প্রভাত সংবাদদাতা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ : ফারাক্কার বিরূপ প্রভাবে গত ৪৯ বছর সময় ধরে প্রত্যক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের চরাঞ্চলের মানুষ তথা উত্তরাঞ্চলসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল। ফারাক্কা দিন দিন গ্রাস করছে এ অঞ্চলের মানুষের অধিকার। সর্বস্ব কেড়ে নেয়া মানুষের সংখ্যা যেমন বাড়ছে, তেমনি নিঃস্ব মানুষগুলোর করুণ আর্তনাদ প্রতিনিয়তই সৃষ্টি করছে শোকাবহ পরিবেশ। ফারাক্কা বাঁধের প্রভাবে প্রতি বছরই কমে যাচ্ছে দেশের অন্যতম নদী পদ্মার পানি সমতলের উচ্চতা। যার বিরূপ প্রভাব পড়ছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের অন্য নদীগুলোর ওপর। ফলে বর্ষা মৌসুমে যেমন বাড়ছে ভাঙনের প্রবণতা, তেমনি শুষ্ক মৌসুমে ক্রমেই পানির অভাবে মরুকরণের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ পদ্মার অববাহিকায় থাকা বিস্তীর্ণ অঞ্চল।
ভারত থেকে বয়ে আসা গঙ্গা নদী বাংলাদেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় ঢুকে পদ্মা নাম ধারণ করেছে। এই নদীকে কেন্দ্রে করেই একসময় আবর্তিত হতো এই অঞ্চলের মানুষের জীবন-জীবিকা। তবে সময়ের ব্যবধানে এই নদী এখন এই এলাকার মানুষের দুর্ভোগের কারণ। ১৯৭৫ সালে ভারত এই নদীর উজানে ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণের পর বদলে যেতে থাকে এই নদীর গতিপথ। আবার বর্ষা মৌসুমে ছেড়ে দেওয়া পানিতে একদিকে যেমন নদীগর্ভে বিলীন হয় গ্রামের পর গ্রাম, তেমনি শুষ্ক মৌসুমে মাইলের পর মাইল পরিণত হয় ধূ-ধূ বালুচরে।
জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার চর এলাকার বাসিন্দা আতিকুর রহমান বলেন, একযুগ আগে পদ্মা নদীতে মাছ ধরে সংসার চলতো এলাকার হাজারো মানুষের। কিন্তু এখন আর তা হয় না। কারণ বছরের অর্ধেকের বেশি সময় নদীতে পানি থাকে না। এতে আমরা মাছ ধরতে পারি না। আর বন্যার সময় ফারাক্কার বাঁধ খুলে দেয় ভারতীয় সরকার, তখন এই এলাকায় বন্য হয়ে যায়। ভাঙন দেখা যায়। এতে প্রতিবছরর আমাদের বাড়ি ঘর ভাঙতে হয়। এ সমস্যার জন্য দায়ী ফারাক্কা বাঁধ।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী এসএম আহসান হাবীব বলেন, ভূমি ও পানি সমতলের সর্বনিম্ন স্তরের যে ব্যবধান সেটা প্রতিবছরই বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর বৃদ্ধির কারণে চাঁপাইনবাবগঞ্জের নদীর পাড়ের যে স্থিতিশীলতা তা হ্রাস পাচ্ছে। সেইসঙ্গে প্রতিবছরই নদী ভাঙনের তীব্রতা বাড়ছেই। গঙ্গা চুক্তি অনুযায়ী শুষ্ক মৌসুমে যে পরিমাণ পানি দেওয়ার কথা, গত ২৫ বছরের বেশিরভাগ সময়ই সেই পরিমাণ পানি দেয়নি ভারত। তিনি আরও জানান, পানির যে প্রবাহ সেটার সঙ্গে বৃষ্টিপাতের সরাসরি সর্ম্পক রয়েছে। গত ২৫ বছরে চাঁপাইনবাবগঞ্জে বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে এবং বৃষ্টিপাত হ্রাস পাওয়ার কারণে তাপমাত্রা মরুকরণের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এ বছর চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহী অঞ্চলে ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রি তাপমাত্রা ওঠানামা করছে এবং পরিবেশ ও জীব বৈচিত্র্যের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। এ অবস্থায় প্রতিবেশী দেশ ভারতের সঙ্গে পানিচুক্তির সঠিক বাস্তবায়নে সরকারকে অগ্রণী ভূমিকা নিতে হবে।