আজ
|| ১৬ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ || ২রা আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ || ১৯শে জিলহজ, ১৪৪৬ হিজরি
ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলে নিহত ১০
প্রকাশের তারিখঃ ১৫ জুন, ২০২৫
প্রভাত ডেস্ক: ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলে নিহত বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০ জনে। দেশটির স্থানীয় কর্মকর্তারা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। খবর আল জাজিরার। ইসরায়েলি পুলিশ জানিয়েছে, তেল আবিবের দক্ষিণে অবস্থিত বাত ইয়াম শহরে ৬ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে দুই শিশুও রয়েছে। এছাড়া আরও সাতজন এখনও নিখোঁজ রয়েছেন। ধ্বংসস্তূপের মধ্যে উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছেন জরুরি পরিষেবার সদস্যরা। জরুরি পরিষেবা এবং স্থানীয় হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, উত্তর আরব শহর তামরাতে হামলায় আরও চারজন নিহত হয়েছেন। চিকিৎসক এবং গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুসারে, হাইফা এবং তেল আবিবসহ ইসরায়েলজুড়ে বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে ইসরায়েল। এতে কমপক্ষে ১০ জন নিহত হয়েছে।
ইসরায়েলি বাহিনী ইরানজুড়ে বেসামরিক ও জ্বালানি অবকাঠামোতে বোমা হামলা চালানোর পর ইরান একযোগে ইসরায়েলের বিভিন্ন শহরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। তারা ইরান সরকারের পারমাণবিক অস্ত্র প্রকল্পের সঙ্গে সম্পর্কিত স্থানগুলিকে লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে। শনিবার (১৪ জুন) রাতের হামলায় পুরো ইসরায়েলে সাইরেন বেজে ওঠে। হাইফা এবং তেল আবিবসহ বেশ কিছু শহর লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে ইরান।
এদিকে ইরানি গণমাধ্যম জানিয়েছে, গত দুই দিনে ইসরায়েলি হামলায় কমপক্ষে ৮০ জন নিহত এবং ৮০০ জন আহত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে ২০ জন শিশুও রয়েছে। ইরানের রাষ্ট্রীয় টিভি বলছে, ‘ট্রু প্রমিজ ৩’ অভিযানের দ্বিতীয় ধাপে ১০০টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়েছে ইসরায়েলে।
ইসরায়েলি গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, হাইফা এবং কিরিয়াত এলাকায় বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। এসব ক্ষেপণাস্ত্র মাটিতে আঘাত করেছে নাকি বাধা দেওয়া হয়েছে তা এখনো স্পষ্ট নয়।
ইসরায়েলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি: ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েল ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। দেশটির গুরুত্বপূর্ণ বন্দরনগরী হাইফা এবং তেল আবিবের নিকটবর্তী বাত ইয়ামেও বহু ভবন বিধ্বস্ত হয়েছে। বহু হতাহতের খবরও পাওয়া যাচ্ছে। বেইসানের কাছে উত্তরে ড্রোন উড়তে দেখা গেছে। ইসরায়েলের অন্তত চারটি স্থানে সাংবাদিকদের সরাসরি তথ্য সংগ্রহ করতে বাধা দিয়েছে সেনাবাহিনী।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা জানিয়েছে, ইরানের হামলায় ইসরায়েলের বাত ইয়াম শহরের কয়েক ডজন ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মেয়র জানিয়েছেন, ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনো অনেকে আটকে পড়ে আছেন। বাত ইয়ামে এখন পর্যন্ত ৬ জন নিহত এবং ৩৫ জন নিখোঁজের তথ্য নিশ্চিত করেছে ইসরায়েল। সংঘর্ষের প্রথম রাতের (গত শুক্রবার রাত) এবং ইসরায়েলের ওপর ইরানের প্রথম প্রতিশোধমূলক হামলার চেয়ে অনেক বেশি ক্ষতিক্ষতি অনুমান করা হচ্ছে। বিশেষ করে হাইফার মতো স্পর্শকাতর এলাকায় হামলাগুলো বেশ মারাত্মক। এই বন্দরনগরীতে বেশ কয়েকটি জ্বালানি শোধনাগার রয়েছে। ফলে বোঝা যাচ্ছে, ইসরায়েল যদি বেসামরিক ও জ্বালানি অবকাঠামোতে আঘাত হানে, তাহলে ইরানেরও একইভাবে প্রত্যাঘাত করার সক্ষমতা রয়েছে।
