• শনিবার, ১২ জুলাই ২০২৫, ১২:২১ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম
ব্যবসায়ীকে হত্যা, ২ নেতাকে আজীবন বহিষ্কার করলো যুবদল সব হত্যাকাণ্ড ও ধর্ষণের বিচার দাবিতে ঢাবিতে ছাত্র ফেডারেশনের মশাল মিছিল পুরান ঢাকায় প্রকাশ্যে ব্যবসায়ীকে হত্যা: প্রতিবাদে উত্তাল ঢাবি রাজধানীতে ব্যবসায়ীকে নির্মমভাবে হত্যা, চট্টগ্রামে বিক্ষোভ ঢাকায় ব্যবসায়ীকে নৃশংস হত্যার প্রতিবাদে রাবিতে বিক্ষোভ ঢাকায় ব্যবসায়ীকে হত্যার প্রতিবাদে ইবিতে বিক্ষোভ মিটফোর্ডে শতাধিক লোকের সামনে ভাঙারি ব্যবসায়ীকে হত্যা এসএসসিতে ১৩০০ নম্বরের মধ্যে ১২৮৫ পেয়ে তাক লাগিয়ে দিলো নিবিড় আওয়ামী লীগ জাতীয় সংসদকে অপবিত্র করেছে : আলাল ক্ষমতায় যেতে নয়, বিএনপি দেশে দ্রুত গণতান্ত্রিক উত্তরণ চায় : গয়েশ্বর

