প্রভাত ডেস্ক: ইরানের খোররামাবাদ শহরে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত পাঁচজন নিহত হয়েছেন। ইরানের অভিজাত ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কোরের (আইআরজিসি) দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো এ কথা জানিয়েছে। খবর আল জাজিরার। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম নউর জানিয়েছে, ইসরায়েলের সঙ্গে সংঘাত শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত ইরানের আকাশ প্রতিরক্ষা বাহিনীর ১৫ জন কর্মকর্তা ও সেনা নিহত হয়েছেন।
গত ১৩ জুন ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে সংঘাত শুরু হয়। তখন থেকেই ইরানের বিভিন্ন অঞ্চলে পারমাণবিক আর সামরিক স্থাপনায় একের পর এক হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী।
হামলা চালিয়ে হত্যা করা হয়েছে ইরানের বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ সামরিক নেতা ও পরমাণু বিজ্ঞানীকে। রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন স্টেশনসহ ইরানের বিভিন্ন সরকারি দপ্তর ও বেসামরিক স্থাপনায় হামলা চালানো হয়েছে।
ইরান শনিবার (২১ জুন) ভোরে নতুন করে ইসরায়েলের বিভিন্ন স্থানে সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়েছে। ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষাকে ফাঁকি দিয়ে তেল আবিব শহরের প্রাণকেন্দ্রে ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানে বলে দাবি করেছে তেহরান।
ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানায়, ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনী (আইআরজিসি) ইসরায়েলের অধিকৃত অঞ্চলের ভেতরে সামরিক ও সরবরাহ ঘাঁটিগুলো লক্ষ্য করে বড় পরিসরের হামলা চালিয়েছে। তেল আবিবসহ ইসরায়েলের বিভিন্ন আবাসিক এলাকায় সাইরেন বেজে ওঠে। একই সঙ্গে একাধিক জায়গায় বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়।
ইসরায়েলের টিভি চ্যানেল ১২ ও দেশটির বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়, ইরান থেকে আজ সকালে ১০টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছে, যার মধ্যে ৫টি নিষ্ক্রিয় করা সম্ভব হয়েছে। একটি ক্ষেপণাস্ত্র তেল আবিবের দক্ষিণের হোলন শহরে আঘাত হানে বলে খবর পাওয়া যায়। হামলায় সেখানে একটি বহুতল ভবনে আগুন ধরে যায় এবং সেটি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
ইসরায়েলের চ্যানেল ১২-এর খবরে বলা হয়েছে, ইরানের পাল্টা হামলার পরিপ্রেক্ষিতে ইসরায়েল তাদের নতুন ‘লাইটনিং’ আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা বসাতে শুরু করেছে। ইরানি ড্রোন ঠেকাতে এই প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ব্যবহৃত হবে।
জেরুজালেম পোস্ট জানায়, ইরানে ইসরায়েলের হামলার এক সপ্তাহ পার হলেও তেহরানে সরকারের কোনো অস্থিরতা দেখা যায়নি; বরং তাদের অবস্থান আরও শক্তিশালী হয়েছে। এই হামলা ছিল ইরানের ১৮তম পাল্টা হামলা। এসব হামলা ইঙ্গিত দিচ্ছে, তেহরান দীর্ঘ মেয়াদে চাপ বজায় রাখতে ও আরও বৃদ্ধি করতে প্রস্তুত, যতক্ষণ না কৌশলগত লক্ষ্য পূরণ হয়েছে বলে তারা মনে করে।
ইরানের ইস্পাহান শহরে পারমাণবিক স্থাপনায় আজ শনিবার ভোরে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যমের বরাতে এ খবর জানিয়েছে বিবিসি।
বিবিসি বলছে, ইরানের বিমান প্রতিরক্ষা তাৎক্ষণিকভাবে এই হামলার জবাব দিয়েছে। এ কারণে ইস্পাহানে জোরে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে।
ইরানের ফার্স নিউজ এজেন্সি জানিয়েছে, ইসরায়েলের এ হামলার ফলে ইস্পাহানে পারমাণবিক স্থাপনা থেকে কোনো বিপজ্জনক পদার্থ ছড়িয়ে পড়েনি। যদিও সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে এ পর্যন্ত কোনো তথ্য জানাতে পারেনি আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ)। এদিকে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, তারা রাতভর ইরানের মধ্যাঞ্চলে ক্ষেপণাস্ত্রের মজুত এবং স্থাপনায় ‘ধারাবাহিক হামলা’ চালিয়েছে।
২০০৪ সালে নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার পর ইস্পাহান কেন্দ্রে শিল্পপর্যায়ে পরীক্ষামূলক কার্যক্রম চালানো হয়।
ইস্পাহান কেন্দ্রটিতে একটি পারমাণবিক জ্বালানি প্রস্তুতকারক কারখানাও রয়েছে, যা ২০০৯ সালে উদ্বোধন করা হয়। এখানে বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য স্বল্প সমৃদ্ধ জ্বালানি উৎপাদন করা হয়। ২০২২ সালের জুলাইয়ে ইরান ঘোষণা দেয়, তারা ইস্পাহানে একটি নতুন গবেষণা চুল্লি নির্মাণের পরিকল্পনা করেছে।