প্রভাত রিপোর্ট: রাজধানীর রামপুরা, মালিবাগ, পল্টন ও গুলিস্তান স্টেডিয়াম মার্কেট ঘুরে দেখা যায়, ফ্রিজের ক্রেতা রয়েছে, তবে অন্য বছরের চেয়ে কম। এছাড়া টানা কয়েকদিন বৈরী আবহাওয়ার কারণে বিক্রিতে ভাটা পড়েছে। বৈশ্বিক ব্র্যান্ডের বড় ও দামি ফ্রিজের বেচাকেনা কমেছে। বিপরীতে বেড়েছে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত ও সাশ্রয়ী দামের ফ্রিজের বিক্রি। সাধারণত এসব ফ্রিজ নিম্নমধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির গ্রাহকরা বেশি কিনছেন। এবার ঈদে শহরের চেয়ে গ্রামগঞ্জে ফ্রিজের বিক্রি বেশি।
কোম্পানিগুলো জানিয়েছে, দেশের অভ্যন্তরে প্রতি বছর ২৫–৩০ লাখ ইউনিট ফ্রিজ বিক্রি হয়। সাধারণত এ বাজার বছরে ৫ থেকে ১০ শতাংশ হারে বাড়ে। আর স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে এখন বিদেশেও ফ্রিজ রপ্তানি হচ্ছে। বাংলাদেশ থেকে এখন অর্ধশতাধিক দেশে ফ্রিজ রপ্তানি হয়। এর মধ্যে ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কাসহ দক্ষিণ এশিয়ার কয়েকটি দেশ এবং আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপ আছে।
আগে দেশে বিদেশি নানা ব্র্যান্ডের বড় বাজার থাকলেও এখন ভালো করছে দেশি কোম্পানিগুলো। ওয়ালটন, ভিশন, যমুনা, মিনিস্টার ও ওরিয়ন দেশে ফ্রিজ তৈরি করছে। এসব কোম্পানিসহ বর্তমানে ফ্রিজের বাজারে ১৩টির মতো দেশীয় ব্র্যান্ড রয়েছে। দেশে উৎপাদিত ও সংযোজিত বিদেশি ব্র্যান্ডের ফ্রিজের মধ্যে রয়েছে সিঙ্গার, স্যামসাং, কনকা, এলজি, ওয়ার্লপুল, হায়ার, হিটাচি, হাইসেন্স প্রভৃতি। আর শার্প, প্যানাসনিক, সিমেন্স প্রভৃতি বিদেশি ব্র্যান্ডের ফ্রিজও দেশের বাজারে বিক্রি হয়।
ফ্রিজ উৎপাদন ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বর্তমানে বছরে যত সংখ্যক ফ্রিজ বিক্রি হয়, তার মধ্যে দেশি কোম্পানির হিস্যা ৮০–৯০ শতাংশের কাছাকাছি। তার মানে, দেশীয় প্রতিষ্ঠানের উৎপাদিত ফ্রিজ দিয়েই অভ্যন্তরীণ চাহিদার বড় অংশ মিটছে। আবার দেশীয় চাহিদা মিটিয়ে ফ্রিজ রপ্তানিও হচ্ছে। কিছু বিক্রেতা বলছেন, আবহাওয়ার সঙ্গে মূল্যস্ফীতি, সুদহার বৃদ্ধির কারণে বিক্রি কম। ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে, যে কারণে ফ্রিজের দাম বাড়ায় বিক্রিতে পড়েছে নেতিবাচক প্রভাব। মূল্যস্ফীতির কারণে গ্রাহকের ক্রয়ক্ষমতাও কমেছে। এরপরেও নানান ধরনের অফার ও মূল্যছাড় দিয়ে বিক্রি চাঙা রাখার চেষ্টা করছে কোম্পানিগুলো। বিশেষ করে দেশি প্রতিটি কোম্পানি অফার ও ছাড় দিচ্ছে। যে কারণে দেশি ব্র্যান্ডের ফ্রিজের বিক্রি বেড়েছে। আকর্ষণীয় অফারের পাশাপাশি গ্রাহকদের পছন্দের ফ্রিজ কিনতে দিচ্ছে কিস্তির সুবিধা।
প্রতি বছর কোরবানির ঈদের মৌসুমে ফ্রিজের বিক্রি বাড়ে সাধারণ সময়ের চেয়ে কয়েক গুণ। সারা বছর যত ফ্রিজ বিক্রি হয়, তার দুই-তৃতীয়াংশ বিক্রি হয় দুই ঈদে। এবছর বিদেশি ব্র্যান্ডের চেয়ে দেশি ব্র্যান্ডের ফ্রিজের চাহিদা-বিক্রি বেশি। শহরের চেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে গ্রামাঞ্চলে। বিক্রিতে এগিয়ে ডিপ ফ্রিজ।
