• শুক্রবার, ০৯ মে ২০২৫, ০৫:৪৮ অপরাহ্ন
শিরোনাম
নকশা না মানা ভবনের বিদ্যুৎ-পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করবে রাজউক নতুন রাজনৈতিক দলের আবেদন যাচাই-বাছাইয়ে কমিটি গঠন ইসির ভারতের ১৫ শহরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা পাকিস্তানের ‘সাবেক রাষ্ট্রপতির দেশত্যাগে জড়িতদের শাস্তি দিতে না পারলে আমি চলে যাবো’ পারফরম্যান্স সিরিজ ১৪ ৫জি উন্মোচন করতে যাচ্ছে রিয়েলমি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে পদত্যাগ না করলে আন্দোলন : রাশেদ খাঁন চলতি মাসে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশে ২৩টি মিটিং করেছে: হাসনাত পাকিস্তানে ভারতের হামলা, সংঘাত ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা ভীতির কোনও কারণ নাই, আমাদের সীমান্ত সম্পূর্ণ নিরাপদ: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা নিজেদের ‘বিশ্বব্যবস্থার রক্ষক’ হিসেবে উপস্থাপন করলেন পুতিন-শি

ঝামেলা-ঝঞ্ঝাটমুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থিরতায় অভিভাবকরা উদ্বিগ্ন

