আজ
|| ২রা জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ || ১৮ই আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ || ৬ই মহর্রম, ১৪৪৭ হিজরি
ঈদ মানে খুশি, ঈদ মানে আনন্দ
প্রকাশের তারিখঃ ৭ জুন, ২০২৫
-------------তাসমিয়া আলী----------
আজ ৭ জুন, ১০ জিলহজ শনিবার সারা দেশে আনন্দ-উচ্ছ্বাসে উদ্যাপিত হচ্ছে কোরবানির ঈদ। ঈদ মানে খুশি, ঈদ মানে আনন্দ। পাড়া-প্রতিবেশী, আত্মীয়স্বজনের মেলবন্ধনে আরও একবার মুখর হয়ে উঠেছে বাঙালির চিরায়ত পারিবারিক, সামাজিক শিকড়-বাকড়। চারদিকেই উৎসবের ঘ্রাণ। পবিত্র ঈদুল আজহা তাই আত্মত্যাগে ডুব দেয়ার এবং মনের ভেতরের সুপ্ত পশুত্বকে বিসর্জনের দিন। এর শিক্ষা হলো মনের পশুকে জবেহ করে নিজেকে খোদায়ি রঙে সাজিয়ে তোলা। কাজী নজরুল ইসলামের ভাষায়, ‘মনের মাঝে পশু যে তোর আজকে তারে কর্ জবেহ,/ পুল্সেরাতের পুল হতে পার নিয়ে রাখ্ আগাম রসিদ্।’এরই মধ্যে পবিত্র হজের আয়োজন, আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়েছে। সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্য এবং এর বাইরে অনেক দেশেই গতকাল শুক্রবার ঈদ উদ্যাপিত হয়েছে। ঈদ মানে খুশি, ঈদ মানে আনন্দ। মুসলমানদের জীবনে বছরে দুটি খুশির দিনের একটি এই ঈদুল আজহা। এই দিনে কি ধনী কি নির্ধন—সবাই যার যার সাধ্যমতো নতুন, নয়তো পরিষ্কার কাপড় পরে, গায়ে আতর-সুগন্ধি মেখে মসজিদ কিংবা ঈদগাহে এক কাতারে দাঁড়াবেন—এটাই রেওয়াজ।
ঈদ এলে যেভাবে ধনী–গরিব, বাদশা–ফকির ভেদাভেদ ভুলে যাই, সারা বছরই সেই ভেদাভেদের দেয়ালকে উপড়ে ফেলতে হবে। ঈদ যেন মানবতার সমাবেশস্থল। আল্লাহর প্রতি গভীর আনুগত্য ও সর্বোচ্চ ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর ঈদুল আজহা। এ উৎসবের সঙ্গে মিশে আছে চরম ত্যাগের দৃষ্টান্ত। আল্লাহর নির্দেশে নিজ পুত্র হজরত ইসমাইল (আ.)–কে কোরবানি দিতে উদ্যত হয়েছিলেন হজরত ইব্রাহিম (আ.)। আল্লাহর প্রতি অগাধ ভালোবাসা, অবিচল আনুগত্য ও অসীম আত্মত্যাগের যে সুমহান দৃষ্টান্ত তিনি স্থাপন করেছেন, তা ইতিহাসে অতুলনীয়।
এমনি দিনে কোরবানি দেন পুত্রে হজরত ইব্রাহীম, তেমনি তোরা খোদার রাহে আয় রে হবি কে শহীদ্।।’ এই পঙ্ক্তিমালা কবি কাজী নজরুল ইসলামের। ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদকে জড়িয়ে থাকা বা উদ্যাপনের এমন অনেক গান ও কবিতা আছে এই কবির। সাম্য, মানবতা ও ত্যাগের তাকিদ নিয়ে এসেছে পবিত্র ঈদুল আজহা। ঘরে ঘরে আঁচ লেগেছে সেই উৎসবের, সমস্ত পশুত্বকে আরও একবার বিসর্জনের উপলক্ষ এসেছে দেশে।
ঈদুল আজহা মনে করিয়ে দেয় সব ধরনের অন্যায়, জুলুম, অবিচার, মিথ্যা ও অধর্মের বিরুদ্ধে সাহসের সঙ্গে গর্জে ওঠার, মানবিকতার। কবির ভাষায়, ‘গলায় গলায় মিল্ রে সবে ভুলে যা ঘরোয়া বিবাদ,/ মিলনের ঈদগাহ্ গড়ে তোল্ প্রাণ দিয়ে তার তোল্ বুনিয়াদ।’ সুরা হজের ৩৭ নম্বর আয়াতে আল্লাহ্ বলেছেন, তোমাদের জবাই করা পশুর রক্ত-মাংস আল্লাহর কাছে পৌঁছায় না। তিনি দেখেন তোমাদের তাকওয়া। আর এই তাকওয়া হচ্ছে আত্মশুদ্ধি, নিষ্কৃতি লাভ করা, ভয় করা। অর্থাৎ আল্লাহকে ভয় এবং তাঁর সন্তুষ্টি লাভের আশায় অন্যায় ও আল্লাহর অপছন্দের কাজ থেকে নিজেকে দূরে রাখা।
