প্রভাত স্পোর্টস: নিলামের দিনে তাঁরা ছিলেন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। নাম ডাকার সঙ্গে সঙ্গে উঠেছে হাত, বয়ে গেছে কোটি কোটি রুপির ঝড়। কিন্তু মাঠে খেলা শুরু হতেই সেই ঝড় উধাও, যা দেখা গেছে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি। জার্সির গায়ে নাম আছে, আছে কোটি কোটি রুপি লেখা প্রাইস ট্যাগ। কিন্তু নিলামে হিট হলেও মাঠে তাঁরা সুপার ফ্লপ।
দামি খেলোয়াড় মানেই যে রানবৃষ্টি আর উইকেটের নিশ্চয়তা নয়, সেটাই যেন আরও একবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল এবারের আইপিএল। নাম আর দাম থাকা সেই ফ্লপ তারকাদেরই খবর জানুন।
ঋষভ পন্ত— ২৭ কোটি: দিল্লি তাঁকে ধরে রাখতে চাইলেও বাজারে দাম কত বুঝতে চেয়েছিলেন ঋষভ পন্ত। নাম লেখান নিলামে। সেই নিলামে তাঁকে নিয়ে দলগুলোর কাড়াকাড়ি এত বেশি হয়েছে যে আইপিএল রেকর্ড ২৭ কোটি রুপি দাম পেয়ে গেছেন পন্ত, যা নিজেও ভাবেননি জানিয়েছেন পরে। পন্তকে যে প্রত্যাশা থেকে লক্ষ্ণৌ এত টাকা দিয়ে কিনেছিল, সেটি একপ্রকার ‘জলে’ই গেল বলা যায়। বাঁহাতি এ ব্যাটসম্যান ১৩ ইনিংসে রান করতে পেরেছেন মাত্র ১৫১, গড় ১৩.৭২! ভারত জাতীয় দলের সবচেয়ে বিস্ফোরক ব্যাটসম্যানদের একজন বিবেচনা করা হয় পন্তকে, অথচ লক্ষ্ণৌর হয়ে তাঁর স্ট্রাইক রেট মাত্র ১০৭.০৯। এর মধ্যে ধর্মশালায় পাঞ্জাব কিংসের বিপক্ষে ১৭ বলে ১৮ রানের ইনিংস নিয়ে তো ক্ষোভও ঝাড়তে দেখা গেছে লক্ষ্ণৌ সমর্থকদের।
পন্ত শুধু ব্যাটিং আর উইকেটকিপিংই করেননি, লক্ষ্ণৌর অধিনায়কত্ব করেছেন। এই জায়গায়ও লক্ষ্ণৌ ঠকেছে বলা যায়। টুর্নামেন্টের শুরুটা ভালো করলেও গুরুত্বপূর্ণ সময়ে খেই হারিয়েছে পন্তের দল। ৯ থেকে ১২—এই চার ম্যাচে টানা হেরে প্লে–অফের দৌড় থেকে আগেভাগেই ছিটকে পড়েছে লক্ষ্ণৌ। আইপিএল ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি দাম পেয়ে যেমন রেকর্ড গড়েছেন, তেমনি লক্ষ্ণৌ সমর্থকদের সবচেয়ে বেশি হতাশও করেছেন পন্ত।
ভেঙ্কটেশ আইয়ার—২৩.৭৫ কোটি: পন্ত ভালো দাম পাবেন—এমনটা নিলামের আগেই ধারণা করা যাচ্ছিল। কিন্তু ভেঙ্কটেশ আইয়ারও ২০ কোটি রুপির বেশিতে বিক্রি হবেন, এমন কিছু অপ্রত্যাশিত ছিল সবার কাছেই। কলকাতা নাইট রাইডার্স ভেঙ্কটেশকে কেনে ২৩ কোটি ৭৫ লাখ রুপিতে। কিন্তু মৌসুমের শেষবেলায় লাভ–ক্ষতির হিসাবে লসই দেখছে কলকাতা। ডানহাতি এ ব্যাটসম্যান ১১ ম্যাচের ৭টিতে ব্যাট করেছেন। ২০.২৮ গড় আর ১৩৯.২১ স্ট্রাইক রেটে মোট রান ১৪২। এর মধ্যে দুটি ইনিংস ৬০ ও ৪৫ রানের। বাকি পাঁচটিতে ৬, ৩, ৭, ১৪, ৭।