রামপুরা ওয়ালটন প্লাজার ডেপুটি ম্যানেজার মোহাম্মদ ফরহাদ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘সাধারণ সময় যত সংখ্যক ফ্রিজ বিক্রি হয়, এখন তার চেয়ে তিন-চারগুণ বেড়েছে। তবে ঈদ হিসেবে বিক্রি আরও বেশি হওয়া দরকার ছিল।’ তিনি বলেন, ‘এবার ডিপ ফ্রিজের চাহিদা বেশি। যেগুলো ২৮ থেকে ৪৫ হাজার টাকার মধ্যে ১২৫ থেকে ৩০০ লিটারের। এ ধরনের ফ্রিজ যত বিক্রি হচ্ছে, বড় ফ্রিজ সেভাবে বিক্রি হচ্ছে না।’
বেসরকারি চাকরিজীবী ফুয়াদ হাসান তার স্ত্রীকে নিয়ে রামপুরা-হাজিপাড়া এলাকার কয়েকটি ইলেকট্রনিকস পণ্যের শোরুমে ঘুরছেন ফ্রিজ কেনার জন্য। বাসায় আগে থেকেই থাকা সাধারণ ফ্রিজের সঙ্গে ঈদে আরেকটি ডিপ ফ্রিজ বা ফ্রিজার কিনবেন তিনি। কয়েকটি শোরুম ঘুরে অবশেষে তিনি ভিশন ইলেকট্রনিকস থেকে একটি ফ্রিজ নিলেন। তিনি বলেন, ‘প্রতি বছর গ্রামে কোরবানি করলেও এবার যাচ্ছি না। আগের ফ্রিজে মাংস রাখার জায়গা হবে না ভেবে নতুন একটি ফ্রিজ কিনতে হলো।’
ভিশনের শোরুমে বিক্রি ভালো হচ্ছে জানিয়ে হাজিপাড়া শোরুমের ম্যানেজার আল মামুন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ফ্রিজ কিনলে ওমরা প্যাকেজ ও ফুলঝুড়ি দুটি প্যাকেজ দিয়ে আমাদের বিক্রি অনেক বেড়েছে।’
ট্রান্সকম ইলেকট্রনিকসের ম্যানেজার রানা গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ফ্রিজের দাম আগের চেয়ে কিছুটা বেড়েছে। মানুষের হাতে বেশি বেশি খরচ করার মতো টাকাও নেই। যে কারণে গত বছরের চেয়ে বিক্রি কম মনে হচ্ছে। যদিও ঈদের মধ্যে শেষ চার-পাঁচদিন বিক্রি খুব ভালো হয়, সে অপেক্ষায় আছি।’
বাটারফ্লাই গ্রুপের ব্রাঞ্চ ম্যনেজার খলিলুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘পিক সিজন হলেও কয়েকদিন ওয়েদার খুব খারাপ যাচ্ছে। অনেকে ঘর থেকে কেনাকাটার জন্য বের হচ্ছেন না। সে কারণে বিক্রি কিছুটা খারাপ যাচ্ছে।’
এবার গ্রামগঞ্জ কেন্দ্র করে সারাদেশে ফ্রিজের বিক্রি প্রায় ৩০ শতাংশ বেড়েছে জানিয়ে আরএফএল গ্রুপের ভিশন রেফ্রিজারেটরের হেড অব মার্কেটিং মোহিত চক্রবর্তী গণমাধ্যমকে বলেন, ‘গত ঈদের চেয়ে এবার ভিশন ফ্রিজের বিক্রি ৩০ শতাংশ বেড়েছে। আমরা দেখছি, শহরের চেয়ে জেলা ও উপজেলায় বিক্রি অনেক বেশি হচ্ছে এবার।’
ট্রান্সকম ইলেকট্রনিকসের ক্যাটাগরি প্রধান সৈকত আজাদ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘গত বছরের তুলনায় এবার বাজার কিছুটা সংকুচিত হয়েছে। বিশেষ করে বৈশ্বিক ব্র্যান্ডের বড় ও দামি ফ্রিজের বেচাকেনা কমেছে। বিপরীতে বেড়েছে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত ও সাশ্রয়ী দামের ফ্রিজের বিক্রি। সাধারণত এসব ফ্রিজ নিম্নমধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির গ্রাহক বেশি কিনছেন।’