• বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ০৭:১৪ পূর্বাহ্ন

ক্রিকেটের বাইবেল উইজডেনের বর্ষসেরা বুমরা ও মান্ধানা

প্রভাত রিপোর্ট / ৩ বার
আপডেট : মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল, ২০২৫

প্রভাত স্পোর্টস: ক্রিকেটের বাইবেলখ্যাত উইজডেনের চোখে ২০২৫ সালের সেরা পুরুষ ক্রিকেটার নির্বাচিত হয়েছেন ভারতের ফাস্ট বোলার যশপ্রীত বুমরা। যে স্বীকৃতির আনুষ্ঠানিক নাম উইজডেনস লিডিং ক্রিকেটার ইন দ্য ওয়ার্ল্ড। মেয়েদের লিডিং ক্রিকেটার ইন দ্য ওয়ার্ল্ড হয়েছেন ভারতেরই আরেক তারকা স্মৃতি মান্ধানা। মঙ্গলবার প্রকাশিত উইজডেন ক্রিকেটার্স অ্যালমানাকের সর্বশেষ সংস্করণে এটা জানানো হয়।
গত বছর টেস্ট ইতিহাসের প্রথম বোলার হিসেবে ২০-এর কম গড়ে ২০০ উইকেট নেন বুমরা। উইজডেন সম্পাদক লরেন্স বুথের চোখে, ‘খুব সহজেই বছরের তারকা।’ গত বছর ১৩ টেস্টে ৭১ উইকেট নেন বুমরা। পাশাপাশি গত জুনে ভারতকে টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জেতাতেও বড় অবদান ছিল তাঁর। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ফাইনালে ১৮ রানে ২ উইকেট নেওয়ার পাশাপাশি এ টুর্নামেন্টে ৮ ম্যাচে ১৫ উইকেট নেন বুমরা।
অস্ট্রেলিয়া সফরে বোর্ডার–গাভাস্কার ট্রফিতে ভারতের বোলিংকে প্রায় একাই টেনেছেন ৩১ বছর বয়সী এই ফাস্ট বোলার। গত বছর নভেম্বরে শুরু হয়ে জানুয়ারিতে শেষ হওয়া এই সিরিজে ৫ টেস্টে ৩২ উইকেট নেন বুমরা। সিরিজে তিনিই সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি। বুথ তাঁকে নিয়ে লিখেছেন, ‘সে খুবই ভয়ংকর, চ্যালেঞ্জ হিসেবে অনন্য, তার বিপক্ষে করা রানগুলোকে দ্বিগুণ করে বিবেচনা করা উচিত…সর্বকালের সেরা হওয়ার দাবিটা সে উত্থাপন করেছে।’
গত বছর তিন সংস্করণ মিলিয়ে মেয়েদের ক্রিকেটে ১৬৫৯ রান করেন মান্ধানা। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এক বর্ষপঞ্জিতে কোনো নারী ক্রিকেটারের এটাই সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড। এর মধ্যে চারটি সেঞ্চুরি, যা আরেকটি রেকর্ড। গত জুনে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্টে ভারতের ১০ উইকেটের জয়ে ১৪৯ রানের ইনিংসও খেলেন মান্ধানা।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটসম্যান নিকোলাস পুরানকে লিডিং টি–টোয়েন্টি ক্রিকেটার হিসেবে বেছে নিয়েছে উইজডেন অ্যালমানাক।
উইজডেনের সবচেয়ে পুরোনো পুরস্কার বছরের সেরা পাঁচ ক্রিকেটারে সারের ক্রিকেটারদের আধিক্য। সারেকে টানা তৃতীয় কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশিপ জেতানো গাস অ্যাটকিনসন, জেমি স্মিথ ও ড্যান ওরাল বছরের সেরা পাঁচ ক্রিকেটারের মধ্য তিনজন। বাকি দুজন হলেন হ্যাম্পশায়ারের লিয়াম ডসন ও ইংল্যান্ড নারী দলের বাঁহাতি স্পিনার সোফি একলেস্টন।
অস্ট্রেলিয়ায় জন্ম নেয়া পেসার ওরাল এ মৌসুমে ইংল্যান্ডের হয়ে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছেন। এবার সারের কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশিপ জয়ের মূল নায়ক ছিলেন ৩৩ বছর বয়সী এই বোলার। ১১ ম্যাচে ১৬.১৫ গড়ে ৫২ উইকেট নেন। অ্যাটকিনসন ও স্মিথ টেস্টে ভালো করেছেন। গত বছর জুলাইয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে লর্ডসে টেস্ট অভিষেকে ১২ উইকেট নেন অ্যাটকিনসন। সেপ্টেম্বরে সেই লর্ডসেই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৫ উইকেট নেওয়ার পাশাপাশি আটে নেমে সেঞ্চুরিও করেন এই পেস অলরাউন্ডার। ডিসেম্বরে ওয়েলিংটন টেস্টে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে করেন হ্যাটট্রিক। টেস্ট ক্রিকেটার হিসেবে নিজের প্রথম বছরে ১১ ম্যাচে ৫২ উইকেট নেন অ্যাটকিনসন। গত বছর বুমরার পর টেস্টে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেট নেন এই ডানহাতি পেসার। ডসন কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশিপে বাঁহাতি স্পিনে ৫৪ উইকেট নেওয়ার পাশাপাশি ৯৫৬ রান করেন। বুথের ভাষায়, ডসনের চেয়ে ‘কাউন্টি ক্রিকেটে কার্যকর অলরাউন্ডার আর নেই।’ একলেস্টন টি–টোয়েন্টি ক্রিকেটে ইংল্যান্ডের হয়ে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি হন এবং সব সংস্করণ মিলিয়ে নেন ২৬ উইকেট।
