• শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫, ০১:৪৭ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম
আদালতকে ফ্যাসিস্টমুক্ত করতে হবে: সালাহউদ্দিন সংবিধান বদলাতে হবে, বর্তমান সংবিধান আওয়ামী সংবিধান : হাসনাত আব্দুল্লাহ জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ছাড়া এনসিপি নির্বাচনে যাবে না: নাহিদ ইসলাম যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন হবে, যুক্তরাষ্ট্রকে জানিয়েছে সরকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে ৫ জনের মৃত্যুদণ্ড ইসরাইলের পিআর পদ্ধতি কেন আলেমদের আদর্শ হলো, বুঝে আসে না: প্রিন্স জাপানে শিক্ষাবৃত্তি ও বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগ বাড়ানোর আহ্বান দাঁড়িপাল্লা প্রতীকসহ নিবন্ধন ফিরে পেল জামায়াত, গেজেট প্রকাশ তিতাসে পাওনা টাকার জেরে রাজমিস্ত্রীকে হত্যা, দুই যুবক গ্রেপ্তার দুই বড় বিষয়ে ঐকমত্যে রাজনৈতিক দলগুলো: আলী রীয়াজ

কাঁচা পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানিতে মাশুল বাড়লো

প্রভাত রিপোর্ট / ৬৩ বার
আপডেট : বুধবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৫

