আজ
|| ১লা জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ || ১৭ই আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ || ৫ই মহর্রম, ১৪৪৭ হিজরি
সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের জমা অর্থ বেড়েছে ৩৩ গুণ
প্রকাশের তারিখঃ ২১ জুন, ২০২৫
প্রভাত অর্থনীতি: সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশি ব্যক্তি ও ব্যাংকগুলোর রাখা জমা অর্থের পরিমাণ এক বছরের ব্যবধানে ৩৩ গুণ বেড়েছে। ২০২৩ সালে ১ কোটি ৭ লাখ ১০ হাজার ফ্রাঁ (সুইজারল্যান্ডের মুদ্রা) জমা থাকলেও বছরের ব্যবধানে তা এসে দাঁড়িয়েছে ৫৮৯ দশমিক ৫৪ মিলিয়ন সুইস ফ্রাঁ-যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৮ হাজার ৮৩২ কোটি টাকা। সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকের (এসএনবি) বার্ষিক ব্যাংকিং পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এই বিশাল অঙ্কের বেশির ভাগই এসেছে বাংলাদেশি ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে। ২০২৩ সালে ব্যাংকের মাধ্যমে সুইস ব্যাংকে মাত্র ৩ দশমিক ৪৮ মিলিয়ন সুইস ফ্রাঁ জমা হলেও, ২০২৪ সালে জমা হয়েছে ৫৭৬ দশমিক ৬১ মিলিয়ন ফ্রাঁ। গত তিন দশকে এটিই পঞ্চম সর্বোচ্চ রেকর্ড এবং গত পাঁচ বছরে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। সর্বশেষ ২০২১ সালে সবচেয়ে বেশি টাকা জমা হয়েছিল বাংলাদেশিদের নামে, ৮৭১ দশমিক ১ মিলিয়ন ফ্রাঁ। তবে এমন হঠাৎ প্রবৃদ্ধি নিয়েই প্রশ্ন তুলছেন অর্থনীতিবিদরা। বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশ সুইজারল্যান্ড থেকে তেমন কিছু আমদানি করে না, তাই বাণিজ্যিক কোনো লেনদেনের মাধ্যমে এই পরিমাণ অর্থ জমা হওয়া সম্ভব নয়।’ তার মতে, এই লেনদেনগুলো হয়তো অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার আগেই হয়েছে। সরকারের পরিবর্তনের পর এমন বড় অঙ্কের টাকা স্থানান্তর সম্ভব নয় বলেই মন্তব্য তার।
অন্যদিকে, ব্যক্তি পর্যায়ের আমানতের পরিমাণ কিছুটা কমেছে। ২০২৩ সালে ব্যক্তিদের গচ্ছিত অর্থ ছিল ১২ দশমিক ৬২ মিলিয়ন ফ্রাঁ, যা আগের বছরের তুলনায় ৯ দশমিক ৬ শতাংশ কম। অন্যদিকে অন্যান্য উৎস থেকে জমা বেড়ে দাঁড়িয়েছে শূন্য দশমিক ৩১ মিলিয়নে। এসএনবির তথ্যে স্পষ্টভাবে বলা হয়নি, এই অর্থের মধ্যে কোনো অবৈধ অর্থ আছে কি না। তবে এমন অস্বাভাবিক প্রবৃদ্ধি নানা প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে। যেখানে বিশ্বের ১০৮টি দেশ অর্থপাচার ও কর ফাঁকি রোধে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে ‘অটোমেটিক এক্সচেঞ্জ অব ইনফরমেশন’ চুক্তিতে যুক্ত হয়েছে, বাংলাদেশ এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে এতে যোগ দেয়নি।
২০২৪ সালে সুইস ট্যাক্স কর্তৃপক্ষ প্রায় ৩৭ লাখ ব্যাংক হিসাবের তথ্য বিনিময় করেছে অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর সঙ্গে। কিন্তু বাংলাদেশ তাতে নেই। অথচ প্রতিবেশী ভারত ও পাকিস্তান ইতোমধ্যেই এই চুক্তির আওতায় রয়েছে। ২০২২ সালে বাংলাদেশ ফিনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) ৬৭ বাংলাদেশির ব্যাংক তথ্য চাইলেও সুইজারল্যান্ড মাত্র একজনের তথ্য দিয়েছে।
ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ‘আগের সরকারগুলো এ বিষয়ে অনেক আলোচনা করেছে, কিন্তু কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেয়নি। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত অবিলম্বে এই চুক্তিতে যোগ দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করা। এই সুযোগ এখন হাতছাড়া হলে ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা পাওয়াটা আরও কঠিন হয়ে পড়বে।’
Copyright © 2025 প্রভাত. All rights reserved.