নামাজ শেষে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টিলাভের আশায় সামর্থ্য অনুযায়ী দেয়া হয় পছন্দের পশু কোরবানি। বাংলাদেশে সাধারণত গরু বা ছাগল কোরবানি দেয়া হয়। তবে মধ্যপ্রাচ্যসহ অন্যান্য দেশে দুম্বা, ভেড়া ও উট কোরবানি দেয়া হয়ে থাকে। আমাদের এ অঞ্চলে শতবছর বা তারও আগে সাধারণত বকরি বা ছাগল কোরবানি দেওয়া হতো। এ জন্য এই ঈদের পরিচিতি ছিল ‘বকরি ঈদ’ বা ‘বকরিদ’। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর এ অঞ্চলে গরু কোরবানি দেয়া বাড়তে থাকে।
একসঙ্গে ৩৫ হাজার মুসল্লির ঈদের নামাজ আদায়ের জন্য প্রস্তুত করা হয় জাতীয় ঈদগাহ ময়দান। রাজধানীর এই বড় ঈদ জামাতের ব্যবস্থাপনায় রয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। সকাল সাড়ে সাতটায় জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকার বাইরে কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ময়দান ও দিনাজপুরের গোর-এ-শহীদ ময়দানে দেশের বড় জামাতগুলো হয়ে থাকে। দূরদূরান্ত থেকে, ভিন্ন জেলা থেকেও মুসল্লিরা শরিক হন এসব ঈদের জামাতের মহামিলনে।
আজ ঈদের দিন রাজধানীতে এক পশলা বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। ঢাকা বিভাগের কিছু স্থানেও সামান্য বৃষ্টি হতে পারে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশীদ জানালেন, চট্টগ্রাম, সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগের কিছু স্থানে বৃষ্টি হতে পারে। তবে এর পরিমাণ খুব বেশি হবে না। রাজশাহী, খুলনা ও রংপুর বিভাগে বৃষ্টির সম্ভাবনা অনেকটাই কম।
প্রিয় পাঠক, এ লেখা যখন পড়ছেন, ততক্ষণে অনেকেরই কোরবানি দেয়া হয়ে গেছে। ধর্মীয় বিধানমতে, যিনি কোরবানি করবেন, তিনি পাবেন এক ভাগ মাংস। বাকি দুই ভাগ আত্মীয়স্বজন ও গরিব-দুঃখীর মধ্যে বিলিয়ে দেওয়াই নিয়ম। সমাজে ন্যায় ও সাম্য প্রতিষ্ঠার জন্যই এমন বিধান।
পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। গতকাল সন্ধ্যা সাতটায় জাতির উদ্দেশে ভাষণে ঈদুল আজহার শিক্ষা গ্রহণ করে ত্যাগের মহিমায় উজ্জীবিত হয়ে দেশ ও দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
ঈদুল আজহা উপলক্ষে টেলিভিশন ও রেডিওতে সম্প্রচারিত হচ্ছে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা। সংবাদপত্র আয়োজন করেছে বিশেষ সংখ্যার। ঈদের ছুটিতে পাঠক যেন তথ্য ও বিশ্লেষণ থেকে বঞ্চিত না হন, এ জন্য ছাপা সংবাদপত্র বন্ধ থাকলেও চালু থাকছে অনলাইনগুলো।
Copyright © 2025 প্রভাত. All rights reserved.