ইডেন গার্ডেনে গুজরাট টাইটানসের বিপক্ষে রানতাড়ার ইনিংসে ১৪ রান করতে খেলেছিলেন ১৯ বল, যা তাঁর টি–টোয়েন্টি ক্যারিয়ারেরই সবচেয়ে ধীর। সে দিনের ম্যাচে কলকাতার গ্যালারি তাঁর প্রাইস ট্যাগকে রীতিমতো উপহাস করে গেছে।
হাইনরিখ ক্লাসেন—২৩ কোটি: নিলামের আগে ক্লাসেনকে নিয়ে বড় জুয়াই খেলেছিল সানরাইজার্স হায়দরাবাদ। দক্ষিণ আফ্রিকার এই ব্যাটসম্যানকে ২৩ কোটি রুপি দিয়ে ধরে রাখে দলটি, যা এবারের আসরে বিদেশিদের মধ্যে সর্বোচ্চ। রানসংখ্যায় তাকালে খুব খারাপ করেননি ক্লাসেন। ১২ ইনিংসে ৩৮২ রান, স্ট্রাইক রেট ১৫৭.২০। তবে যে ক্রিকেটারের প্রাইস ট্যাগ ২৩ কোটি রুপি, তাঁর ম্যাচের ফল নির্ধারণে যে ভূমিকা থাকার দরকার ছিল, সেটা হায়দরাবাদ পায়নি। মাত্র একটি ফিফটি করা ক্লাসেন দলের দরকারি সময়ে একবারও হাল ধরতে পারেননি। ভালো শুরু করেছেন, কিন্তু দলের জয়ে প্রভাবক হয়ে উঠতে পারেননি। হায়দরাবাদও প্রথম আট ম্যাচের ৬টিতেই হেরে আগেভাগে লিগ পর্ব থেকে বিদায় অনেকটাই নিশ্চিত করে ফেলে। সামনের বছর হায়দরাবাদ তাঁকে ধরে রাখলেও দাম যে এবারের মতো পাবেন না, তা একপ্রকার নিশ্চিতই।
ধ্রুব জুরেল—১৪ কোটিমাত্র দুই বছরের আইপিএল অভিজ্ঞতা, ভারত জাতীয় দলেও নিয়মিত কেউ নন—এমন একজন ক্রিকেটারের জন্য ১৪ কোটি রুপি বেশ বড়ই। আর এই দামেই ধ্রুব জুরেলকে কিনেছিল রাজস্থান রয়্যালস। জস বাটলারকে ছেড়ে দেওয়ার পর দলটি ফিনিশারের দায়িত্বও দেয় এই ডানহাতি ব্যাটসম্যানকে। রানের দিক থেকে খুব খারাপও করেননি—১৩ ইনিংসে দুটি ফিফটিসহ ১৫৬.৩৩ স্ট্রাইক রেটে ৩৩৩ রান।
ধ্রুব জুরেল ১৪ কোটি : তবে জুরেলের বেশির ভাগ রানই এসেছে গুরুত্বহীন ম্যাচ বা চাপহীন পরিস্থিতিতে। দলের যখন দরকার হয়েছে, তখন জুরেল উল্টো দলের বিপদ বাড়িয়েছেন। এবারের আইপিএলে রাজস্থান রয়্যালস যে বাজে খেলেছে (১৩ ম্যাচ শেষে পয়েন্ট তালিকায় নবম), তার অন্যতম কারণ জুরেলের সঠিক সময়ে ফিনিশার হয়ে উঠতে না পারা। আর যা–ই হোক, দাম তো ১৪ কোটি!ধ্রুব জুরেলকে ফিনিশার হিসেবে দরকারি সময়ে পায়নি রাজস্থান।বিসিসিআই
মোহাম্মদ শামি—১০ কোটি: মেগা নিলামে শামির দাম উঠেছে ১০ কোটি রুপি। প্রত্যাশা ছিল নিজের অভিজ্ঞতা দিয়ে নতুন বলে হায়দরাবাদের মূল অস্ত্র হয়ে উঠবেন। কিন্তু চরম হতাশই করেছেন শামি। এখন পর্যন্ত খেলা ৯ ম্যাচে নিতে পেরেছেন মাত্র ৬ উইকেট, বোলিং গড় ৫৬.১৬। সবচেয়ে বাজে দিক ইকোনমি। ওভারপ্রতি রান দিয়েছেন ১১.২৩ করে। এমন বাজে ফর্মের কারণে হায়দরাবাদের সর্বশেষ তিন ম্যাচে একাদশেও জায়গা মেলেনি শামির।