• মঙ্গলবার, ০৩ জুন ২০২৫, ০৫:৫১ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম

মেরিলিন মনরো জন্মদিন উপলক্ষে জানা গেলো জানা-অজানা কিছু তথ্য

প্রভাত রিপোর্ট / ৪ বার
আপডেট : রবিবার, ১ জুন, ২০২৫

প্রভাত বিনোদন: তাঁকে নিয়ে কৌতূহলের শেষ নেই। সৌন্দর্য আর অভিনয়দক্ষতা তো ছিলই, যৌনতার প্রতীক হিসেবেও সারা দুনিয়ায় সম্ভবত সবচেয়ে বেশি চর্চা হয়েছে তাঁকে নিয়েই। ১ জুন, মেরিলিন মনরোর ৯৯তম জন্মদিন। ১৯২৬ সালের আজকের দিনেই লস অ্যাঞ্জেলেসে জন্ম হয় তাঁর। এই তারকার জন্মদিন উপলক্ষে জেনে নেয়া যাক জানা-অজানা কিছু তথ্য।
নোর্মা জিন মর্টেনসন: মেরিলিনের জন্মগত নাম ছিল নোর্মা জিন মর্টেনসন। শৈশব কেটেছে বিভিন্ন অনাথ আশ্রম, সরকারি হোম ও পারিবারিক বন্ধুদের আশ্রয়ে। পিতৃপরিচয়হীন নোর্মার মা ছিলেন মানসিক রোগী। সিঙ্গেল মাদার হয়ে মেয়েকে বড় করার মতো অবস্থায় তিনি ছিলেন না।
পঞ্চদশী নোর্মা তখন থাকছিলেন পারিবারিক বন্ধু গ্রেস গোডার্ডদের পরিবারে। কিন্তু গোডার্ড পরিবারকে হঠাৎ ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ায় চলে যেতে হলো। নোর্মাকে তাঁরা নিয়ে যেতে পারলেন না। নোর্মার সামনে তখন দুটি উপায়। হয় অনাথ আশ্রমে ফিরে যাও, নয়তো বিয়ে করো। ষোলো বছরে তাঁর বিয়ে হলো জেমস ডুগার্টির সঙ্গে। বিয়ের দুই বছর পরে তাঁর স্বামীকে জাহাজের চাকরিতে চলে যেতে হলো প্রশান্ত মহাসাগরে। মেরিলিন চলে গেলেন ক্যালিফোর্নিয়া, তাঁর শ্বশুর–শাশুড়ির সঙ্গে থাকতে।
প্রথম ফটোশুট: ক্যালিফোর্নিয়ায় একটি ফ্যাক্টরিতে কাজ নিলেন মেরিলিন। সেখানে একদিন ফটোশুট করতে এলেন ডেভিড কোনোভার। মার্কিন বিমানবাহিনী থেকে তাঁকে পাঠানো হয়েছিল। কর্মক্ষেত্রে নারীদের মনোবল বাড়াতে নারী কর্মীদের ছবি তুলতে এসেছিলেন তিনি। তবে যে জন্য ছবি তোলা, সেই উদ্দেশে মেরিলিনের একটি ছবিও ব্যবহৃত হয়নি। কিন্তু এর ফলেই তাঁর সামনে খুলে গিয়েছিল মডেলিংয়ের দরজা। কয়েক দিনের মধ্যে তিনি চাকরি ছেড়ে কোনোভারের জন্য মডেলিং শুরু করলেন। তখন নাম নিয়েছিলেন জিন নর্ম্যান। এর মধ্যেই এল সিনেমার সুযোগ।
মেরিলিন মনরো: টোয়েনটিয়েথ সেঞ্চুরি ফক্সের সঙ্গে তাঁর চুক্তি হলো। নতুন নাম হলো ‘মেরিলিন মনরো’। প্রযোজনা সংস্থার কর্মকর্তা বেন লিয়নই বাছলেন নাম। ‘মেরিলিন’ এসেছিল ‘মেরিলিন মিলার’ থেকে। মেরিলিন মিলার ছিলেন অকালপ্রয়াত ব্রডওয়ে তারকা ‘মনরো’ পদবি বেছে নিয়েছিলেন মেরিলিন নিজেই। ওটা ছিল তাঁর মায়ের অবিবাহিত অবস্থার পদবি। পরে পর্দার নামকেই অফিশিয়াল নাম করে নিয়েছিলেন।
