও ব্যবস্থা করা হবে। স্থানীয় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় অনেক এলাকায় নলকূপের পাইপ মাটির গভীরে পানির স্তর পর্যন্ত নেওয়া সম্ভব হয় না। ৫০ থেকে ৬০ মিটার গভীরে গেলেই পাইপ পাথরে আটকে যায়। যারা নিজ উদ্যোগে অগভীর নলকূপ বসিয়েছেন, তাদের নলকূপেও শুষ্ক মৌসুমে পানি থাকে না।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর ধোবাউড়া উপজেলার প্রকৌশলী শফিউল আজম বলেন, আমরাও চাই সবাই বিশুদ্ধ পানি পাক। বিশুদ্ধ পানি রান্নাবান্নার কাজে ব্যবহারসহ খেতে পারুক। কিন্তু সীমান্তবর্তী এই উপজেলার কিছু এলাকায় নলকূপ বসানো সম্ভব হয় না। ফলে পানির জন্য তাদের কষ্ট করতে হচ্ছে। কষ্ট লাঘব করতে এরইমধ্যে সীমান্ত এলাকায় দুটি নলকূপ দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
ধোবাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিশাত শারমিন বলেন, পাহাড়ি এলাকায় পানি সংকট নিরসনে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের চেষ্টা করা হচ্ছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। সুপেয় পানির ব্যবস্থা করতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।