বছরের সেরা পারফরম্যান্সের জন্য উইজডেন ট্রফি উঠেছে নিউজিল্যান্ডের স্পিনার মিচেল স্যান্টনারের হাতে। গত বছর অক্টোবরে পুনেতে ভারতের বিপক্ষে নিউজিল্যান্ডের ১১৩ রানের জয়ে ১৩ উইকেট নেন স্যান্টনার। এতে নিউজিল্যান্ড তিন টেস্টের সেই সিরিজে ২–০ ব্যবধানে এগিয়ে যাওয়ার পর হোয়াইটওয়াশও করেছিল ভারতকে। ২০১২ সালের ডিসেম্বরের পর সেটা ছিল ঘরের মাঠে ভারতের প্রথম সিরিজ হার। উইজডেন সম্পাদক বুথ তাঁর বার্ষিক নিবন্ধে খেলাটির বৈশ্বিক পরিচালকদের প্রতি তোপ দেগেছেন। ২০২৪ সাল তাঁর চোখে, ‘ক্রিকেট ভালোভাবে পরিচালিত হয় এই দাবি তুলে নেওয়ার’ বছর। গত বছর ডিসেম্বরে বিসিসিআই সচিব থেকে জয় শাহর আইসিসি প্রধানের পদে আসীন হওয়া এবং চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ভেন্যু নিয়ে ভারত ও পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের মধ্যকার ঝামেলা উঠে এসেছে তাঁর এ নিবন্ধে।
এ বছরের অ্যালমানাকে ইংল্যান্ডের সাবেক পেসার জেমস অ্যান্ডারসনকেও বিশেষ সম্মান দেওয়া হয়েছে। টেস্টে ২১ বছর খেলার পর গত জুলাইয়ে অবসর নেন অ্যান্ডারসন। ১৮৮ টেস্টে ৭০৪ উইকেট নিয়ে এই সংস্করণে পেসারদের মধ্যে অ্যান্ডারসনই সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি। গত বছর না ফেরার দেশে পাড়ি জমানো ইংল্যান্ডের দুই সাবেক ক্রিকেটার ডেরেক আন্ডারউড ও গ্রাহাম থর্পকেও শ্রদ্ধা জানানো হয় এ বছরের অ্যালমানাকে।
উইজডেন ক্রিকেটার্স অ্যালমানাক নামের হলুদরঙা ছোট বইটার নাম ক্রিকেটপ্রেমী মাত্রই জানেন। স্বাধীন নিরপেক্ষ সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে তথ্য–পরিসংখ্যান–রেকর্ডে নির্ভুলতার অতুলনীয় এক মানদণ্ড স্থাপন করার কারণে এটিকে ‘ক্রিকেটের বাইবেল’ স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এই অ্যালমানাক ১৬১ বছর ধরে নিরবচ্ছিন্নভাবে প্রতিবছর বেরিয়ে যাচ্ছে। দুটি বিশ্বযুদ্ধেও যাতে বিরতি পড়েনি।
গৌরবময় ঐতিহ্যের কারণে উইজডেনের স্বীকৃতি যেকোনো ক্রিকেটারের জন্য বড় এক অর্জন। সেই স্বীকৃতি নানাভাবে আসে। ২০০৩ সাল থেকে ‘লিডিং ক্রিকেটার অব দ্য ইয়ার’ নামে পুরস্কার চালু হয়, যা ছেলেদের ক্রিকেটে বছরের সেরা ক্রিকেটারের স্বীকৃতি। ২০১৫ থেকে চালু করা হয় মেয়েদের ‘লিডিং ক্রিকেটার অব দ্য ইয়ার’ পুরস্কার। সবচেয়ে পুরোনো হলো উইজডেনের ‘ক্রিকেটার্স অব দ্য ইয়ার’ স্বীকৃতি। বছরের সেরা হিসেবে পাঁচজনকে নির্বাচন করেন উইজডেন সম্পাদক। যাঁদের একজন একবার মজা করে বলেছিলেন, পুরো গণতান্ত্রিকভাবে এই নির্বাচন করা হয়, তবে ভোটারের সংখ্যা এক। সম্পাদক যাকে ইচ্ছা নির্বাচন করতে পারেন, তবে সাধারণত আগের ইংলিশ মৌসুমে পারফরম্যান্স ও প্রভাব বড় ভূমিকা রাখে এতে। ১৮৮৯ সাল থেকে এ পুরস্কার দেওয়ার শুরু। বাংলাদেশের একজন ক্রিকেটারেরই নাম আছে এই তালিকায়। ২০১০ সালে লর্ডস আর ওল্ড ট্রাফোর্ডে পরপর দুই টেস্টে দাপুটে দুই সেঞ্চুরির স্বীকৃতি হিসেবে তামিম ইকবাল। সেবার অবশ্য পাঁচজনের বদলে চারজন ছিলেন তালিকায়। লিডিং ক্রিকেটার অব দ্য ইয়ার একজন একাধিকবার হতে পারেন। বিরাট কোহলি ও বেন স্টোকস যেমন তিনবার এই স্বীকৃতি পেয়েছেন। বীরেন্দর শেবাগ ও কুমার সাঙ্গাকারা দুই বার। ক্রিকেটার্স অব দ্য ইয়ারের নিয়ম আবার ভিন্ন। যা দ্বিতীয়বার হওয়ার সুযোগ নেই।


আপনার মতামত লিখুন :
এই বিভাগের আরও