আজ
|| ১৩ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ || ২৯শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ || ১৭ই মহর্রম, ১৪৪৭ হিজরি
পোস্টগ্রাজুয়েট সংস্কারে ৭ দাবিতে চিকিৎসকদের
প্রকাশের তারিখঃ ১৯ এপ্রিল, ২০২৫
প্রভাত রিপোর্ট: রেসিডেন্সি এবং নন-রেসিডেন্সি শিক্ষার্থীদের সেগমেন্টাল পাস ও ক্যারিঅন পদ্ধতি চালুসহ পোস্টগ্রাজুয়েট কোর্স সংস্কারে সাত দফা দাবিতে প্রতীকী কর্মবিরতি ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন চিকিৎসকরা। তাদের দাবি, দীর্ঘদিন ধরে মেডিকেল পোস্টগ্রাজুয়েট শিক্ষা ব্যবস্থায় যে অনিয়ম, বৈষম্য এবং দুর্বলতা বিদ্যমান, তা দূর করার লক্ষ্যে তারা আন্দোলনে নেমেছেন। তাই দ্রুততম সময়ের মধ্যে রেসিডেন্সি ও নন-রেসিডেন্সি প্রোগ্রামের কাঠামো সংশোধন এবং সেগমেন্টাল পাস সিস্টেম চালু করাসহ চিকিৎসকদের সাত দফা দাবি মেনে নিতে হবে। শনিবার (১৯ এপ্রিল) বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএমইউ) বটতলায় বাংলাদেশ মেডিকেল কমিউনিটির উদ্যোগে আয়োজিত এই কর্মসূচিতে চিকিৎসকরা এসব দাবি জানান।
মানববন্ধনে উপস্থিত বক্তারা তাদের বক্তব্যে চিকিৎসা শিক্ষা সংস্কারের গুরুত্ব তুলে ধরেন। তারা বলেন, আমরা চাই, রেসিডেন্সি এবং নন-রেসিডেন্সি প্রোগ্রামগুলোর কোর্স কারিকুলাম আধুনিকীকরণ করা হোক। আমাদের লক্ষ্য হলো, শিক্ষার্থীদের হাতে-কলমে আধুনিক ইন্টারভেনশন শেখানোর সুযোগ দেওয়া। তাছাড়া, সব রেসিডেন্টের জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা এবং একটি সুস্পষ্ট বেতন কাঠামো প্রবর্তন করা প্রয়োজন। আরেক চিকিৎসক বলেন, আমরা ২০২৫ সালের জানুয়ারি সেশন থেকে সেগমেন্টাল পাস সিস্টেম চালু করার দাবি জানাচ্ছি। এই সিস্টেমটি পরীক্ষায় ছাত্রদের জন্য আরও সহজতর এবং স্বচ্ছতার সুযোগ সৃষ্টি করবে, যা আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করবে। তিনি বলেন, আমরা আমাদের শিক্ষার্থীদের জন্য একটি ক্যারিঅন সিস্টেম চালু করতে চাই, যাতে যেকোনো পরীক্ষায় ফেল করলে তাদের জন্য এক বছরের সুযোগ প্রদান করা হয়। এটি তাদের শিক্ষাজীবনে বড় ধরনের সুবিধা প্রদান করবে এবং মানসিক চাপ কমাবে।
ডা. মাহমুদুর রহমান বলেন, আমাদের পরীক্ষার পদ্ধতিতে আন্তর্জাতিক মানে আধুনিকীকরণের প্রয়োজন রয়েছে। আমরা চাই পরীক্ষার ফল দ্রুত প্রকাশ করা হোক এবং পরীক্ষকদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হোক। এছাড়া, পরীক্ষা পদ্ধতিতে রিভিউ সিস্টেম চালু করতে হবে। তিনি বলেন, আমরা শুধু আমাদের পেশাগত অধিকারই নয়, দেশের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার উন্নয়নও চাই। আমাদের দাবির বাস্তবায়ন না হলে, আমরা আরও বৃহত্তর আন্দোলনে যাবো।
বিএমসির সাত দফা দাবিগুলো হলো: ১. রেসিডেন্সি ও নন-রেসিডেন্সি সংস্কার কমিটি গঠন: চিকিৎসকরা দাবি করছেন, নতুন কোর্স কারিকুলাম, হাতে-কলমে আধুনিক ইন্টারভেনশন শেখানোর সুযোগ এবং ই-লগবুক নিশ্চিতকরণসহ সুনির্দিষ্ট বেতন কাঠামো এবং চিকিৎসা ভাতা চালু করতে হবে। এছাড়া, কোর্স ডিউরেশনের পুনর্বিবেচনা এবং ট্রেনিংয়ের স্বীকৃতি প্রদানেরও দাবি জানিয়েছেন তারা। সেগমেন্টাল পাস নিশ্চিতকরণ: ২০২৫ সালের জানুয়ারি সেশন থেকে সেগমেন্টাল পাস চালুর দাবি জানানো হয়েছে। পরীক্ষা পদ্ধতির যুগোপযোগী সংস্কার: আধুনিক পরীক্ষা পদ্ধতি চালু করতে হবে, এবং পরীক্ষার ফল দ্রুত প্রকাশসহ পরীক্ষকদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা দরকার। ভর্তি পরীক্ষাকেন্দ্রিক সংস্কার: ভর্তি ফি সর্বোচ্চ এক হাজার টাকায় সীমাবদ্ধ রাখা, সাবজেক্ট চয়েজের সুযোগ বৃদ্ধি এবং ওয়েটিং লিস্ট ও মাইগ্রেশন প্রক্রিয়া চালুর দাবি। ফেইজ-এ, ফেইজ-বি ও ডিপ্লোমা ফাইনাল পরীক্ষা সংস্কার: পরীক্ষা ফি সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার টাকা রাখা এবং সরকারি চিকিৎসকদের জন্য বুনিয়াদি প্রশিক্ষণের সুযোগ সৃষ্টির দাবি। ক্যারিঅন সিস্টেম চালু: যেকোনো পরীক্ষায় ফেল করলে শিক্ষার্থীর জন্য এক বছরের ক্যারিঅন সুবিধা চালু করা। ডিপ্লোমা ডিগ্রির নাম পরিবর্তন: ডিপ্লোমা ডিগ্রির নাম পরিবর্তন করে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিযোগ্য করা এবং গবেষণায় গুরুত্বারোপের দাবি।
বাংলাদেশ মেডিকেল কমিউনিটির নেতারা জানিয়েছেন, বেশিরভাগ দাবির বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেছেন শিক্ষকরা এবং তারা দ্রুত এই প্রস্তাবনাগুলোর বাস্তবায়ন দেখতে চান। এর আগে ২২ মার্চ বিএমইউ ভিসি অধ্যাপক ডা. মো. শাহিনুল আলমসহ অন্যান্য প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করেন চিকিৎসকরা। এরপর গত ২২ মার্চ থেকে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত জনমত তৈরি, ৬ এপ্রিল থেকে ১০ এপ্রিল পর্যন্ত স্মারকলিপি বিতরণ এবং ১৩ এপ্রিল প্রতীকী কর্মবিরতি ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়।
Copyright © 2025 প্রভাত. All rights reserved.