কিন্তু স্ত্রীর ক্যারিয়ার নিয়ে বেঁকে বসলেন স্বামী। তবে ক্যারিয়ার আর স্বামীর মধ্যে মেরিলিন বেছে নিলেন প্রথমটাই। ভেঙে গেল প্রথম বিয়ে। ব্যক্তিগত জীবনে ফাটল এলেও কাজের জায়গায় তিনি তখন মধ্যগগনে। ‘লেডিস অব দ্য কোরাস’, ‘আ টিকিট টু টোমাহক’, ‘অল অ্যাবাউট ইভ’, ‘দ্য ফায়ারবল’, ‘রাইট ক্রস’, ‘লাভ নেস্ট’, ‘লেটস মেক ইট লিগ্যাল’, ‘নায়াগ্রা’—একের পর এক হিট সিনেমা আসতে থাকল।
প্রেম, বিয়ে, কাজ: নিজের সময়ের উজ্জ্বল তারকা হলেও তাঁর পারিশ্রমিক তখনো বাড়ায়নি প্রযোজনা সংস্থা। অনেকেই তখন তাঁর থেকে বেশি পারিশ্রমিক পেতেন সেখানে। এই নিয়ে দ্বন্দ্ব চরমে উঠেছিল। মেরিলিনের ব্যক্তিগত জীবনও তখন উথালপাতাল। তখন তিনি প্রেম করছেন অভিনেতা মার্লন ব্র্যান্ডো ও নাট্যকার আর্থার মিলারের সঙ্গে। আবার মেরিলিনের জন্যই তখন ভাঙতে বসেছে বেসবল খেলোয়াড় ডি ম্যাগিয়োর সংসার। মেরিলিনকে সতর্ক করল টোয়েনটিয়েথ সেঞ্চুরি ফক্স। বলা হলো, সম্পর্ক ভেঙে ফেলতে। কিন্তু মেরিলিন সরে আসতে চাননি প্রেম থেকে। শেষ অবধি ১৯৫৪ সালে বিয়ে করেন ডি ম্যাগিয়োকে। একই সময়ে টোয়েনটিয়েথ সেঞ্চুরি ফক্সের সঙ্গে মেরিলিনের চুক্তিও আগের থেকে ভালো হয়। ছবি পিছু তাঁর পারিশ্রমিক স্থির হয় এক লাখ ডলার। কিন্তু এই বিয়ে স্থায়ী হলো মাত্র আট মাস। ১৯৫৬ সালে মেরিলিন বিয়ে করলেন নাট্যকার আর্থার মিলারকে। মিলার ছিলেন ইহুদি। তাঁকে বিয়ে করে ধর্মান্তরিত হন মেরিলিনও। ফলে মিসরে তাঁর সব ছবি নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়।
এলভিস প্রিসলির সঙ্গে প্রেম?: মেরিলিন মনরোর সঙ্গে প্রেম করতেন এলভিস প্রিসলি? মেরিলিনে নিয়ে নির্মিত ছবি ‘ব্লন্ড’ মুক্তির বিষয়টি নিয়ে জোর চর্চা শুরু হয়েছিল। ১৯৬০ সালের জুন মাস। যুক্তরাষ্ট্রের প্যারামাউন্ট স্টুডিওর সেটে এলভিস আর মেরিলিনের দেখা। তারপর? আর কিছুই কি এগোয়নি তাঁদের মধ্যে? ঘনিষ্ঠ সূত্র বলছে, তাঁদের আরও অনেকবার দেখা হয়েছে তার পরপরই, যার সাক্ষী এলভিসের এজেন্ট বাইরন। কিন্তু যেই বাইরন তারকা জুটিকে প্রকাশ্যে ডেটে যাওয়ার প্রস্তাব দেন, একেবারে নাকচ করে দেন মেরিলিন। তাঁরা একসঙ্গে বেরোলে লোক জানাজানি হতো, সংবাদমাধ্যমের পসার বাড়ত, অনেকের ভবিষ্যৎ আলো হতে পারত তাতে। কিন্তু তেমন কিছুই হলো না। প্রায় ৫০ বছর নাকি এই তথ্য নিজের মনেই চেপে রেখেছিলেন বাইরন। তারপর জানিয়ে দেন এক সংবাদ সংস্থাকে।
