আজ
|| ১৭ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ || ৩রা আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ || ২০শে জিলহজ, ১৪৪৬ হিজরি
ইরান-ইসরায়েল সংঘাতে বিশ্ববাজারে বেড়েছে জ্বালানি তেলের দাম
প্রকাশের তারিখঃ ১৬ জুন, ২০২৫
প্রভাত অর্থনীতি: ইরানের-ইসরায়েলের সংঘাত শুরু হওয়ার পর বিশ্ববাজারে তেলের দাম বেড়েই চলেছে। সোমবার (১৬ জুন) সকালেও সেই ধারা অব্যাহত আছে। এমনকি দিনের শুরুতে তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি চার ডলার পর্যন্ত বেড়ে গিয়েছিল। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, আজ ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ব্যারেলপ্রতি ১ দশমিক ১২ ডলার বা ১ দশমিক ৫ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৫ দশমিক ৩৫ ডলার। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট (ডব্লিউটিআই) তেলের দাম বেড়েছে ১ দশমিক ১০ ডলার বা ১ দশমিক ৫ শতাংশ—দাম বেড়ে হয়েছে ৭৪ দশমিক ৮ ডলার। গতকাল শনিবারও তেলের দাম ৩ শতাংশ বেড়েছে।
ইরানের পরমাণু ও ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনায় ইসরায়েলের বিমান হামলার পর শুক্রবার বিশ্ববাজারে তেলের দাম একলাফে ১৩ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যায়। সেই সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। বাস্তবতা হলো, ২০২২ সালের মার্চ মাসের পর গত শুক্রবার এক দিনে তেলের দাম সবচেয়ে বেশি বেড়েছে, অর্থাৎ এর মধ্যে তেলের দাম এক দিনে আর কখনোই এতটা বাড়েনি। এ ছাড়া গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের অপরিশোধিত তেলের দাম বেড়েছে প্রায় ১৩ শতাংশ।
চতুর্থ দিনে গড়াল ইরান ইসরায়েলের সংঘাত। ইসরায়েলের হামলায় ইরানে এখন পর্যন্ত অন্তত ২২৪ জন নিহত হয়েছে। আর ইসরায়েলে ইরানের হামলায় নিহত হয়েছে অন্তত ১৩ জন। এ অবস্থায় ইরান হরমুজ প্রণালি বন্ধ করার কথা ভাবছে বলে জানিয়েছেন দেশটির একজন জ্যেষ্ঠ সেনা কর্মকর্তা। গোল্ডম্যান স্যাকস বলছে, বিশ্বের মোট তেলের প্রায় ২০ শতাংশ এই প্রণালিপথ দিয়ে পরিবাহিত হয়। প্রণালি বন্ধ হয়ে গেলে তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ১০০ ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের এনার্জি ইনফরমেশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (ইআইএ) জানিয়েছে, ইরান বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রাকৃতিক গ্যাস মজুতকারী দেশ। এ ছাড়া ইরান বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের মজুতকারী দেশ। ফলে দীর্ঘদিন ধরেই ইরানের জ্বালানি অবকাঠামোগুলোকে নিশানায় রেখেছে ইসরায়েল। শুধু যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের মিত্রদের চাপের কারণে এতদিন ইসরায়েল এই স্থাপনাগুলোতে হামলা চালায়নি। যুক্তরাষ্ট্র ভালো করেই জানে, ইরানের জ্বালানি স্থাপনাগুলো ধ্বংস হলে সারা বিশ্বের জ্বালানি তেলের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাবে এবং বিশ্ব অর্থনীতিই হুমকির মুখে পড়বে।
যদিও অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন, ইরানের পক্ষে এই প্রণালি পুরোপুরি বন্ধ করা কঠিন। বাহরাইনে যুক্তরাষ্ট্রের পঞ্চম নৌবহর থাকায় ইরানের পক্ষে হরমুজ প্রণালি বন্ধ করা তেমন একটা সহজ হবে না বলে মনে করছেন আরবিসি ক্যাপিটাল মার্কেটসের হেলিমা ক্রফট। তিনি অবশ্য সতর্ক— ইরান ট্যাংকারে হামলা চালাতে পারে, এমনকি প্রণালিতে মাইনও পেতে রাখতে পারে।
এ ছাড়া হরমুজ প্রণালি বন্ধ হলে বিশ্বজুড়ে জাহাজ চলাচলে বিঘ্ন ঘটবে। ফলে আমদানি-রপ্তানির সময় বেড়ে যাবে, বেড়ে যাবে খরচ। ফলে বাংলাদেশের মতো রপ্তানিনির্ভর অর্থনীতির জন্য তা বিপজ্জনক হতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। ক্রেতাদের কাছে সময়মতো পণ্য সরবরাহ করা না গেলে চুক্তি বাতিলের ঝুঁকিও আছে।
ইসরায়েল-ইরান যুদ্ধ পরিস্থিতি এমন সময় তৈরি হলো, যখন বিশ্ববাজার এমনিতেই নানা অনিশ্চয়তায় জর্জরিত। সবচেয়ে বড় অনিশ্চয়তা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কনীতি নিয়ে। যুক্তরাষ্ট্র আমদানিতে উচ্চহারে শুল্ক বসানোর হুমকি দেওয়ায় ইতোমধ্যে বিশ্ববাণিজ্য বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বিনিয়োগকারীরা আস্থা হারাচ্ছেন। এতে ভোক্তা ব্যয় ও ব্যবসার খরচ বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি বিশ্বজুড়ে অর্থনীতির গতি মন্থর হয়ে পড়েছে।
Copyright © 2025 প্রভাত. All rights reserved.