দক্ষিণ সিটিতে সেবা নিয়ে বিপাকে সাধারণ মানুষ

প্রভাত রিপোর্ট / ১৫ বার
আপডেট : মঙ্গলবার, ১৭ জুন, ২০২৫

প্রভাত রিপোর্ট: নগর ভবনে ডিএসসিসির অঞ্চল-১ এবং অঞ্চল-৪ এর কার্যালয়। কর্মসূচির কারণে অন্য কার্যালয়গুলোর মতো ওই কার্যালয়েও সেবা বন্ধ। ঢাকার ওয়ারী থেকে আসা সালাহ উদ্দিন নামে একজন বলেন, মেয়ের জন্ম নিবন্ধনের একটু সংশোধন করার দরকার ছিল। গত কয়েক দিন ধরে ঘুরছি। অফিসই খুলছে না। কাজটাও করতে পারছি না। নগর ভবনের মূল ফটকেও ঝুলছে তালা। পাশের পকেট গেইট নিয়ে মানুষজন ভেতরে যেতে পারছেন। তবে ফিরে যাচ্ছেন সেবা প্রার্থীরা।
প্রায় এক মাস ধরে বন্ধ রয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সব ধরনের কার্যক্রম। বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে মেয়র করার দাবিতে আন্দোলনের কারণে এ অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। প্রধান ফটকে তালা থাকায় কেউ অফিস করতে পারছেন না। এতে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন, মশা দমন, ময়লা আবর্জনা পরিষ্কারসহ সব ধরনের কার্যক্রমে প্রভাব পড়ছে। জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধনসহ সব ধরনের লাইসেন্স করাতে এসেও মানুষকে ফিরে যেতে হচ্ছে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়ছেন মানুষ। অন্যদিকে আন্দোলন সচল রেখে সেবা চালুর বিষয়ে কর্মচারীদের সঙ্গে মিটিং করেছেন ইশরাক হোসেন। তবে কীভাবে এটি চালু হবে সে বিষয়ে পরিষ্কার কেউ কিছু বলতে পারছেন না।
ডিএসসিসির অঞ্চল-৪ এর স্বাস্থ্য বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, সব অঞ্চলেই একই অবস্থা। অফিসে কাজ না থাকায় তিনিও বাড়িতে চলে গেছেন। তিনি বলেন, আমাদের অফিসে তালা দেয়া। কেউ আসে না, কোনো আবেদনও জমা নেওয়া হচ্ছে না। এ কারণে কয়দিন ধরে গ্রামের বাড়িতে চলে এসেছি।
ডিএসসিসির রাজস্ব বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, করদাতাদের অনেকেই অফিসে এসে কর দেন। এখন তারা পারছেন না। এতে কর আদায় কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। চলমান আন্দোলনে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম চলছে বলে জানা গেছে।
রাফাত হোসেন নামে ডিএসসিসির একজন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পরিদর্শক জানিয়েছেন, জরুরি সেবা হিসেবে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম সচল আছে। সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা কাজ করছেন, এছাড়া বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মীরাও বাসাবাড়ি থেকে বর্জ্য সংগ্রহ করছেন। বর্জ্য পরিবহনের যানবাহনও কাজ করছে।
এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, চলমান কর্মসূচির কারণ আমাদের কিছু দাপ্তরিক কাজে বিঘ্ন হচ্ছে। বিশেষ করে আমাদের প্রধান কার্যালয় এবং আঞ্চলিক কার্যালয়গুলোতে। তবে আমাদের পরিচ্ছন্নতা কাজ, মশক নিধন এবং বিভিন্ন ওয়ার্ড কাউন্সিল অফিসের কাজ চলমান আছে। আশা করছি, শর্ট টাইমের মধ্যেই চলমান সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
অন্যদিকে মেয়র পদে বসানোর বিষয়টি সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত সেবা চালু করে বিরতিহীনভাবে অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন। তিনি বলেছেন, এই সময়ে নিজস্ব তত্ত্বাবধানে জন্ম-মৃত্যুনিবন্ধনসহ জরুরি নাগরিক সেবা চালু থাকবে। উন্নয়নকাজসহ বাকি সব সেবা বন্ধ থাকবে।
ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন বলেন, আপনারা জানেন ডিএসসিসিতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালতে যে রায় তার পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমানে সিটির মেয়র হিসেবে আমাকে ঘোষণা করেছে। কিন্তু সরকার আমাকে মেয়র পদে বসানোর বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। তাই আমরা গতকাল অবস্থান কর্মসূচি বিরতিহীনভাবে ঘোষণা করেছিলাম। কিন্তু দীর্ঘদিন আন্দোলন চলাকালীন সময়ে বিভিন্ন ধরনের নাগরিক সেবার বিষয়টি আমাদের মাথায় রাখতে হচ্ছে। ঢাকা শহরে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বেড়েছে। আমরা ঢাকা শহরে মশক নিধন কর্মসূচিকে বেগবান করার জন্য এবং সেটি যাতে চলমান থাকে সেটি নিশ্চিত করার জন্য আজকে থেকে আমরা ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন দপ্তরের কর্মচারীদের সঙ্গে বৈঠক শুরু করছি।
তিনি আরও বলেন, আমরা ৭০টি ওয়ার্ডের পরিচ্ছন্নতা পরিদর্শকদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলাম। তাদের আমরা উৎসাহ দিয়েছি। তাদেরকে আমরা নিশ্চিত করেছি যে ভবিষ্যতে তাদের সমস্যাগুলো আমরা দেখব। আমাদের ৭০টির বেশি ওয়ার্ডে দৈনন্দিন যে সেবা সেগুলো চলবে, কিন্তু আমাদের আন্দোলন চলমান থাকবে। আমরা প্রতিটি ওয়ার্ড সচিবদের কার্যালয়ে জন্ম-মৃত্যু সার্টিফিকেট, নাগরিক সার্টিফিকেট, ওয়ারিশ সার্টিফিকেটসমূহ ওয়ার্ড সচিবদের মাধ্যমে জমা নেয়া হবে। যাতে আন্দোলন চলাকালীন অবস্থায় নগরবাসীর দুর্ভোগ কমিয়ে আনতে পারি। আগামী পরশুদিন স্বাস্থ্য বিভাগের সকল কর্মকর্তাদের সঙ্গে আমরা বৈঠক করব। যাতে ডেঙ্গুর বিষয়টি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। প্রতিটি ওয়ার্ডে আমরা মনিটরিং টিম করব।
উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা দক্ষিণ সিটির নির্বাচন হয়। সে নির্বাচনে বিএনপির ইশরাক হোসেনকে পৌনে ২ লাখ ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে মেয়র হন আওয়ামী লীগের শেখ ফজলে নূর তাপস। ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর গত ২৭ মার্চ ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ ও নির্বাচনি ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. নুরুল ইসলাম মেয়র পদে তাপসকে বিজয়ী ঘোষণার সেই ফল বাতিল করে ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করেন। এরপর ২৭ এপ্রিল ইশরাককে ডিএসসিসি মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। কিন্তু তাকে যেন শপথ পড়ানো না হয় সেজন্য গত ১৪ মে হাই কোর্টে রিট আবেদন করেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বাসিন্দা ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. মামুনুর রশিদ। এমন পরিস্থিতিতে মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে গত ১৪ মে ঢাকাবাসীর ব্যানারে নগর ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে কর্মসূচি পালন শুরু করেন তার সমর্থকেরা। ঈদের আগে বিরতি দিলেও তালা ঝুলে ভবনে। প্রায় ১ মাস ৩ দিন ধরে চলছে এ আন্দোলন। আন্দোলনের কারণে ডিএসসিসি নগর ভবন কার্যত অচল হয়ে পড়েছে।


আপনার মতামত লিখুন :
এই বিভাগের আরও