সেই স্কার্ট: ‘দ্য সেভেন ইয়ার ইচ’ সিনেমাটি মুক্তি পেয়েছিল ১৯৫৫ সালে। তারই একটি দৃশ্য শুধু বিখ্যাতই হয়নি, কালজয়ী হয়ে গেছে ইতিহাসের পাতায়। দৃশ্যে দেখা গিয়েছিল, আচমকা সাবওয়ের সামনের একটি ঝাঁঝরি থেকে উঠে এল দমকা হাওয়া, সেই হাওয়ায় অনেকখানি উঠে যাওয়া স্কার্টটি কোনোমতে দুই হাত দিয়ে সামলে নিচ্ছেন মেরিলিন। বিশ্বের চলচ্চিত্র ইতিহাসে মেরিলিনের সঙ্গে ঠাঁই করে তাঁর সেই স্কার্টটিও। ২০১১ সালের ১৮ জুন, একটি নিলামে এই স্কার্ট বিক্রি হয় ৪ দশমিক ৬ মিলিয়ন ডলারে।
নিলামে উচ্চমূল্য: মেরিলিন মনরোর ব্যবহার করা নানা জিনিস নানা সময় নিলাম হয়েছে। নিলামে লাখো ডলার খরচ করে যাঁরা সেই জিনিস কিনেছেন, তাঁরা যেন মেরিলিনের জন্য সর্বস্বান্ত হতেও প্রস্তুত। বছর কয়েক আগেই আয়ারল্যান্ডে মনরোর ব্যবহৃত সামগ্রীর নিলাম হয়। ১৯৪৭-এ তাঁর ব্যবহৃত লিপস্টিক, ৮টি ফিলিপ মরিস সিগারেট, একটি আয়না ও চিরুনি, চেক বই, কিছু ব্যক্তিগত চিঠি—এমন খুটিনাটি আরও কত কী ছিল সেই নিলামে।
মেরিলিন ও কেনেডি: তৃতীয় স্বামী আর্থার মিলারের সঙ্গে সম্পর্ক চুকেবুকে যাচ্ছে। নাম জড়িয়ে পড়ছে কখনো সহ-অভিনেতা-পরিচালক-প্রযোজকের সঙ্গে। কখনো হাওয়ায় উড়ছে গোপন প্রেমের গুজব। তবে সবচেয়ে চর্চিত, কেনেডির সঙ্গে সম্পর্ক! দুজনের আলাপ নাকি পার্টিতে। মোহময় এই প্রেম নিয়ে কম চর্চা হয়নি। শোনা যায়, মাঝেমধ্যে জন কেনেডি মেরিলিনের সঙ্গে ডেটিং করতেন সমুদ্রকিনারে, এক আত্মীয়ের বাড়িতে। এমন এক গোপন অভিসারে ১৯৬২ সালের মার্চে একবার কেনেডি ও মনরো পাম স্প্রিংয়ের একটি জায়গায় দেখা করেন। মনরোকে কেউ যাতে চিনতে না পারে, সে জন্য পরচুলা পরেছিলেন তিনি। অভিনেত্রীর মৃত্যুর আগে কয়েক মাস ধরে টানাপোড়েনে ছিলেন।
জীবনযাপন: সূর্যের আলো তাঁকে ছুঁতে পারত না। সূর্যের স্পর্শ থেকে দূরে থাকতেন। সব সময়ে সতর্ক থাকতেন, যাতে রোদ তাঁর গায়ে এসে না পড়ে। মনরোর বাড়ি ও গাড়িতেও তেমন ব্যবস্থা ছিল। যাতে রোদ না ঢুকতে পারে। শরীরের কোথাও যাতে এতটুকু ট্যান না পড়ে, তার জন্যই এই বিশেষ ব্যবস্থা। নিজেকে ফিট রাখতে আরও অনেক নিয়মই মেনে চলতেন অভিনেত্রী।
