প্রভাত রিপোর্ট: বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, এখন যারা সংস্কারের তালিম দিচ্ছে, গত ১৭ বছর তাদের কাউকে রাস্তায় দেখা যায়নি। শেখ হাসিনা পালানোর পরবর্তী বাংলাদেশ কেমন হবে, সেই সংস্কারের কথা মাথায় রেখেই বিএনপি ৩১ দফা দাবি দিয়েছিল। মঙ্গলবার (১৩ মে) জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম মিলনায়তনে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরীর দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত স্মরণসভায় এ কথাগুলো বলেন আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। ভাসানী জনশক্তি পার্টি ও ভাসানী অনুসারী পরিষদ এ সভার আয়োজন করে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, গণতান্ত্রিক ধারা ফেরাতে গেলে যে কাজগুলো শুরু হওয়া প্রয়োজন, সেগুলোর কিছুই হচ্ছে না। তিনি মনে করেন, ভিন্নরূপে নানা ভঙ্গিতে পুরোনো কথা বলার চেষ্টা করা হচ্ছে। সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে মানুষের কাছে এর আগে কেউ যায়নি। বিএনপি সেটা করছে। কারণ, যেকোনো সংস্কারের জন্য মানুষের সমর্থন দরকার। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ছাড়া কোনো সংস্কার সম্ভব নয়।
জাফরুল্লাহ চৌধুরী বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে মৌলিক কাজগুলো করে গেছেন উল্লেখ করে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, তিনি কোনো প্রচার–প্রচারণায় ছিলেন না। প্রচারণা থাকলে তিনি বিশ্বব্যাপী একজন ভালো মানুষ হতে পারতেন।
শেখ হাসিনার পতনের পেছনে অনেকে কৃতিত্ব নিচ্ছে উল্লেখ করে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতনের পেছনে জাফরুল্লাহ চৌধুরীর অবদান অনস্বীকার্য। তিনি ৪২ দলকে ঐক্যবদ্ধ করে যুগপৎ আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন। এটাই হাসিনার পতনের মূল কারণ ছিল। অথচ তাঁকে কেউ স্মরণ করছে না।
শেখ হাসিনা মানুষের মাঝে কিছু স্বৈরাচারী মনোভাব রেখে গেছেন উল্লেখ করে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, সবাই সংস্কারের প্রস্তাব দিয়েছে। কিন্তু কোথায় ঐকমত্য হয়েছে, সরকার সেটা জানাচ্ছে না। তারা কেন জানাচ্ছে না? কেউ যদি মনে করে হাসিনার মালিকানা অন্য কারও হাতে গেছে, দেশে কী হবে, সেটার বিষয়ে তারা সিদ্ধান্ত নেবে—এই দায়িত্ব কাউকে দেয়া হয়নি। সিদ্ধান্ত নেওয়ার একমাত্র মালিক দেশের জনগণ।
দেশকে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের অংশ করা হচ্ছে অভিযোগ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, একটি অনির্বাচিত সরকার মানবিক করিডর দেয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এখানে কোনো রাজনৈতিক দলের মতামত নেই, মানুষের মতামত নেই। এর পেছনে কারা জড়িত, সেটা তাঁরা জানতে চান। স্থিতিশীলতা ছাড়া বিনিয়োগ সম্ভব নয় উল্লেখ করে আমীর খসরু বলেন, যত দিন নির্বাচিত সরকার না আসবে তত দিনে বাংলাদেশে কোনো বিনিয়োগ আসবে না। বিনিয়োগ সম্মেলনে বিনিয়োগকারীদের শেষ প্রশ্ন ছিল, দেশের নির্বাচন কবে হবে? কারও চেহারা দেখে দেশি-বিদেশি কোনো বিনিয়োগকারী দেশে বিনিয়োগ করবেন না।
বাংলাদেশের মানুষ গণতন্ত্রের জন্য ঐক্যবদ্ধ আছে উল্লেখ করে আমীর খসরু আরও বলেন, একটি ছোট গোষ্ঠী তাদের স্বার্থে প্রভাব সৃষ্টির চেষ্টা করছে। কিন্তু নতুন বাংলাদেশ সৃষ্টির আকাঙ্ক্ষা কীভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়, সেটাই এখন বড় প্রশ্ন। নির্বাচনের মাধ্যমেই কেবল গণতান্ত্রিক ধারা ফিরিয়ে আনতে হবে, এটাই শেষ কথা।
এখন পর্যন্ত কী সংস্কার হয়েছে প্রশ্ন তুলে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, পুলিশ এখনো আগের মতো ধান্দাবাজ রয়ে গেছে। সিভিল সার্ভিস এবং পুলিশে আগের লোক রয়ে গেছে। কাউকে বদলানো যায়নি। তিনি বলেন, সরকারের অবস্থা হলো, তাদের চাপ দিলেই দাবি মেনে নেয়। জাতীয় সংগীত গাইতে বাধা দেওয়া হয়েছে; কিন্তু সরকার কি কোনো পদক্ষেপ নিয়েছে? মাঝে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য কমেছে; কিন্তু এখন আবার সেটা বাড়ছে।অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জাফরুল্লাহ চৌধুরীর স্ত্রী ও নারী নেত্রী শিরীন হক।
গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা আবু ইউসুফ সেলিমের সঞ্চালনায় স্মরণসভায় গণতন্ত্র মঞ্চের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ ও ভাসানী জনশক্তি পার্টির কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তব্য দেন। স্মরণসভার সভাপতিত্ব করেন ভাসানী জনশক্তি পার্টির চেয়ারম্যান শেখ রফিকুল ইসলাম বাবুল।