প্রভাত রিপোর্ট / ১০ বার
আপডেট : রবিবার, ৪ মে, ২০২৫

প্রভাত রিপোর্ট : দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীদের জন্য নিয়ম-কানুন বেশ কঠোর। আইনশৃঙ্খলার বেড়াজালে শিক্ষার্থীরা ঠিকমতো দাবি-দাওয়া তোলারও সাহস করেন না। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের বাইরে কথা বললেই বহিষ্কারসহ কঠোর শাস্তির মুখে পড়তে হয় তাদের। সেখানে ভর্তি খরচ-টিউশন ফি সবই বেশি। অনেকের বাবা-মা কষ্টার্জিত অর্থে সন্তানকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করেন। ফলে সহসাই আন্দোলন করে কেউ বহিষ্কার বা শাস্তির মুখে পড়তে চান না।
এটিই ছিল চিরাচরিত চিত্র। তবে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর সেই পরিস্থিতি একেবারে বদলে গেছে। এখন কথায় কথায় আন্দোলনে নামছেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও। কর্তৃপক্ষের চাপিয়ে দেয়া একপাক্ষিক সিদ্ধান্ত মানতে নারাজ হয়ে তারা কখনো ছুটছেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে (ইউজিসি), আবার কেউ কেউ সচিবালয়ের সামনে গিয়ে বিক্ষোভ-সমাবেশ করছেন।
৫ আগস্টের পর একের পর এক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান-সদস্য, উপাচার্যের অপসারণ দাবিতে বিক্ষোভ করতে দেখা গেছে। স্থায়ী ক্যাম্পাস, শ্রেণিকক্ষ সংকট, নিজস্ব পরিবহন সুবিধাসহ দাবি-দাওয়া নিয়ে অনশনেও বসেছেন শিক্ষার্থীরা। তবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের যে ঢেউ দেখা যাচ্ছে, তা নিয়ে অভিভাবক, শিক্ষাবিদ, শিক্ষাপ্রশাসনের কর্মকর্তারা উদ্বেগ জানিয়েছেন। অভিভাবকরা বলছেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষাব্যয় বেশি। সন্তান যদি এক সেমিস্টারও বহিষ্কার হয়, তাতেও লাখের ওপরে গচ্চা যাবে। পাশাপাশি সন্তানের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন বাবা-মায়েরা।
শিক্ষাবিদরা অবশ্য এমন পরিস্থিতির জন্য শিক্ষার্থীদের নয়, বরং সরকার তথা শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে (ইউজিসি) দায়ী করছেন। তাদের অভিমত, গণঅভ্যুত্থানের পর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় দখলদারমুক্ত করতে কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। পাশাপাশি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে যে শিক্ষার নামে বাণিজ্য চলছে, তাতে লাগাম টানতে কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপও নেই। অযাচিত নিয়ন্ত্রণে সেখানে শিক্ষার্থীদের ‘দমবন্ধ’ হওয়ার দশা। অভ্যুত্থানে অংশ নিয়ে শিক্ষার্থীরা সাহসী হয়ে উঠেছেন। এখন তারা বিক্ষুব্ধ হয়ে দখল-নিয়ন্ত্রণের বিরুদ্ধে কঠোর আন্দোলনের পথে হাঁটতে বাধ্য হচ্ছেন।
ইউজিসির তথ্যমতে, দেশে এখন অনুমোদিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ১১৬টি। অবশ্য এরমধ্যে কয়েকটিতে এখনো শিক্ষা কার্যক্রম চালু হয়নি। আরও কয়েকটিতে স্থগিত রয়েছে। দেশে সবশেষ অনুমোদিত বিশ্ববিদ্যালয় গ্রামীণ ইউনিভার্সিটি। সবশেষ ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে (ইউআইইউ) গত ২৬ এপ্রিল শিক্ষার্থীরা তীব্র আন্দোলন শুরু করেন। আন্দোলনের মুখে বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য, সব ডিন, বিভাগীয় প্রধান ও ইনস্টিটিউটের পরিচালকরা পদত্যাগ করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এতে প্রায় ১৫ হাজার শিক্ষার্থীর বিশ্ববিদ্যালয়টিতে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।
ছাত্রীদের হোস্টেলের সমস্যার সমাধানসহ সাত দফা দাবি নিয়ে গত সপ্তাহে আন্দোলনে নেমেছেন বেসরকারি বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজির (বিইউএফটি) শিক্ষার্থীরা। গত ২৬ এপ্রিল থেকে তারা কয়েক দফা বিক্ষোভ করেছেন। এরপর দাবি-দাওয়া আদায়ে এক সপ্তাহের আলটিমেটাম দিয়েছেন। বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে দাবি না মানলে কঠোর কর্মসূচিতে নামার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
স্থায়ী ক্যাম্পাস, ট্রাস্টি বোর্ড চেয়ারম্যানের পদত্যাগসহ ৯ দফা দাবিতে টানা এক সপ্তাহ আন্দোলন করেন প্রাইমএশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বিক্ষোভ, ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন, ইউজিসি অভিমুখে লং মার্চসহ বিভিন্ন কর্মসূচির পর ৭ জানুয়ারি সচিবালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেন বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা। সেসময় পুলিশ তাদের ওপর লাঠিপেটা করে। এতে বেশ কয়েকজন আহত হন। তাদের সেই দাবি-দাওয়া পূরণ হয়নি। ফলে এখনো ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। যেকোনো সময় আবার তারা আন্দোলনে নামতে পারেন বলে জানিয়েছেন।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যানসহ সব সদস্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে আসছিলেন। ট্রাস্টিদের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতি ও নানান অজুহাতে চাকরিচ্যুত করার অসংখ্য অভিযোগ তোলেন তারা।
আন্দোলনের মুখে গত বছরের ২৩ আগস্ট বোর্ড অব ট্রাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান ফাতিনাজ ফিরোজ পদত্যাগ করেন। এ কারণে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়টি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। যদিও পরে স্বপদে বহাল হন ফাতিনাজ ফিরোজ। দ্রুত খুলে দেওয়া হয় বিশ্ববিদ্যালয়ও।
শ্রেণিকক্ষ সংকট, পরিবহন ও ক্যাফেটেরিয়ার সমস্যা সমাধান এবং জুলাই আন্দোলন চলাকালীন হামলায় অংশ নেওয়া ছাত্রদের বিচারসহ ১৩ দফা দাবিতে গত ১৭ ও ১৮ ফেব্রুয়ারি বিক্ষোভ করেন আন্তর্জাতিক ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রামের (আইআইইউসি) শিক্ষার্থীরা।
উপাচার্য অধ্যাপক ইমরান রহমানের পদত্যাগসহ পাঁচ দফা দাবিতে চলতি বছরের ১ জানুয়ারি আন্দোলনে নামেন ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশের (ইউল্যাব) শিক্ষার্থীরা। টানা তিনদিন আন্দোলনের পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা আব্দুল হান্নান মাসউদের মধ্যস্থতায় ছয়টি শর্তে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন স্থগিত করেন। তার মধ্যে অন্যতম তদন্ত কমিটি গঠন ও উপাচার্যকে অপসারণ। কিন্তু এখনো বিশ্ববিদ্যালয়টিতে উপাচার্য হিসেবে ইমরান রহমানই দায়িত্ব পালন করছেন। এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে।
শিক্ষার্থীদের টানা তিনদিনের আন্দোলনের মুখে গত ৬ ডিসেম্বর পদত্যাগ করতে বাধ্য হন চট্টগ্রামের বেসরকারি প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ। প্রায় চার মাস উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যশূন্য থাকার পর গত ১৬ এপ্রিল নতুন উপাচার্য নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তবে সেখানে স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনায় নানামুখী সমস্যা বিদ্যমান। এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে।
অভ্যুত্থানের পরপরই টানা কয়েকদিন বিক্ষোভ-সমাবেশ করেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও। সেসময় তারা উপাচার্যকে অপসারণ, রাজনৈতিক কারণে চাকরি হারানো শিক্ষকদের স্বপদে বহাল, প্রক্টরিয়াল বডি পুনর্গঠনসহ ১৪ দফা দাবি জানান। পরে উপাচার্য পদত্যাগ করলে পরিস্থিতি শান্ত হয়। তবে নিজস্ব পরিবহন চালুসহ শিক্ষার্থীদের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট অনেক দাবি উপেক্ষিত। এ নিয়ে শিক্ষার্থীরা পুনরায় সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছেন বলে জানিয়েছেন সেসময় আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া শিক্ষার্থীরা।
তুচ্ছ ঘটনার জেরে গত ১৯ এপ্রিল প্রাইমএশিয়া বিশ্ববিদ্যায়ের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম পারভেজকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়। পারভেজকে নিজেদের কর্মী এবং হত্যকাণ্ডে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই নেতা জড়িত দাবি করে আন্দোলনে নামে ছাত্রদল।


আপনার মতামত লিখুন :
এই বিভাগের আরও