আজারবাইজানে ৩০ সামরিক কর্মী নিহ: ইরানের পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশের উত্তর-পশ্চিমে শনিবার ইসরায়েলি বিমান হামলায় ৩১ জন নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৩০ জন সামরিক কর্মী ও একজন ইরানি রেড ক্রিসেন্টের সদস্য রয়েছেন। এ তথ্য জানিয়েছেন ওই প্রদেশের গভর্নর বাহরাম সারমাস্ত। তিনি জানান, হামলায় এখন পর্যন্ত ৫৫ জন আহত হয়েছে। খবর-বিবিসি। ইরানের আধা-সরকারি সংবাদ সংস্থা তাসনিম জানিয়েছে, শুক্রবার ভোরে শুরু হওয়া এই হামলায় ১৯টি ভিন্ন স্থানে ৫৫ জন আহত হয়েছেন। প্রাদেশিক রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ সরবরাহ ও পরিবহন কেন্দ্র তাবরিজ বিমানবন্দরে ঘন কালো ধোঁয়া উড়তে দেখা গেছে। ইরানি গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, কাছাকাছি শহীদ ফাকৌরি সামরিক বিমানঘাঁটি এবং সংলগ্ন রেলওয়ে নেটওয়ার্কের কিছু অংশে হামলায় ক্ষতি হয়েছে। এদিকে ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন জানিয়েছে, তেহরানের একটি ভবনে ইসরায়েলি হামলায় ২০ জন শিশুসহ ৬০ জন নিহত হয়েছেন। এখনও পর্যন্ত হতাহতের মোট সংখ্যা প্রকাশ করেনি ইরান।
ইরানি রেড ক্রিসেন্ট জানিয়েছে, পশ্চিম আজারবাইজান প্রদেশের উত্তর-পশ্চিমে হামলায় একটি অ্যাম্বুলেন্সে দু’জন নিহত হয়েছেন। জাতিসংঘে নিযুক্ত ইরানের রাষ্ট্রদূত শনিবার জানিয়েছিলেন, ইসরায়েলি হামলায় ৭৮ জন নিহত ও ৩২০ জনেরও বেশি আহত হয়েছে।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রীর হুঁশিয়ারি: ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ ইরানকে হুঁশিয়ার করে বলেছেন, তাঁদের পারমাণবিক সক্ষমতা ও অস্ত্রব্যবস্থা ধ্বংস করে দেওয়া হবে।’ ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো এ তথ্য জানিয়েছে। খবর আল জাজিরার।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে ইঙ্গিত করে কাৎজ বলেন, ‘ইরানের স্বৈরশাসক নিজের শাসন টিকিয়ে রাখতে তেহরানকে বৈরুত বানিয়ে ফেলেছেন এবং তেহরানের জনগণকে জিম্মি করে রেখেছেন।’ এদিকে রবিবার তৃতীয় দিনের মতো ইরানে বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। এর জবাবে ইরানও ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে পাল্টা হামলা চালাচ্ছে। ইরানের হামলায় ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলীয় শহর হাইফার একটি তেল শোধনাগার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তেল শোধনাগারটি পরিচালনাকারী ইসরায়েলি প্রতিষ্ঠান ‘বাজান’ এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। প্রতিষ্ঠানটির বরাতে ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম এই তথ্য দিয়েছে।
প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, ইরানের রাতভর হামলায় তেল শোধনাগার কমপ্লেক্সের ভেতরে পাইপলাইন ও সঞ্চালন লাইনের কিছু নির্দিষ্ট জায়গায় ক্ষতি হয়েছে। তেল শোধনাগারটি এখনো চালু আছে। তবে কিছু ইউনিট ও স্থাপনা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ক্ষতির প্রভাব মূল্যায়ন করা হচ্ছে।
এই খবর এমন একসময় এল, যখন ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, ইরানি বাহিনী রাতভর ইসরায়েলের দিকে প্রায় ৮০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে। এগুলোর মধ্যে ৪০টি পড়েছে ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলে। এই অঞ্চলেই হাইফা অবস্থিত। খবর আল জাজিরার।
ইরানের মধ্যাঞ্চলীয় শহর ইসফাহানে ইসরায়েলি বাহিনী দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি স্থাপনা লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে। ইসনা সংবাদ সংস্থার বরাতে ইরানের উপ প্রাদেশিক গভর্নর আকবর সালেহি বলেছেন, ‘ কিছুক্ষণ আগে ইসফাহানে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি স্থাপনা লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কেউ হতাহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। তিনি আরও জানান, ‘বিশেষজ্ঞ দলগুলো বর্তমানে সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি যাচাই করছে। এর আগে, ইসরায়েলি বাহিনী শিরাজ শহরে বৈদ্যুতিক সরঞ্জামের কারখানায় হামলা চালায়। এ সময় সেখান থেকে ঘন কালো ধোঁয়া উড়তে দেখা যায়। খবর আল জাজিরার। ইরানের হামলায় ইসরায়েলের কেন্দ্রীয় শহর রেহোভতে অবস্থিত গবেষণাধর্মী বিশ্ববিদ্যালয় উইজম্যান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্সেও ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, প্রতিষ্ঠানটির কয়েকটি স্থাপনা নষ্ট হয়েছে। ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম ওয়াইনেট-এর খবরে বলা হয়েছে, এই হামলায় কেউ হতাহত হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলেছে, ক্যাম্পাসের কয়েকটি ভবনে হামলা হয়েছে। খবর আল জাজিরার
Copyright © 2025 প্রভাত. All rights reserved.