প্রভাত ডেস্ক: নানা জল্পনা–কল্পনার অবসান ঘটিয়ে গত শনিবার রাতে ইরানের ফর্দো, নাতাঞ্জ ও ইস্পাহান পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেই তাঁর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া এক পোস্টে বিষয়টি নিশ্চিত করেন। পরে ইরানের গণমাধ্যমও হামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে।
ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করছে। এমন অভিযোগ এনে ১৩ জুন ইরানে হামলা চালায় ইসরায়েল। এরপর পাল্টা হামলা চালায় ইরানও। তখন থেকে দুই দেশের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলা চলছে। এর মধ্যে গতকাল চলমান সংঘাতে ইসরায়েলের পক্ষ হয়ে জড়িয়ে পড়ে তার ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাষ্ট্র। এই হামলায় ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচিত ফর্দো পারমাণবিক কেন্দ্র।
ফর্দো স্থাপনাটি সম্পর্কে এখনো অনেক তথ্য অজানা। পাহাড়ের গভীরে নির্মিত একটি সুরক্ষিত ও গোপন স্থাপনা আছে এখানে। অ্যান্টি-এয়ারক্রাফট ব্যাটারির মাধ্যমে সুরক্ষিত হওয়ায় পারমাণবিক জ্বালানি সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্রটিতে ইসরায়েলের পক্ষে বিমান হামলা করা সম্ভব ছিল না বলে মনে করা হতো। গতকাল ‘বাংকার বাস্টার’ বোমা ফেলে এটিকে অকার্যকর করে দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ৩০ হাজার পাউন্ড ওজনের বাংকারবিধ্বংসী বোমা জিবিইউ-৫৭ ব্যবহার করে এ হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। দীর্ঘদিন ধরেই ট্রাম্প প্রশাসনের কাছে বাংকারবিধ্বংসী বোমা ব্যবহারের দাবি জানিয়ে আসছিল ইসরায়েল। বিশাল ওজন ও তীব্র গতিশক্তির মাধ্যমে ভূগর্ভের লক্ষ্যবস্তুতে পৌঁছে বিস্ফোরণ ঘটাতে সক্ষম এই বোমা। এটি শুধু যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্রভান্ডারে থাকা বি-২ স্টেলথ বোমারু বিমানের মাধ্যমেই নিক্ষেপ করা সম্ভব। বাংকার বাস্টার বোমা মাটির নিচে প্রায় ২০০ ফুট (৬১ মিটার) গভীরে ঢুকে বিস্ফোরণ ঘটাতে সক্ষম বলে ধারণা করা হয়।
ফর্দোকে অকার্যকর করে দেওয়ার মাধ্যমে ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্রের মালিক হওয়া থেকে বিরত রাখতে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার তথ্য অনুযায়ী সেখানে ৮৩ দশমিক ৭ শতাংশ পর্যন্ত ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার প্রমাণ পাওয়া গেছে। যা পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির জন্য ৯০ শতাংশের একেবারে কাছাকাছি।
এক মার্কিন কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ওপর চালানো হামলায় বি-২ বোমারু বিমান ব্যবহার করা হয়েছিল। ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, ফর্দো পারমাণিবক স্থাপনায় ছয়টি ‘বাংকারবিধ্বংসী’ বোমা নিক্ষেপ করা হয়। ইরান বারবার দাবি করে এসেছে, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে পরিচালিত হচ্ছে। অপর দিকে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর আগের মূল্যায়ন অনুযায়ী, তেহরান সক্রিয়ভাবে পারমাণবিক বোমা তৈরির চেষ্টা করছে না।