আজ
|| ১৯শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ || ৬ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ || ২০শে শাওয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
দিনাজপুরে পেঁয়াজের দাম কেজিতে বেড়েছে ২০ টাকা
প্রকাশের তারিখঃ ১৭ এপ্রিল, ২০২৫
প্রভাত সংবাদদাতা, দিনাজপুর: গত সপ্তাহের বুধবার ৩৫ টাকা কেজি দরে দেশি পেঁয়াজ কিনেছেন হিলির ভ্যানচালক আশরাফুল ইসলাম। চলতি সপ্তাহের বুধবার একই পেঁয়াজ ৫৫ টাকা কেজি দরে কিনেছেন। মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম ২০ টাকা বাড়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আশরাফুল। তিনি বলেন, ‘রোজার ঈদের পর থেকে জিনিসপত্রের দাম বাড়তেছিল। এই সপ্তাহে চাল-ডাল, তেল, সবজি, পেঁয়াজ, মাছ ও মুরগিসহ নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে গেছে। এভাবে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছি আমরা।’
চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কমের অজুহাতে এক সপ্তাহের ব্যবধানে হিলিতে দেশি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজিতে ২০ টাকা। হঠাৎ দাম বাড়ায় বিপাকে পড়েছেন নিম্নআয়ের মানুষজন। সরবরাহ এমন থাকলে দাম কমার সম্ভাবনা নেই। তবে ভারত থেকে আমদানি শুরু হলে দাম কমতে পারে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
হিলি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারের প্রতিটি দোকানে দেশি পেঁয়াজের ভালো সরবরাহ দেখা গেছে। এরপরও দাম বেশি। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, গত সপ্তাহে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ প্রকারভেদে ৩০-৩৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও বুধবার ৫০-৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ভ্যানচালক আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘বুধবার ৫৫ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ কিনেছি। সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ২০ টাকা বেড়েছে। অন্যান্য নিত্যপণ্যের দামও বেড়েছে। এতো দাম বাড়লে আমরা গরিব মানুষ কীভাবে খাবো, সংসার চালাবো? সারাদিন ভ্যান চালিয়ে ৩০০-৪০০ টাকা পাই। বাজার করতে আসলে যে দাম, তাতে একটা কিনলে আরেকটা কেনার টাকা থাকে না। আমরা দিনে এনে দিনে খাওয়া মানুষ। দাম কম থাকলে আমাদের জন্য ভালো হয়। দাম বাড়লে অনেক কিছু কিনতে পারি না।’
একই বাজারে পেঁয়াজ কিনতে আসা নাজমা বেগম বলেন, ‘গত রবিবারও পেঁয়াজ কিনলাম ৩০ টাকায়। বুধবার কিনতে এসে দেখি ভালোটা ৫৫ আর একটু নিম্নমানেরটার কেজি ৫০ টাকা হয়ে গেছে। আমরা গরিব মানুষ। এতো দাম দিয়ে কেনার সামর্থ্য থাকে না। দাম ৩০-৩৫ টাকা থাকলে আমাদের অনেক উপকার হয়।’
বাজারে শাকসবজি কিনতে আসা এনামুল হক বলেন, ‘নতুন করে তেল ও চালের দাম বেড়েছে। এর সঙ্গে বেড়েছে ব্রয়লার মুরগি, পেঁয়াজ, করলাসহ কয়েক ধরনের সবজির দাম। এতে আমরা যারা নিম্নআয়ের মানুষ, তারা বিপাকে পড়েছি। কেউ বাজার মনিটরিং করছে কিনা, করলে কীভাবে করছে; তা আমাদের জানা নেই। দাম বাড়ায় সব মানুষ ক্ষুব্ধ। এখন তো কৃষকের ঘরে তেমন পেঁয়াজ নেই, সব মজুতদারদের গুদামে সংরক্ষিত আছে। মজুতদাররাই ইচ্ছেকৃতভাবে পেঁয়াজের দাম বাড়াচ্ছেন। বাজার মনিটরিং করা দরকার সংশ্লিষ্টদের। সেইসঙ্গে যারা মজুত করে দাম বাড়াচ্ছেন, তাদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানাই। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা না দিলে বাজার স্থিতিশীল হবে না।’
কেন কেজিতে ২০ টাকা বেড়েছে জানতে চাইলে হিলি বাজারের পেঁয়াজ বিক্রেতা আবুল হাসনাত বলেন, ‘ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ। গত কয়েক মাস ধরে দেশি পেঁয়াজ দিয়ে ক্রেতাদের চাহিদা মেটানো হচ্ছিল। গত সপ্তাহে দাম ছিল ৩০-৩৫ টাকা। চলতি সপ্তাহে বেড়ে ৫০-৫৫ টাকা হয়েছে। এর মূল কারণ সরবরাহ কম। যত দিন যাচ্ছে দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ কমছে। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় দাম বাড়ছে। ভারত থেকে আমদানি শুরু হলে দাম স্বাভাবিক অবস্থায় আসবে। এ ছাড়া নয়।’
বাজার মনিটরিংয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর দিনাজপুর কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক বোরহান উদ্দিন বলেন, ‘নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিয়মিত হাট-বাজারের দোকানগুলোতে অভিযান চালানো হয়। দোকানিরা কত দামে পণ্য কিনে কত দামে বিক্রি করছেন, সেটি মনিটরিং করা হয়। কারও বিরুদ্ধে অহেতুক কোনও কারণ ছাড়াই পণ্যের দাম বাড়ানোর অভিযোগ প্রমাণিত হলে জরিমানা করা হয়। আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে।’
Copyright © 2025 প্রভাত. All rights reserved.