প্রভাত ডেস্ক: ইরান থেকে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের পর ইসরায়েলের বিভিন্ন এলাকায় সাইরেন বেজে ওঠার পর আতঙ্কে তেল আবিবের ভূগর্ভস্থ আশ্রয়কেন্দ্রে জড়ো হচ্ছে মানুষ। সোমবার (২৩ জুন) ইসরায়েলের ওপর একযোগে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়েছে ইরান। দেশটির ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি) এই হামলা চালানোর কথা জানিয়েছে। অন্যদিকে পাল্টা হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলও। এছাড়া ইরানের আরও হামলার আশঙ্কায় নাগরিকদের নিরাপদ স্থানে আশ্রয়ের নির্দেশ দিয়েছে ইসরায়েল। সোমবার (২৩ জুন) এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা। ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি) ঘোষণা করেছে, তারা ইসরায়েলের ওপর একযোগে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়েছে। টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, ইসরায়েল ইলেকট্রিক করপোরেশন (আইইসি) নিশ্চিত করেছে যে, একটি ক্ষেপণাস্ত্র কৌশলগত অবকাঠামো স্থাপনার কাছে সরাসরি আঘাত লেগেছে। এর ফলে আশপাশের বেশ কয়েকটি শহরে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যাহত হয়েছে।
ইসরায়েলে টানা সাইরেন বেজে চলেছে, আর তার সঙ্গে একের পর এক বিস্ফোরণের শব্দে কেঁপে উঠছে বিভিন্ন শহর। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, ইরান থেকে প্রচুর সংখ্যক ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছে, যার ফলে সেন্ট্রাল ও দক্ষিণ ইসরায়েলের বিভিন্ন এলাকায় বিমান হামলার সতর্কতা হিসেবে সাইরেন বেজে উঠেছে। বিশেষ করে আসদোদ, লাচিস এবং পশ্চিম জেরুজালেমের আশপাশে একাধিক জায়গায় ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছে বলে জানা গেছে। টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, জেরুজালেমে সাইরেন বাজার সঙ্গে সঙ্গেই নেসেটের (ইসরায়েলি সংসদ) সদস্যরা নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যান। এদিকে সাংবাদিকদের জন্য সোমবার (২৩ জুন) ইসরায়েল ও অধিকৃত পশ্চিম তীরে রিপোর্টিং নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ফলে অনেক সংবাদকর্মী পাশের দেশ জর্ডান থেকে তথ্য সংগ্রহ করছেন বলে জানিয়েছে আল জাজিরা।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইরান থেকে পাল্টা হামলায় এ পর্যন্ত অন্তত ৪৫০টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়েছে। এর মধ্যে অন্তত ৪টি সরাসরি ইসরায়েলের বিভিন্ন স্থানে আঘাত হেনেছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, টানা প্রায় ৩৫ মিনিট ধরে সাইরেন ও বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে।
তবে ক্ষয়ক্ষতির নির্ভরযোগ্য তথ্য এখনো জানা যায়নি। কারণ, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ভিডিও ও তথ্য প্রকাশে কঠোর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।
গত ১০ দিনের ইরানি হামলায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেন্ট্রাল ইসরায়েল। হামলার শিকার হয়েছে হাইফার মতো গুরুত্বপূর্ণ শহরও।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গতকাল ইরান তাদের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ফাঁকি দিয়ে একটি হামলা চালায়, যেখানে কোনো সতর্কতামূলক সাইরেন বাজেনি। পরে ইসরায়েল নিশ্চিত করে এটি ইরানের একটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছিল, ভুল করে ছোড়া নিজস্ব প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র নয়।
উল্লেখ্য, ১৩ জুন ইসরায়েল ইরানে বড় ধরনের হামলা চালায়, যাতে পরমাণু স্থাপনা, সামরিক ঘাঁটি ও আবাসিক এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয় এবং ৪০০-এর বেশি মানুষ প্রাণ হারান। নিহতদের মধ্যে পরমাণু বিজ্ঞানী, সামরিক কর্মকর্তা এবং সাধারণ মানুষ রয়েছেন। এর জবাবে ইরান ‘অপারেশন ট্রু প্রমিস থ্রি’ নামে পাল্টা অভিযান শুরু করে এবং ২৩ জুন পর্যন্ত অন্তত ২১ দফা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। যুদ্ধ পরিস্থিতি এখনো উত্তপ্ত।
পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের হামলার জবাবে ইরান কঠোর প্রতিক্রিয়া জানাবে বলে ইরানের সেনাবাহিনীর প্রধান মেজর জেনারেল আমির হাতামি হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। একাধিক সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিও বক্তব্যে তিনি বলেন, আমাদের ইতিহাসে আমেরিকার মুখোমুখি আমরা বহুবার হয়েছি। যখনই তারা আমাদের দিকে এগিয়ে এসেছে, তারা তীব্র ও শক্তিশালী জবাব পেয়েছে। তিনি আরও বলেন, “আমরা লড়বো— লড়বো নিজেদের সম্মান, স্বাধীনতা ও সুখের জন্য। শহীদের সংখ্যা আমাদের থামায়নি, বরং সাহস দিয়েছে। আমাদের শক্তি নিয়ে সন্দেহ কোরো না। ইসরায়েলি হামলার পর পাল্টা জবাব দিতে শুরু করেছে ইরান। মধ্য, দক্ষিণ ইসরায়েল ও জেরুজালেম অঞ্চলে সতর্কতামূলক সাইরেন বেজে উঠেছে ইতোমধ্যে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছে, ইরান থেকে একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হচ্ছে। এরই মধ্যে লেবানন সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতেও সাইরেন বেজে ওঠেছে। জেরুজালেমে সাইরেন বাজার শব্দে নেসেটের আইনপ্রণেতারা আশ্রয় নিতে ছুটে যান।
ক্ষেপণাস্ত্র হামলার কারণে সংশ্লিষ্ট এলাকায় বাসিন্দাদের বোমা আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করতে নির্দেশ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। আইডিএফ জানিয়েছে, আরও ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানতে পারে। মধ্য ইসরায়েলে সাইরেন বাজতে পারে যেকোনো মুহূর্তে।
ইরানি সংবাদমাধ্যম তাসনিম জানায়, এই হামলায় কঠিন ও তরল জ্বালানিচালিত ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের পাশাপাশি এমন কৌশল ব্যবহার করা হয়েছে, যা ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ভেদ করতে সক্ষম। তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলের পাঁচটি স্থানে — সাফাদ, তেল আবিব, আশকেলন, আশদোদ এবং বেইসানে — রকেট হামলার ঘটনা ঘটেছে। তবে এই হামলার পর এখনও পর্যন্ত ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য আসেনি। অন্যদিকে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার কিছু সময় পরেই ইসরায়েল তেহরানসহ অন্যান্য ইরানি শহরে পাল্টা হামলা চালিয়েছে। আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে পশ্চিম তেহরানের অধ্যাপক ফোয়াদ ইযাদি জানিয়েছেন, একটি হাসপাতালে পাশে ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছে এবং ঘটনাস্থলে ধোঁয়া দেখা গেছে। তবে হতাহতের কোনো আনুষ্ঠানিক তথ্য এখনো পাওয়া যায়নি।
এমন অবস্থায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনী সতর্ক করে জানিয়েছে, ইরান থেকে আরও ক্ষেপণাস্ত্র ছোঁড়া হচ্ছে। জনগণকে দ্রুত নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে দেশটিতে ফের বিমান হামলার সতর্কতা বাজানো হয়েছে।
মধ্যপ্রাচ্যে আঞ্চলিক দুই প্রতিদ্বন্দ্বী ইরান ও ইসরায়েলের মাঝে টানা ১১ম দিনের মতো হামলা-পাল্টা হামলা চলছে। ইরানের পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনায় ১৩ জুন ইসরায়েলের হামলার মাধ্যমে শুরু হওয়া এই সংঘাত মধ্যপ্রাচ্যে চরম উত্তেজনা তৈরি করেছে। আঞ্চলিক এই সংঘাতে বিশ্বের পরাশক্তি দেশগুলোও জড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। ইরান-ইসরায়েলের চলমান এই সংঘাতের প্রতি মুহূর্তের লাইভ আপডেট জানতে সঙ্গে থাকুন। ইসরায়েলের ওপর একযোগে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়েছে ইরান। দেশটির ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি) এই হামলা চালানোর কথা জানিয়েছে। বড় ধরনের এই হামলার পরই ইসরায়েলে ব্যাপক বিদ্যুৎ বিভ্রাট দেখা দিয়েছে। এর জেরে ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলের বেশ কিছু শহরে বিদ্যুৎ পরিষেবা ব্যাহত হয়েছে। সোমবার (২৩ জুন) কাতার-ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, দক্ষিণ ইসরায়েলে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় বেশ কয়েকটি এলাকা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলে ব্যাপক বিদ্যুৎ বিভ্রাট
আইআরজিসির ১০ সদস্য নিহত: ইসরায়েলি হামলায় ইরানের ইসলামিক বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (আইআরজিসি) কমপক্ষে ১০ সদস্য নিহত ও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। রবিবার (২২ জুন) দেশটির ইয়াজদ প্রদেশে ইসরায়েলি হামলায় এ হতাহতের ঘটনা ঘটে। ইরানি সংবাদ সংস্থা তাসনিমের বরাতে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, আইআরজিসির বেশ কয়েকজন কর্মীও এ হামলায় আহত হয়েছেন। তবে তাদের সংখ্যা কত তা উল্লেখ করা হয়নি। তবে ইসরায়েল বলছে, গত ১৩ জুন থেকে শুরু করা হামলায় ইরানের দুই ডজন সামরিক কমান্ডার ও পরমাণু বিজ্ঞানী নিহত হয়েছেন।