• বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫, ১১:৩৫ অপরাহ্ন
শিরোনাম
আদালতকে ফ্যাসিস্টমুক্ত করতে হবে: সালাহউদ্দিন সংবিধান বদলাতে হবে, বর্তমান সংবিধান আওয়ামী সংবিধান : হাসনাত আব্দুল্লাহ জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ছাড়া এনসিপি নির্বাচনে যাবে না: নাহিদ ইসলাম যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন হবে, যুক্তরাষ্ট্রকে জানিয়েছে সরকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে ৫ জনের মৃত্যুদণ্ড ইসরাইলের পিআর পদ্ধতি কেন আলেমদের আদর্শ হলো, বুঝে আসে না: প্রিন্স জাপানে শিক্ষাবৃত্তি ও বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগ বাড়ানোর আহ্বান দাঁড়িপাল্লা প্রতীকসহ নিবন্ধন ফিরে পেল জামায়াত, গেজেট প্রকাশ তিতাসে পাওনা টাকার জেরে রাজমিস্ত্রীকে হত্যা, দুই যুবক গ্রেপ্তার দুই বড় বিষয়ে ঐকমত্যে রাজনৈতিক দলগুলো: আলী রীয়াজ

চলনবিলে হাঁস পালন : স্বাবলম্বী অনেকেই

প্রভাত রিপোর্ট / ১১২ বার
আপডেট : রবিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৫
filter: 0; fileterIntensity: 0.0; filterMask: 0; module: a; hw-remosaic: 0; touch: (-1.0, -1.0); modeInfo: ; sceneMode: SFHDR; cct_value: 0; AI_Scene: (6, -1); aec_lux: 183.28741; hist255: 0.0; hist252~255: 0.0; hist0~15: 0.0;

