আজ
|| ১লা জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ || ১৭ই আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ || ৫ই মহর্রম, ১৪৪৭ হিজরি
শেরপুরে খুনের আসামি হলেই লুটের সংস্কৃতি
প্রকাশের তারিখঃ ১৬ এপ্রিল, ২০২৫
মো. নমশের আলম, শেরপুর : মার্ডার মামলার আসামি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ঘরবাড়ি লুটপাট—শেরপুরে যেন এটি এখন একটি সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের ঘটনার পরপরই অভিযোগ উঠছে আসামিদের বাড়ি, দোকানপাট, এমনকি আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতেও প্রকাশ্য লুটপাট ও ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর। স্থানীয় প্রশাসন এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিচ্ছে দাবি করলেও ঘটনাগুলোর পুনরাবৃত্তি থামছে না।
২০২৪ সালের আগস্ট থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময়ে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ঘটে গেছে ৩৫টি হত্যাকাণ্ড, ৫২টি ধর্ষণ এবং ২৭টি অপহরণের ঘটনা। এর মধ্যে অধিকাংশ হত্যাকাণ্ডের পরই আসামিদের বাড়িঘরে ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চালানো হয়েছে ভয়াবহ হামলা ও লুটপাট। সর্বশেষ চিত্র পাওয়া গেছে সদর উপজেলার চরমোচারিয়া ইউনিয়নের হরিনধরা গ্রামে।
গত ২২ ফেব্রুয়ারি একটি স্কুলের ম্যানেজিং কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের সংঘর্ষে বল্লমের আঘাতে নিহত হন এক ব্যক্তি। ঘটনার পরপরই উশৃঙ্খল গ্রামবাসী হামলা চালিয়ে হরিনধরা পশ্চিমপাড়া গ্রামের শতাধিক বাড়িতে লুটপাট করে। দিনের আলোয় প্রকাশ্যে চালানো হয় ধ্বংসযজ্ঞ—বাড়ির আসবাবপত্র, ধান-চাল, গবাদিপশু এমনকি বৈদ্যুতিক তার ও মিটার পর্যন্ত খুলে নিয়ে যায় হামলাকারীরা। অনেক বাড়ির দেয়াল ভেঙে ইট, চালের টিন, দরজা জানালা খুলে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
ওই গ্রামের ভুক্তভোগী হাতেম আলী জানান, আমার পাঁচটি ঘর লুট করে নিয়েছে। ঘরের দেয়াল পর্যন্ত ভেঙে ইট নিয়ে গেছে। আমার দোকানপাটও রেহাই পায়নি। শুধু মামলার আসামিই নয়, অনেক নিরপরাধ মানুষের বাড়িও লুটে নিয়েছে।
আরেক বাসিন্দা সুফিয়া বেগম বলেন, প্রায় দুইশত ঘরে লুট হয়েছে। গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি, সেচ পাম্প, ধান চাল, এমনকি বিদ্যুতের মিটারও খুলে নিয়ে গেছে। খুন হলে বিচার হবে আদালতে, কিন্তু লুটপাটের বিচার কে করবে? এই পরিস্থিতির প্রতিবাদে হরিনধরা গ্রামের শতাধিক মানুষ সম্প্রতি মানববন্ধন করেছে। তারা বলছেন, খুনের বিচার যেমন দরকার, তেমনি লুটপাটকারীদেরও আইনের আওতায় আনা জরুরি।
শেরপুর মডেল গার্লস কলেজের প্রভাষক মাসুদ হাসান বাদল বলেন, “সম্প্রতি আইনের প্রতি সাধারণ মানুষের ভীতির জায়গা কমে গেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপর না হলে এমন ঘটনা আরও বাড়বে।”
জেলা জজ কোর্টের পিপি অ্যাডভোকেট আব্দুল মান্নান বলেন, যে খুন করে সে যেমন অপরাধী, তেমনি যারা খুনের পর লুটপাট করে তারাও অপরাধী। দু’টি পক্ষেরই বিচার হওয়া উচিত।
এ বিষয়ে শেরপুর জেলা পুলিশ সুপার মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, আমি একটি বিষয় লক্ষ্য করছি, শেরপুরে খুনের পর প্রতিপক্ষের অনুপস্থিতির সুযোগ নিয়ে তৃতীয় একটি পক্ষ লুটপাটে জড়ায়। আমরা যেসব অভিযোগ পেয়েছি সেগুলোর ব্যবস্থা নিচ্ছি। অভিযোগের তদন্ত তদন্ত শেষে জড়িতদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয়া হয়েছে। আইন সবার জন্য সমান, লুটপাটকারীরও বিচার হবে।
শেরপুরে বিচারিক প্রক্রিয়ার আগেই ঘরবাড়ি লুট করে নেয়ার এই প্রবণতা এখন ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে বলে আশঙ্কা করছেন সচেতন মহল। তারা বলছেন, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা না হলে এমন নৈরাজ্য রোধ করা সম্ভব নয়।
Copyright © 2025 প্রভাত. All rights reserved.