প্রভাত অর্থনীতি: ৩০ বছর পর কাঁচা পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানিতে মাশুল (ফি) বাড়িয়েছে সরকার। প্রতি বেল কাঁচা পাট রপ্তানিতে এখন সরকার রাজস্ব হিসেবে ৭ টাকা নেবে, যা এত দিন ছিল ২ টাকা। অর্থাৎ এই মাশুল বেড়ে হয়েছে সাড়ে তিন গুণ। আর পাটজাত পণ্যের প্রতি ১০০ টাকা রপ্তানি মূল্যের বিপরীতে এখন দিতে হবে ৫০ পয়সা, যা এত দিন ছিল ১০ পয়সা। এ হার বেড়ে হয়েছে পাঁচ গুণ।
বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় গত সোমবার এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। আগের প্রজ্ঞাপন জারি হয়েছিল ১৯৯৫ সালের ১ জুলাই। এর আগে চলতি ২০২৪–২৫ অর্থবছরের প্রথম দিন, অর্থাৎ গত বছরের ১ জুলাই থেকে এ খাতে নগদ সহায়তা কমানো হয়। তখন বৈচিত্র্যময় পাটপণ্য রপ্তানিতে নগদ সহায়তা ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করে সরকার। এ ছাড়া নগদ সহায়তা পাটজাত পণ্যে ৭ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ এবং পাট সুতায় ৫ থেকে ৩ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে।
সরকারের নতুন সিদ্ধান্তে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বাংলাদেশ জুট স্পিনার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজেএসএ)। সংগঠনটি বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ে সোমবার চিঠি দিয়ে প্রজ্ঞাপনটি স্থগিত অথবা প্রত্যাহারের অনুরোধ জানিয়েছে।
বিজেএসএ সভাপতি তাপস প্রামাণিক গণমাধ্যমকে বলেন, ‘পাটকে অন্যান্য খাতের সঙ্গে মেলালে হবে না। এখানে কৃষকের পাশাপাশি শ্রমিকের দিকও আছে। পলিপ্রপাইলিনের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে যখন প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করতে হচ্ছে, তখন সরকার এমন সিদ্ধান্ত নিল। এতে আমরা হতাশ। আমরা চাই এটা প্রত্যাহার হোক। পাটকে অন্যান্য খাতের সঙ্গে মেলালে হবে না। এখানে কৃষকের পাশাপাশি শ্রমিকের দিকও আছে। পলিপ্রপাইলিনের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে যখন প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করতে হচ্ছে, তখন সরকার এমন সিদ্ধান্ত নিল। এতে আমরা হতাশ। আমরা চাই এটা প্রত্যাহার হোক।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ কর ব্যতীত রাজস্ব (এনটিআর) খাতের আদায় বাড়ানোর অংশ হিসেবে কয়েক মাস আগে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি পাঠায়। সে অনুযায়ী পাট অধিদপ্তর এক মাস আগে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের কাছে কাঁচা পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানিতে রাজস্ব মাশুল বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়। পাট অধিদপ্তর অবশ্য অর্থ বিভাগের তাগিদ পেয়ে পাঁচ বছর ধরে এই মাশুল বাড়ানোর জন্য বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ে চিঠি লিখে আসছে। বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় এ বছরের ১০ জানুয়ারি কাঁচা পাট রপ্তানিতে প্রতি বেলে ৫ টাকা ও পাটজাত পণ্যে প্রতি ১০০ টাকায় ৩০ পয়সা রাজস্ব মাশুল নির্ধারণের প্রস্তাব পাঠায় অর্থ বিভাগে। এ প্রস্তাবে সম্মতি দেন বাণিজ্য এবং বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন।
অর্থ বিভাগ গত ২৮ জানুয়ারি এক চিঠিতে মাশুল আরেকটু বাড়ানোর কথা জানিয়ে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয়। প্রতি বেল কাঁচা পাট রপ্তানিতে ৭ টাকা আর প্রতি ১০০ টাকার পাটজাত পণ্যের রপ্তানি মূল্যের বিপরীতে ৫০ পয়সা নির্ধারণ করে অর্থ বিভাগ। নতুন হার কার্যকর হলে দুই ধরনের পণ্যে পাট অধিদপ্তরের বাড়তি আয় হবে প্রায় ১৫ কোটি টাকা। বর্তমানে এভাবে আয় হয় তিন কোটি টাকার মতো। রপ্তানির সময় তা ব্যাংকগুলোই উৎসে কেটে রাখবে। রপ্তানির দলিল হস্তান্তরের (ডকুমেন্ট নেগোসিয়েশন) সময় এই অর্থ কেটে রেখে পাট অধিদপ্তরে জমা দেয় ব্যাংকগুলো।
বস্ত্র ও পাটসচিব মো. আবদুর রউফ গণমাধ্যমকে বলেন, একদিকে পাটপণ্য রপ্তানিতে নগদ সহায়তা কমেছে, অন্যদিকে নতুন করে মাশুল বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত হলো। এতে রপ্তানিকারকদের ওপর চাপ বাড়বে। রপ্তানিকারকেরা আবেদন করেছেন। এটি পুনর্বিবেচনার জন্য আমরা অর্থ বিভাগকে অনুরোধ করেছি।
বিদ্যমান রপ্তানি নীতি অনুযায়ী, কাঁচা পাট হচ্ছে শর্ত সাপেক্ষে রপ্তানি পণ্য। একসময় বাংলাদেশি পাটপণ্যের বড় বাজার ছিল ভারত। কিন্তু বাংলাদেশের পাটপণ্য রপ্তানির ওপর ভারত অ্যান্টিডাম্পিং শুল্ক আরোপ করে রাখায় দেশটিতে পাটের সুতা রপ্তানি কমে ৫ ভাগের ১ ভাগে নেমেছে।
এদিকে পাটজাত পণ্য রপ্তানিও বছর বছর কমছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবছরে ১১২ কোটি ৭৬ লাখ মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছিল। ২০২২-২৩ অর্থবছরে তা কমে হয় ৯১ কোটি ১৫ লাখ ডলার। সর্বশেষ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রপ্তানি আরও কমে হয় ৮৫ কোটি ৫২ লাখ ডলার।
বিজেএসএ সূত্রে জানা গেছে, বছরে ৭৫ থেকে ৮০ লাখ বেল কাঁচা পাট উৎপাদন হয় দেশে। এর মধ্যে পাটপণ্য উৎপাদনের জন্য লাগে ৬০ লাখ বেল।
পাট অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে ১৩ লাখ ৪৪ হাজার ৮৩৫ বেল কাঁচা পাট রপ্তানি হয়েছে ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, চীনসহ ১৩টি দেশে। ওই অর্থবছরে ১ হাজার ৭৩১ কোটি টাকা বা ১৬ কোটি ৪ লাখ ৮৭ হাজার মার্কিন ডলারের কাঁচা পাট রপ্তানি হয়েছে। মোট রপ্তানি আয়ের মধ্যে ৯ কোটি ডলারের বেশি এসেছে ভারত থেকে।


আপনার মতামত লিখুন :
এই বিভাগের আরও