প্রভাত সংবাদদাতা, চুয়াডাঙ্গা: জনবল সংকটে ব্যাহত হচ্ছে চুয়াডাঙ্গা সরকারি ছাগল উন্নয়ন খামারের কার্যক্রম। ভেটেরিনারি সার্জনের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদসহ ১৩টি পদের মধ্যে ১১টিই শূন্য রয়েছে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে সার্জন পায়নি প্রতিষ্ঠানটি। ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের জাত সংরক্ষণ ও প্রজননের জন্য ১৯৯৬ সালে জেলা শহরের পৌর কলেজ পাড়ায় ১০ একর জমির ওপর গড়ে উঠে খামার।
জানা যায়, দেশবিদেশে ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের মাংস ও চামড়ার ব্যাপক চাহিদা থাকলেও খামারে প্রতি বছর ছাগল উৎপাদন হ্রাস পাচ্ছে। গত অর্থ বছরের থেকে চলতি বছরে ১২২টি ছাগল কম রয়েছে। দীর্ঘদিনেও রিসার্চ সেন্টার ও কৃত্রিম প্রজনন কেন্দ্র চালু না হওয়ায় ব্ল্যাক বেঙ্গল জাতের ছাগল হুমকির মুখে পড়ছে। স্থানীয়দের দাবি, দ্রুত সময়ে খামারে লোকবল সরবরাহ করা না গেলে বন্ধ হয়ে যেতে পারে কারখানাটি।
জানা যায়, চুয়াডাঙ্গাসহ পার্শ্ববর্তী জেলার নারী-পুরুষ ও তরুণ উদ্যোক্তারা এ জাতের ছাগলের ছোট-বড় খামার গড়ে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। তাদের প্রাণিসম্পদ বিভাগ ছাগল পালনে সব ধরনের সহযোগিতা করছেন। দেশের অর্থনীতিতে ভূমিকা পালন করছে। প্রতিষ্ঠার ২৯ বছরেও খামারটি আলোর মুখ দেখতে পারছে না। প্রতি বছর পিছিয়ে পড়ছে উৎপাদন প্রজনন হ্রাস পাওয়ায়। এ জাতের ছাগলের রোগ বালাই কম হয়।
১৯৯৬ সালে ১০ একর জমির উপর গড়ে ওঠা খামারটি ২২৫টি মা ছাগী ও ৫০টি পাঠা নিয়ে যাত্রা শুরু হয়। বর্তমানে ৩৮৮টি পাঠা ও ছাগী রয়েছে। খামার শুরুর সময়ের থেকে বর্তমানে ১১৩টি ছাগল বেশি রয়েছে। ২৯ বছরে খামারটির বেহাল দশায় পরিণত হয়েছে। ব্ল্যাক বেঙ্গল জাতের ছাগলের জাত সংরক্ষণের উদ্দেশ্য এ খামারটি গড়ে উঠে।
জানা যায়, খামারের নিজস্ব ৪ একর জমিতে ঘাস রোপণ করা হয়। যা ছাগলের খাবার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। নেপিয়ার, রেড নেপিয়ার, সরগম, ভুট্টাসহ বিভিন্ন জাতের ঘাস রোপণ করা হয়। কাচা ঘাস ছাগলের খাবারের তালিকায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
২০২৪ সালে ব্ল্যাক বেঙ্গল জাতের ছাগল ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্যের (জিআই) স্বীকৃতি লাভ করে। যার ফলে এ জাতের ছাগলটি দেশের সম্পদের পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশ প্রাণী সম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট ছাগলের জীবন রহস্য আবিষ্কার করে। যার ফলে ছাগলের জাত সংরক্ষণ ও উন্নয়নে নতুন দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। বীজ সংরক্ষণ করতে না পারলে এক সময় হুমকির মুখে পড়বে এ জাতের ছাগল।
