মো. বাবুল শেখ , পিরোজপুর : পিরোজপুরের নাজিরপুরে রাস্তার দুই পাশের সরকারি গাছ কাটার অভিযোগ উঠেছে বিএনপির এক নেতার বিরুদ্ধে। ঘটনাটি ঘটেছে নাজিরপুর উপজেলার শ্রীরামকাঠী ইউনিয়নের কালিবাড়ী টু শ্রীরামকাঠী রাস্তার ভীমকাঠি নামক স্থানে। খবর পেয়ে রবিবার (১৭মে )রাতে নাজিরপুর উপজেলার নির্বাহী অফিসার মোঃ ফজলে রাব্বী কাটা গাছগুলো জব্দ করেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কালিবাড়ী সদর থেকে শ্রীরামকাঠী বাজার পর্যন্ত প্রায় ৫০ বছরের পুরনো রাস্তার দুইপাশের লাগানো গাছগুলো ছায়া দিয়ে আসছিল। এ রাস্তায় প্রতিদিন হাজারও মানুষের যাতায়াত। রবিবার (১৭মে) সন্ধ্যায় নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে পিরোজপুর জেলার পৌর মৎস্যজীবী দলের সভাপতি তৌহিদুল ইসলাম এসব গাছ কাটেন। পরে গাছগুলো রাতের আঁধারে সরিয়ে নেয়ার পাঁয়তারা করলে স্থানীয় জনতা গাছগুলো জব্দ করে নাজিরপুর উপজেলা প্রশাসনকে খবর দেন। স্থানীয় একাধিক লোক বলেন, রবিবার পিরোজপুর জেলা মৎস্যজীবী দলের সভাপতি তৌহিদুল ইসলাম ও তার সহযোগীদের যোগসাজশে হঠাৎ করে রাস্তার ধারে গাছ কাটতে দেখলে তাদের সন্দেহ হয়। পরবর্তীতে প্রথমে সাংবাদিকদের পরে পুলিশ প্রশাসন এবং সর্বশেষ উপজেলা প্রশাসনকে তারা খবর দেয়।
নাম প্রকাশে অনিচছূক স্থানীয় বাসিন্দা মুদি দোকানদার বলেন, আমরা বাধা দিতে গেলে উপর মহলের নির্দেশেই গাছগুলো কাটা হচ্ছে এবং তাদের কাছে সরকারি ভাবে গাছ কাটার টেন্ডার অনুযায়ী ওয়ার্ক অর্ডার আছে বলে তারা জানায়। পরে আমরা চলে এসেছি।
ওই ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোঃ আলী আকবর বলেন, বিভিন্ন মাধ্যমে গাছ কাটার ব্যাপারে প্রতিরোধ করা হয়েছে, কিন্তু তারা মানেননি। তারা বলেন গাছগুলো টেন্ডারের মাধ্যমে টেন্ডার হয়েছে এবং আমাদের কাছে ওয়ার্ক অর্ডার আছে তাই ওপরের নির্দেশেই গাছ কাটা হচ্ছে।
পরিবেশবাদী সংগঠন সবুজ আন্দোলনের নাজিরপুর উপজেলা সভাপতি সঞ্জীব কুমার রায় বলেন, সরকারি বিধি না মেনে গাছ কাটা সম্পূর্ণ অবৈধ এবং পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। এ ঘটনার সাথে যারা জড়িত তাদের তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।
পিরোজপুর পৌর জেলা মৎস্যজীবী দলের সভাপতি তৌহিদুল ইসলাম বলেন, আমার বিরুদ্ধে অবৈধভাবে যে গাছ কাটার অভিযোগ উঠেছে সেটি সঠিক নয়। কারণ এই গাছ কাটার টেন্ডার বাগেরহাট বন বিভাগ থেকে হয়েছে সেই টেন্ডারের ওয়ার্ক অর্ডার আমি পেয়েছি সেই অনুযায়ী গাছগুলো কেটেছি । সেই ওয়ার্ক অর্ডার আমি উপজেলা প্রশাসনের ইউএন ও স্যার কে দেখিয়েছি এবং নাজিরপুর উপজেলা বনবিভাগ কর্মকর্তাকে দেখিয়েছি ।আমি এই গাছ গুলো গত মাসের ১৫ তারিখে কেটেছিলাম। কিন্তু আমি দলীয় কার্যে ব্যাস্ত থাকায় গাছ গুলি নিতে পারিনি।এই গাছ কাটায় আমি তো আমার কোন অপরাধ দেখি না।
নাজিরপুর উপজেলা বন কর্মকর্তা মোঃ আবু সাঈদ বলেন,সরকারি যত গাছ আছে তা সরকারিভাবে টেন্ডার হলে উপজেলা বা জেলা বন কর্মকর্তাকে আগে অবহিত করতে হয় এবং বন কর্মকর্তার উপস্থিত থেকে গাছ কাটতে হয়। বন বিভাগের অনাপত্তিপত্র নিতে হবে ও বন বিভাগের ওই সব গাছের নম্বর অনুযায়ী চিহ্ন নির্ধারণ করে নিতে হয় । কিন্তু এই ঠিকাদার আমাদের কোন নলেজে না দিয়ে এ কাজ করেছেন।এসব নিয়ম না মানলে সেটি অবৈধ হবে। কিন্তু নাজিরপুর টু শ্রীরামকাঠী রাস্তার গাছ কাটার বিষয়ে বন বিভাগের কাছে কেউ অনুমতি বা অনাপত্তিপত্র নেইনি। তার মানে এটা সম্পূর্ণ অবৈধ।
নাজিরপুর উপজেলার নির্বাহী অফিসার মোঃ ফজলে রাব্বী বলেন, সরকারী রাস্তার ধারে অবৈধ ভাবে গাছ কাটা হচ্ছে সেটা আমি জানার পর পরই গাছগুলো জব্দ করি এবং নাজিরপুর উপজেলা পরিষদের ভিতরে রাখা হয়েছে। এ ব্যাপারে তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে ।