• শনিবার, ১৪ জুন ২০২৫, ০৮:৫৩ অপরাহ্ন
শিরোনাম
ট্রেনের যাত্রীর মধ্যে বিরোধ থামাতে গিয়ে মারধরের শিকার রেল স্টেশন মাস্টার মহাসড়কে ভ্রাম্যমান আদালত: ২৯টি মামলায় ৭৪.১০০টাকা জরিমানা আগেই ইরানে ঢুকে কীভাবে হামলার ক্ষেত্র গড়ে তুলেছিল ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ : ওয়াশিংটন পোস্ট আইসিসি বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ শিরোপা জিতলো দক্ষিণ আফ্রিকা মোংলা বন্দরে বিশ্বের বিখ্যাত হেভি লিফট ভ্যাসেল নওগাঁ বাইকার্স ক্লাবের ৩ বছর পূর্তি উপলক্ষে র‌্যালি ও গেট টুগেদার মার্কিন, ব্রিটিশ ও ফরাসি সামরিক ঘাঁটি লক্ষ্য করে হামলার হুমকি ইরানের পুলিশের কাছে থাকবে না মারণাস্ত্র : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা নির্বাচন নিয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত মানুষের জন্য স্বস্তির বার্তা : জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় কেঁপে ওঠে তেল আবিব

ডিসেম্বরে নির্বাচনের দাবিতে অনড় বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো

প্রভাত রিপোর্ট / ১৫ বার
আপডেট : বুধবার, ১১ জুন, ২০২৫

প্রভাত রিপোর্ট: এখনো রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন ফিরে পাওয়া বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, নিবন্ধন না পাওয়া জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এবং আরও কিছু ছোট দল এপ্রিল মাসেই নির্বাচন অনুষ্ঠানের পক্ষে মত দিয়েছে। তবে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনুস আগামী বছরের এপ্রিল মাসে ১৩তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে ঘোষণা দেয়ার পর, বিএনপিসহ অধিকাংশ রাজনৈতিক দল এ সময়কে ‘নির্বাচনের জন্য অনুপযুক্ত’ বলে দাবি করেছে। দলগুলোর মতে, চলতি বছরের ডিসেম্বরেই নির্বাচন আয়োজনই হবে সবচেয়ে যৌক্তিক সিদ্ধান্ত।
অন্যদিকে, এখনো রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন ফিরে না পাওয়া বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, নিবন্ধন না পাওয়া জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এবং আরও কিছু ছোট দল এপ্রিল মাসেই নির্বাচন অনুষ্ঠানের পক্ষে মত দিয়েছে।
বিএনপি ও তাদের সমমনা প্রায় ৩০টি দল যুক্তি দিয়েছে, রাজনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় প্রেক্ষাপট বিবেচনায় এপ্রিল মাস নির্বাচন আয়োজনের উপযুক্ত সময় নয়। তারা বলছে, এই সময়ের আগে রয়েছে পাবলিক পরীক্ষা ও রমজান, আর এপ্রিল মাসে বিরূপ আবহাওয়ার কারণেও নির্বাচন আয়োজন কঠিন হতে পারে। সব মিলিয়ে ওই সময়ে নির্বাচন করলে অংশগ্রহণমূলক পরিবেশ তৈরি হবে না বলে মনে করছে দলগুলো।
এদিকে জামায়াতে ইসলামি ও এনসিপি বলেছে, জুলাই সনদ প্রণয়ন, জুলাই-আগস্টের গণহত্যার দৃশ্যমান বিচার, প্রয়োজনীয় সংস্কার এবং প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটাধিকার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। এসব কাজ সম্পন্ন করতে অন্তত এপ্রিল পর্যন্ত সময় প্রয়োজন বলেও তারা মনে করে।
বিএনপি ও তাদের সমমনা দলগুলোর মতে, এখনো প্রধান উপদেষ্টার সামনে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে আরও উপযুক্ত একটি নির্বাচনের সময় নির্ধারণের সুযোগ রয়েছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বাংলাদেশের রাজনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় বাস্তবতা বিবেচনায় জাতীয় নির্বাচনের জন্য এপ্রিল মাস উপযুক্ত নয়।’ তিনি বলেন, বিএনপি চায় দেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের সম্মিলিত মতামতের ভিত্তিতে নির্বাচন ডিসেম্বরের আগেই অনুষ্ঠিত হোক।
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রধান উপদেষ্টার ঘোষিত নির্বাচনের সময় নিয়ে বিএনপি এখন পর্যন্ত আপত্তি জানিয়ে আসছে। ‘আশা করা যায়, বর্তমান সরকার বিএনপির এই যৌক্তিক বিষয়ে বিবেচনা করবে।’
বিএনপি কি এপ্রিলেই নির্বাচন আয়োজনের সিদ্ধান্তে অনড়, যদিও অধিকাংশ দল ডিসেম্বরেই ভোট চায়—এ প্রশ্নের জবাবে বিএনপি-র স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘এপ্রিলে নির্বাচন নিয়ে বিএনপিসহ সমমনা দলগুলোর অবস্থান কি হবে, এটি সময় বলে দেবে। তবে সামনে আরো সময় আছে, আলোচনার পথ বন্ধ নয়।’
তিনি বলেন, ‘আলোচনার মাধ্যমেই এটির সমাধান হবে বলে বিএনপি মনে করে। তবে বিএনপি নানাভাবে সরকারকে বুঝানোর চেষ্টা করছে, এপ্রিল কোনোভাবেই জাতীয় নির্বাচনের জন্য উপযুক্ত সময় নয়।’
সালাহউদ্দিন আরও বলেন, ‘ডিসেম্বরে নির্বাচন দেওয়ার যৌক্তিক দাবি সরকার যদি না মেনে নেয়, তাহলে বিএনপি কী করবে—তা সময়ই বলে দেবে। তবে বিএনপি গণতান্ত্রিক পন্থাতেই এগোবে। এই যৌক্তিক দাবি আদায়ের জন্য যেসব কর্মসূচি গণতান্ত্রিকভাবে দেওয়া প্রয়োজন, সেগুলোই দেওয়া হবে। গণতন্ত্রের পথ সবার জন্যই সবসময় খোলা।’
বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশানের কার্যালয়ে মঙ্গলবার (১০ জুন) সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য এপ্রিল উপযুক্ত সময় নয়।’
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ বলেছেন, জাতি আশা করে, প্রধান উপদেষ্টা ঘোষিত সময়সীমার মধ্যেই একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।
জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, এপ্রিলে নির্বাচন করতে হলে এ বছরের জুলাইয়ের মধ্যে ঐকমত্যের ভিত্তিতে ঘোষণাপত্র ও জুলাই সনদ দিতে হবে।
বিএনপির দাবিকে যুক্তিসংগত বলে মনে করেন দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ইতিহাস ও রাজনীতি নিয়ে গবেষণা করা আলতাফ পারভেজ। তিনি বলেন, ‘নিঃসন্দেহে এপ্রিল মাস এমন একটি জাতীয় নির্বাচনের জন্য উপযুক্ত সময় নয়। বাংলাদেশে নির্বাচন সাধারণত শীতকালে, ডিসেম্বর থেকে মার্চের মধ্যে হয়ে থাকে। সেই হিসেবে এপ্রিলের নির্বাচন শুধু অস্বাভাবিকই নয়, দেশীয় মানদণ্ডে কিছুটা বিলম্বিতও।’
আলতাফ বলেছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের নির্বাচনের সময়সূচি তুলনা করা যথাযথ নয়। তার ভাষ্যমতে, ‘ভারত একটি বিশাল দেশ, যেখানে সব জায়গায় এক ধরনের ঋতু থাকে না এবং সেখানে নির্বাচন শেষ হতে অনেক সময় লাগে। অথচ আমাদের দেশে একদিনেই ভোটগ্রহণ শেষ হয়।’ এই গবেষক আরও বলেন, ‘আমার ধারণা, গুরুত্বপূর্ণ অংশীদারদের মধ্যে পর্দার আড়ালে আলোচনা চললে নির্বাচনের সময়সূচি এখনও পরিবর্তনের সম্ভাবনা রয়েছে। লন্ডনে তারেক রহমান ও ড. ইউনূসের বৈঠকে এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনার সুযোগ থাকতে পারে।’
আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকায় বর্তমানে রাজনৈতিক ময়দানে বিএনপির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠেছে এনসিপি ও জামায়াতে ইসলামী। গত কয়েক মাস ধরে এই দুই দলের সঙ্গে বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে বাকযুদ্ধ প্রায় নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে প্রধান উপদেষ্টার এপ্রিলে নির্বাচনের ঘোষণা অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষকের কাছে মনে হয়েছে ‘চাপের মুখে বিএনপির দাবি প্রত্যাখ্যান’ করার মতো।
তাদের মতে, প্রধান উপদেষ্টা বিএনপি ও সেনাপ্রধানের সময়সূচির প্রস্তাব না মেনে জামায়াতের পরামর্শ গ্রহণ করে এটা দেখিয়ে দিতে চেয়েছেন, তিনি কোনো পক্ষের চাপের কাছে মাথা নত করবেন না। তবে একাংশ বিশ্লেষক মনে করছেন, এপ্রিল মাসে নির্বাচনের সময় নির্ধারণের পেছনে প্রধান উপদেষ্টা তেমন কোনো স্পষ্ট বা গ্রহণযোগ্য যুক্তি এখনো তুলে ধরতে পারেননি। তবে প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণার পর সরকারের একজন উপদেষ্টা তার ব্যাখ্যায় বলেছেন, বিচার ও সংস্কারের কার্যক্রমকে একটি গ্রহণযোগ্য পর্যায়ে পৌঁছানো, প্রবাসী ও তরুণ ভোটারদের অন্তর্ভুক্ত করা এবং নির্বাচনের প্রস্তুতি যথাযথভাবে সম্পন্ন করার জন্যই এপ্রিলকে নির্বাচনকাল হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও জানান, আগামী বছর রোজার ঈদের পর নির্বাচনের সময় দেওয়ায় সবচেয়ে বেশি সংখ্যক ভোটারকে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় যুক্ত করা সম্ভব হবে. সেই বিবেচনাতেই এপ্রিল মাস নির্বাচন আয়োজনের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টার ঘোষিত সময়কে উপযুক্ত মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, ‘বিএনপিসহ কিছু রাজনৈতিক দল ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চেয়েছিল। চার মাস আগে-পরে নির্বাচন দেওয়ায় তেমন কোনো সমস্যা তো দেখি না।’
১৯৯৬ সালের জুনে নির্বাচন হয়েছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘বিএনপি আবহাওয়ার কথা বলছে, এটা একটা খোঁড়া যুক্তি। শতভাগ ভোটার উপস্থিতি এ দেশে আকাশ পরিষ্কার থাকলেও হয় না। এআর রমজান মাসে প্রচারণা করা যায় না বলে তাদের যেই যুক্তি, সেটাও আমি যুক্তিযুক্ত মনে করি না।’


আপনার মতামত লিখুন :
এই বিভাগের আরও