সংশ্লিষ্টরা জানান, খামারে ১৩টি পদের বিপরীতে দুজন দায়িত্বপালন করছেন। খামার প্রতিষ্ঠার পর থেকে শূন্য রয়েছে ভেটেরিনারি সার্জনের পদ। একটি করে উপ-সহকারী প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা, অফিস সহকারী, ছয়টি গোট অ্যাটেনডেন্ট ও দুটি নৈশ প্রহরীর পদ শূন্য রয়েছে। প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ও হিসাব রক্ষক কাম ক্যাশিয়ার পদে দুজন দায়িত্ব পালন করছেন। ভোমরা স্থলবন্দর ও চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা থেকে দুজন প্রেষণে এসে গোট অ্যাটেনডেন্টের দায়িত্ব পালন করছেন।
বর্তমানে খামারে প্রাপ্ত বয়স্ক, বাড়ন্ত ও বাচ্চা পাঠা ও ছাগী রয়েছে ৩৮৮টি। প্রাপ্ত বয়স্ক পাঠা ৩৩টি, বাড়ন্ত পাঠা ৫১টি, প্রাপ্ত বয়স্ক ছাগী ১৩০টি, বাড়ন্ত ছাগী ৬২টি, পুরুষ বাচ্চা ৪৫টি ও স্ত্রী বাচ্চা ৬৭টি রয়েছে খামারের শেডে। ২০১৭-১৮ অর্থ বছর থেকে ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের মার্চ মাস পর্যন্ত ১০৩৫টি পাঠা ও ৮৯৩টি ছাগী বিতরণ করা হয়েছে।
খামারে ২০২০-২১ অর্থ বছরে ৫৬৫টি, ২০২১-২২ অর্থ বছরে ৬৪০টি, ২০২২-২৩ অর্থ বছরে ৬২২টি, ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে ৫১০টি করে বিভিন্ন বয়সের পাঠা ও ছাগী ছিল। চলতি অর্থ বছরের মার্চ মাস পর্যন্ত খামারে ৩৮৮টি পাঠা ও ছাগল রয়েছে। আগের অর্থ বছরের চেয়ে ১২২টি ছাগল কম রয়েছে।
একটি পাঠার মূল্য দুই হাজার টাকা ও ছাগীর মূল্য বয়স ভেদে দুই হাজার থেকে তিন হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত। খামারে ৮টি শেড, একটি ব্যারাক, একটি অফিস কোয়ার্টার, একটি আইসোলেশন, একটি কোয়ারেনটাইন সেন্টার, একটি স্টোর, ও একটি অফিস বিল্ডিং রয়েছে।
ছাগল খামারে কর্মরতরা জানান, আরও কিছু লোকবল থাকলে ছাগল উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব। আমরা দুজন গোট অ্যাটেনডেন্ট প্রেষণে এসে কাজ করছি। ছাগল নিয়ে সারাদিন কাজ করতে হয়। এ জাতের ছাগলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
খামারিরা বলেন, কর্মসংস্থানের জন্য দেশে এ জাতের ছোট-বড় খামার গড়ে উঠেছে, যা লাভজনক ব্যবসা। ছাগলের রোগবালাই কম হয়, বছরে দুই বার বাচ্চা দেয়। খামার থেকে ছাগল বেশি সরবরাহ করতে পারলে উৎপাদন আরও বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা সরকারি ছাগল উন্নয়ন খামারের প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা কে এম সাদ্দাম হোসেন জানান, ১৩ জনের মধ্য দুজন স্থায়ীভাবে আর দুজন প্রেষণে দায়িত্ব পালন করছেন। ভেটেরিনারি সার্জন ও ভেটেরিনারি কম্পাউন্ডার দুটি পদ শূন্য রয়েছে। পদ দুটি গুরুত্বপূর্ণ। চিকিৎসার জন্য দুটি পদে লোকবল প্রয়োজন। লোকবল সংকটের বিষয়টি আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। দ্রুত সময়ে সমাধান হবে। তিনি আরও বলেন, ছাগল উন্নয়ন ও সংরক্ষণ খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সব শ্রেণির মানুষ খামার থেকে ছাগী ও পাঠা নিয়ে পালন করছেন। সরকারি খামারে বিশুদ্ধ ছাগল পাওয়া যায়। চাহিদা থাকলেও শতভাগ বিতরণ করা সম্ভব হয় না। এ এলাকা ছাগলের উর্বর ভূমি হিসেবে খ্যাত। পালন বিষয়ে খামারিদের সব সময় পরামর্শ দেওয়া হয়।