• রবিবার, ০৪ মে ২০২৫, ০৫:১৫ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম

গাইবান্ধার চরাঞ্চলে এবার ভুট্টার বাম্পার ফলন

প্রভাত রিপোর্ট / ৮ বার
আপডেট : শনিবার, ৩ মে, ২০২৫

নজরুল ইসলাম,গাইবান্ধা : গাইবান্ধার তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা নদীবেষ্টিত গাইবান্ধার বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলে এবার বাম্পার ফলন দিয়েছে ভুট্টা। বছরের পর বছর পতিত থাকা এসব বালুমাটিতে এখন সোনালি ফসলে ছেয়ে গেছে মাঠ।
কৃষকরা বলছেন, ভুট্টাই এখন তাদের জীবিকার মূল ভরসা। ফসল বিক্রি করে পরিবার চালানো থেকে শুরু করে গরু কেনা, সন্তানদের লেখাপড়া সবকিছুই চলছে এই ভুট্টার আয় দিয়ে। চরাঞ্চলে ভুট্টা চাষের প্রসারে একদিকে যেমন কর্মসংস্থান বেড়েছে, অন্যদিকে বদলে যেতে শুরু করেছে স্থানীয় অর্থনীতির চিত্রও।
সম্প্রতি গাইবান্ধা সদর, সাঘাটা, সুন্দরগঞ্জ ও ফুলছড়ি উপজেলার চরাঞ্চল ঘুরে দেখা গেছে- কৃষক-শ্রমিকদের ভুট্টা কাটা ও মাড়াইয়ের চিত্র। এসময় কেউবা হারভেস্টার মেশিনে ভুট্টার মোচা ফেলে দানা বের করছিলেন। আবার অনেকে দানাদার ভুট্টাগুলো রোদে শুকাতে ব্যস্ত ছিলেন।
গাইবান্ধা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে- চলতি মৌসুমে এ জেলায় ১৭ হাজার ৫৮৯ হেক্টর ভূমিতে ভুট্টা চাষ হয়েছে। যার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ১ লাখ ৯৪ হাজার ৩৭০ মেট্রিক টন। তবে দফতরের পরিসংখ্যানের দ্বিগুণ ভূমিতে ভুট্টা চাষ হয়েছে বলে কৃষকদের দাবি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জেলার চারটি উপজেলার চরগুলোতে যুগযুগ ধরে বসবাস করে আসছেন প্রায় ৪ লক্ষাধিক মানুষ। এসব মানুষের একমাত্র ভরসা কৃষি ফসলের ওপরে। তারা বালুচরে অন্যান্য ফসলের পাশাপাশি অধিকাংশ মাঠে আবাদ করেন ভুট্টা। আর এই ফসলের ওপরেই নির্ভরশীল তারা। বছরে দুই দফায় ভুট্টা ফসল ওপরে তুলে থাকেন। এটি বিক্রি করে পরিবার-পরিজনের মৌলিক চাহিদা পূরণ করার চেষ্টা চালিয়ে আসছেন চরাঞ্চলের কৃষক-শ্রমিকরা। প্রতি বছরে অন্যান্য ফসল উৎপাদনের পাশাপাশি এ বছরে ব্যাপকভাবে আবাদ করা হয়েছে ভুট্টা। ফলনও হয়েছে বাম্পার। বর্তমানে ভুট্টার কলা ছিঁড়তে শ্রমিকরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। কাঠফাটা রোদের মধ্যে যেন তাদের কাজের কোন স্থবিরতা নেই। কাল বৈশাখী ঝড়ের আশঙ্কায় চরাঞ্চলের হাজার হাজার হেক্টর বালু ভূমিতে ভুট্টার কলা ছিড়ে তা মাড়াই করতে নারী শ্রমিকদের ব্যাপক কর্ম-যজ্ঞের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
কৃষকরা বলছেন, এখানকার বড় বাণিজ্যিক বন্দর কামারজানী বন্দরে চরাঞ্চল থেকে আসা দৈনন্দিন শত শত ভুট্টা বোঝাই নৌকা নৌ-ঘাটে ভিড়ছে এবং সরাসরি তা ট্রাক বোঝাই হয়ে দেশের বিভিন্ন ফিড কোম্পানিসহ খাদ্য দ্রব্যের কারখানায় যাচ্ছে। দৈনিক শতাধিক ট্রাকে ভুট্টা বিক্রি হওয়ায় স্থানীয় ব্যবসায়ীরা ভালো মুনাফা অর্জন করতে পারছেন। এদিকে ভুট্টার লাভে হাজার-হাজার পরিবার একাধিক গাভি প্রতি মৌসুমে কিনতে পারছে। ফলে ভুট্টা ফসলের একটি বড় ক্ষেত্র তৈরি হওয়ায় চরাঞ্চলে অর্থবিত্তে গরিব-ধনীর বৈষম্য কমতে শুরু করেছে।
নেজাম উদ্দিন নামের এক কৃষক জানান, প্রতি একর জমিতে ভুট্টা আবাতে খরচ প্রায় ৮০ হাজার টাকা। উৎপাদন হয় প্রায় ১১০ মণ। বাজারে দাম ভালো থাকলে দেড় লাখের বেশি টাকা বিক্রি করা সম্ভব।
কামারজানী বন্দরের ব্যবসায়ী সোলাইমান ইসলাম বলেন, চলতি মৌসুমে মার্চ মাসের মাঝামাঝি থেকে এপ্রিলের পহেলা সপ্তাহ পর্যন্ত সাড়ে ১২শ টাকা ভুট্টার মণ ছিল কিন্তু বাজারে এখন একটু দাম কমেছে। তবে আমদানি বেশি হওয়ায় ফিড কোম্পানিগুলো দাম কমিয়ে দিয়েছে।
গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক খোরশেদ আলম বলেন, দুর্গম চরাঞ্চলের পতিত জমিগুলো আবাদে অর্থনৈতিকভাবে স্বচ্ছলতায় এসেছে। তাদের আরও লাভবান করতে সার্বিক সহযোগিতা করা হচ্ছে।


আপনার মতামত লিখুন :
এই বিভাগের আরও