মনরো সবচেয়ে গুরুত্ব দিতেন ঘুম। কাজ না থাকলে শুটিংয়েও অনেক সময় ঘুমিয়ে নিতেন তিনি। বাড়িতে থাকলেও অনেক সময়ে চোখ বন্ধ করে থাকতেন। মেরিলিন মনে করতেন, ঘুম হচ্ছে নারীর সৌন্দর্যের অন্যতম চাবিকাঠি। ঘুমের ঘাটতি থাকলে তাঁর প্রভাব পড়ে ত্বকে ও শরীরে। ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে ভেবে রাতে পোশাক ছাড়া বিছানায় যেতেন তিনি। ঘুমাতে যাওয়ার আগে প্রিয় একটি সুগন্ধি সারা শরীরে মেখে নিতেন। মেরিলিনের সৌন্দর্যের আরও একটি রহস্য হলো, বরফগলা জলে স্নান করা। ঠান্ডা জল ত্বকের সজীবতা, কোমলতা বজায় রাখে। ত্বকের টান টান ভাব বজায় রাখতে এই হিমঠান্ডা জল নাকি দারুণ কার্যকরী।
নিয়ম করে শরীরচর্চা করতেন তিনি। ওজন তুলতেন। শরীরচর্চায় কোনো দিন ফাঁকি দিতেন না। যতক্ষণ না ক্লান্ত হয়ে পড়ে যাচ্ছেন, শরীরচর্চা জারি রাখতেন।
আবেদনময়ী: বড় পর্দায় ‘নগ্নতা’ তখনো ব্রাত্য হলিউডে। তখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি মেরিলিন মনরোকে। কিন্তু দারিদ্র্যের জ্বালায় ক্যামেরার সামনে নগ্ন হয়ে ফটোশুট করেছিলেন সেই মেরিলিনই। পরিচয় গোপন রেখেছিলেন। মডেলের নাম হয়েছিল ‘মোনা মনরো’। তারিখটা ছিল ২৭ মে ১৯৪৯। ক্যারিয়ারের একেবারে শুরুর দিক। টাকার অভাবে বাধ্য হয়েই নগ্ন ফটোশুট করেছিলেন মেরিলিন। জন বাউমগ্রাথ কোম্পানির ফটোগ্রাফার টম কেলিকে মাত্র দুই ঘণ্টা সময় দিয়েছিলেন মনরো। পরবর্তীকালে সেই ছবিই হয়ে ওঠে ব্যাপক আলোচিত।
১৯৫২ সালের মার্চে মুখ খোলেন মেরিলিন। তত দিনে বিখ্যাত হয়ে উঠেছেন তিনি। স্বীকার করলেন, ওই ছবি তাঁরই। যদিও জন বাউমগ্রাথ কোম্পানির কর্মকর্তারা মেরিলিনকে ওই ফটোশুট সম্পর্কে প্রকাশ্যে কিছু বলতে বারণ করেছিলেন। তাঁরা মনে করেছিলেন, এই খবর প্রকাশ্যে এলে প্রভাব পড়তে পারে মেরিলিনের ক্যারিয়ারে। কিন্তু ‘নগ্নতা’ নিয়ে মার্কিন সমাজের যাবতীয় ‘ট্যাবু’ভেঙে দেন নায়িকা। পরে অভিনেত্রীর সেই নগ্ন ছবিগুলো নিয়ে প্রদর্শনীও হয়।
শেষের বাঁশি: ১৯৪০-এর দশক দশকের শেষ থেকে পাঁচের দশক অবধিহলিউড রাজত্ব করেছিলেন মেরিলিন মনরো। ১৯৬১ সালে ভেঙে যায় তাঁর তৃতীয় বিয়ে। এদিকে ক্যারিয়ারেও শুরু হয় পড়ন্ত বেলা। ১৯৬২ সালের ৫ আগস্ট নিজের ঘরে মেরিলিন মনরোকে মৃত অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল। তাঁর রক্তের নমুনায় বিষ ছিল। আপাতভাবে তাঁর মৃত্যুকে আত্মহত্যা বলেই চিহ্নিত করা হয়েছিল। কিন্তু তাঁর মৃত্যু-রহস্য নিয়ে অনেক থিওরি আছে। এর কোনটি কতটা সত্যি, বলা মুশকিল। মেরিলিন মনরোকে নিয়ে কী আর রহস্যের শেষ আছে!


আপনার মতামত লিখুন :
এই বিভাগের আরও