খন্দকার মাহাবুবুর রহমান, নাটোর: নাটোরের চলনবিলে হাঁস পালন করে স্বাবলম্বী হয়েছে অনেকেই। চলনবিলে হাঁস পালনের সব থেকে বড় সুবিধা বিলে পানি থাকা অবধি প্রায় ছয় মাস হাঁসের প্রধান খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয় শামুক, ঝিনুকসহ জলে বাস করা নানান প্রাণী। এতে হাঁস পালনে খরচ কমে। বাড়ে লাভের পরিমাণ।
নাটোর জেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের তথ্য মতে চলনবিলে ছোট বড় প্রায় ৪৫১টি খামার রয়েছে। এর মধ্যে রাজহাঁসের খামার অর্ধেক। হাঁস পালনকারীরা পাতিহাঁস এবং রাজহাঁস উভয় প্রকারের হাঁস পালন করে মাংস ও ডিমের চাহিদা পূরণ করেন। এসব খামারে হাঁস আছে দেড় লাখেরও বেশি। আবার স্থানীয় পরিবারগুলোও হাঁস পালন করছেন প্রায় ৭ থেকে ৮ লাখ। এতে বেকারত্ব কমার পাশাপাশি বেড়েছে আয়। পূরণ হচ্ছে স্থানীয়দের আমিষের চাহিদা। সমৃদ্ধ হচ্ছে নাটোরের অর্থনীতি। বিলে উচ্ছিষ্ট বোরো ধান ও শামুক হাঁসের প্রধান খাদ্য এবং অল্প টাকা বিনিয়োগে ব্যবসা সফল হওয়ায় বর্তমানে পুরুষরাই বিকল্প পেশা ও বেকারত্ব দূর করার জন্য অস্থায়ী খামার গড়ে হাঁস পালনের দিকে ঝুঁকছে।
নাটোরের সিংড়া উপজেলার ১০ নং চৌগ্রাম ইউনিয়নের গোয়াল বাড়িয়া গ্রামের জমশেদ আলী। হাঁস পালন করে সংসার চালিয়ে কিনেছেন ৮ বিঘা জমি। দুই সন্তানের জনক এই জমশেদ আলী, মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। একমাত্র সন্তানকে উচ্চশিক্ষায় করেছেন শিক্ষিত। প্রায় ২০ বছর যাবৎ তিনি এই হাঁস পালন করেন চলনবিলের পথে-প্রান্তরে।
জমশেদ আলী বলেন,“বিভিন্ন জেলা থেকে ১০ দিনের হাঁসের বাচ্চা কিনে এনে ৯০ দিন লালন পালন করে, বিক্রি করি। প্রতি চালানে খরচ বাদে প্রায় ১ থেকে দেড় লক্ষ টাকা লাভ থাকে। খাদ্য বাবদ তেমন কোন খরচ হয় না বললেই চলে, তবে অসুখ হলে স্থানীয় ডাক্তারের কাছে ওষুধ কিনে খাওয়াতে হয়।”
খামারি আমজাদ হোসেন বলেন, “এখন আমার খামারে প্রায় ৩ শত হাঁস আছে। বিলের খালে সারাদিন শামুক-ঝিনুক খায়। আমি নিজেও কিছু খাবার দেই। পরিবারের ডিম ও মাংসের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি হাঁস বিক্রি করে ভালো আয় হয়।”
চলনবিলের আরেক খামারি শমশের উদ্দিন বলেন, “সারা বছরই হাঁস পালন করি। এখন আমার খামারে ক্যাম্বেল জাতের ৬০০টি হাঁস রয়েছে। ৪ থেকে ৫ মাস বয়সী হাঁস কিনি। সাড়ে ৫ মাস বয়স থেকে ডিম দেওয়া শুরু করে। এখন আমার খামারের ৫ শত হাঁস ডিম দিচ্ছে। বছরে খরচ বাদে ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা লাভ থাকে। একটি হাঁস গড়ে বছরে ৩ শত ডিম দেয়। ৩ বছর পর ডিম দেওয়া কমতে থাকে। তখন মাংসের জন্য হাঁসগুলো বিক্রি করি। বর্তমানে প্রতিটি ডিম ১০ থেকে ১১ টাকা ও প্রতিটি হাঁস গড়ে ৫ শত থেকে ৫ শত ৫০ টাকায় বিক্রি হয়।”
খামারি শ্রমিক মো.জামাল উদ্দিন বলেন, “ খামার থেকে প্রতিদিন বেতন পাই ৬ শত টাকা। এই দিয়েই চলে আমার সংসার। সকাল ৭টায় হাঁস ছাড়ি। তারপর ডিমগুলো তুলা হয়। এখন ৩ শত থেকে ৩ শত ৫০টি ডিম হচ্ছে। বর্তমানে বিলে পানি না থাকায় খাবার খরচ বেশি হচ্ছে। আয় অনেক কমে গেছে। হাঁসের খাবার বেশি দিতে হচ্ছে। যখন বিলে পানি থাকে তখন মহাজনের লাভ বেশি হয়।”
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ড. জুলফিকার মো. আখতার হোসেন বলেন, “জেলার প্রতিটি খামারেই অন্তত ৩ থেকে ৪ জন কাজ করছে। খামারগুলোতে প্রায় ১ লাখ ৫৭ হাজার হাঁস পালন করা হচ্ছে। বিলে পানি বেশি থাকলে খরচ তেমন হয় না। পানি না থাকলে খরচ সামান্য বাড়ে। বছরে প্রতি খামারিরা কমপক্ষে লক্ষাধিক টাকা আয় হয়। নাটোর জেলায় হাঁস পালন করছে আরও ৩০ থেকে ৪০ হাজার পরিবার। সেখানেও প্রায় ৭ থেকে ৮ লাখ হাঁস আছে। প্রতিটি পরিবার বছরে আয় করছে প্রায় ২০ হাজার টাকা। এ খাতে আরও মানুষকে সংযুক্ত করার কাজ করে যাচ্ছে প্রাণিসম্পদ বিভাগ।”
নাটোরের চলন বিলের এই সমস্ত ক্ষুদ্র খামারিরা সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে, এ ধরনের আরো খামার গড়ে উঠলে, একদিকে যেমন এই অঞ্চলের আরো কয়েক হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে, অন্যদিকে নাটোরের অর্থনীতি আরো সমৃদ্ধ হবে বলে মনে করছেন নাটোরের সচেতন মহল।


আপনার মতামত লিখুন :
এই বিভাগের আরও