• শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫, ০১:২৩ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম
আদালতকে ফ্যাসিস্টমুক্ত করতে হবে: সালাহউদ্দিন সংবিধান বদলাতে হবে, বর্তমান সংবিধান আওয়ামী সংবিধান : হাসনাত আব্দুল্লাহ জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ছাড়া এনসিপি নির্বাচনে যাবে না: নাহিদ ইসলাম যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন হবে, যুক্তরাষ্ট্রকে জানিয়েছে সরকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে ৫ জনের মৃত্যুদণ্ড ইসরাইলের পিআর পদ্ধতি কেন আলেমদের আদর্শ হলো, বুঝে আসে না: প্রিন্স জাপানে শিক্ষাবৃত্তি ও বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগ বাড়ানোর আহ্বান দাঁড়িপাল্লা প্রতীকসহ নিবন্ধন ফিরে পেল জামায়াত, গেজেট প্রকাশ তিতাসে পাওনা টাকার জেরে রাজমিস্ত্রীকে হত্যা, দুই যুবক গ্রেপ্তার দুই বড় বিষয়ে ঐকমত্যে রাজনৈতিক দলগুলো: আলী রীয়াজ

আসছে নতুন জাপা, সম্মেলন ২৮ জুন

প্রভাত রিপোর্ট / ১০ বার
আপডেট : বুধবার, ২৫ জুন, ২০২৫

প্রভাত রিপোর্ট: রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে একই নামে সবচেয়ে বেশি ব্র্যাকেটবন্দি হয়েছে সাবেক স্বৈরশাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের প্রতিষ্ঠিত দল জাতীয় পার্টি। বর্তমানে ‘জাতীয় পার্টি’ নামে সাতটি দলের অস্তিত্ব রয়েছে। এর মধ্যে তিনটি অংশের নেতৃত্বে রয়েছেন এরশাদের ভাই ও স্ত্রীরা। এরশাদের জীবদ্দশায় ‘জাতীয় পার্টি’ নামে পাঁচটি দল ছিল। মৃত্যুর পর (১৪ জুলাই, ২০১৯) তার সাবেক স্ত্রী বিদিশার ইচ্ছায় ‘নতুন জাপা’ নামের আরেকটি দল হয়। সবশেষ ২০২৪ সালের ২০ এপ্রিল এরশাদের স্ত্রী রওশন এরশাদের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টির একটি অংশ ভাগ হয়ে যায়।
বর্তমানে ব্র্যাকেটবন্দি জাপার অংশগুলো হলো, জাতীয় পার্টি (জাপা), চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের; নতুন জাপা, এরশাদের সাবেক স্ত্রী বিদিশা সিদ্দিক; জাতীয় পার্টি (জেপি), সভাপতি আনোয়ার হোসেন মঞ্জু; বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি), চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ; জাতীয় পার্টি, চেয়ারম্যান কাজী জাফর আহমদ; বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি, সভাপতি ডা. এম এ মুকিত এবং জাতীয় পার্টি, চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ।
গত ২০ মে জাপার প্রেসিডিয়াম সভায় সিদ্ধান্ত হয় ২৮ জুন দলের সম্মেলন হবে। এজন্য জাপা চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্র ভাড়া করে। কিন্তু গত ১৬ জুন এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জিএম কাদের বলেন, চীন মৈত্রী কর্তৃপক্ষ হল বরাদ্দ বাতিল করায় ২৮ তারিখের সম্মেলন হচ্ছে না। হল পাওয়া গেলে সম্মেলনের পরবর্তী তারিখ জানিয়ে দেয়া হবে। তার এই বিবৃতির পর পাল্টা বিবৃতি দিয়ে জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এবং রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, সম্মেলন স্থগিতের সিদ্ধান্ত অগণতান্ত্রিক ও অনভিপ্রেত। সম্মেলনের মাধ্যমে চেয়ারম্যান, মহাসচিবসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পদে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ নিশ্চিত করা গণতন্ত্রের অবিচ্ছেদ্য অংশ। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, প্রেসিডিয়াম সভায় সর্বসম্মতিতে সিদ্ধান্ত হয়েছিল কোনো কারণবশত সম্মেলনের জন্য মাঠ বা হল পাওয়া না গেলে রাজধানীর কাকরাইলে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সম্মেলন হবে। এ সিদ্ধান্ত এখনো বহাল আছে। এ সিদ্ধান্তের প্রতি সম্মান জানিয়ে দলের চেয়ারম্যান ২৮ জুন দলীয় কার্যালয়ের সামনেই সম্মেলনের আয়োজন নিশ্চিত করবেন বলে আশা করি।
জাতীয় পার্টির নেতারা বলছেন, দলের গঠনতন্ত্রের ২০(ক) ধারা অনুযায়ী জাপা চেয়ারম্যান কারণ দর্শানো ছাড়াই দলের যে কাউকে পদ থেকে সরাতে পারেন, বহিষ্কার করতে পারেন। যে কাউকে যেকোনো পদ দিতে পারেন। এজন্য তাকে জবাবদিহিতা করতে হয় না। যে কারণে দলের বর্তমান কমিটির সিনিয়র নেতাদের বড় একটি অংশ বর্তমান চেয়ারম্যানকে এই ধারা সংশোধন করার অনুরোধ করেন। কিন্তু তিনি তা পরিবর্তন করতে আগ্রহী নন। তাই এই অংশটি যেকোনো সময় পদ হারানোর ভয়ে এখন জিএম কাদেরকে একঘরে করে ২৮ জুন সম্মেলন করতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন জাতীয় পার্টি থেকে বিভিন্ন সময় পদ হারানো নেতারা।
দলের গঠনতন্ত্রের বিতর্কিত ২০(ক) ধারাকে কেন্দ্র করে ফের ভাঙতে যাচ্ছে জাপা। একইসঙ্গে দলের বর্তমান চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদেরকে শীর্ষপদ থেকে সরাতে জোট বেঁধেছে বর্তমান কমিটির শীর্ষ নেতাদের একাংশ। তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন দল থেকে ২০(ক) ধারার ক্ষমতাবলে ২০২৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর বহিষ্কার হওয়া নেতারা। তবে জিএম কাদেরপন্থি নেতাদের অভিযোগ, এই ভাঙনের পেছনে অতীতের মতো সরকারি ইন্ধন রয়েছে।
জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ গণমাধ্যমকে বলেন, আগামী ২৮ জুন কাকরাইলে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে দলের কাউন্সিল হবে। দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদের তো ২৮ তারিখের সম্মেলন স্থগিত করেছেন এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, উনি একক সিদ্ধান্তে এটা স্থগিত করতে পারেন না। কারণ প্রেসিডিয়ামের সভায় এই তারিখ ঠিক হয়েছিল। উনাকে স্থগিত করতে হলে প্রেসিডিয়ামের মিটিংয়ে করতে হবে। সুতরাং ওইদিন দলের কাউন্সিল হবে।
তাহলে কী জাতীয় পার্টি আবার ভাঙতে যাচ্ছে,এমন প্রশ্নের জবাবে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, আমরা তো আগের মতো দল ভেঙে বেরিয়ে এসে কাউন্সিল করছি না। চেয়ারম্যানের ঘোষণা দেয়া তারিখে দলের কাউন্সিল হচ্ছে। সেই কাউন্সিলে দলের কাউন্সিলর-ডেলিগেটরা ভোট দিয়ে পরবর্তী চেয়ারম্যান ঠিক করবেন। কাউন্সিলে উপস্থিত নেতাদের মধ্য থেকে দলের পরবর্তী চেয়ারম্যান-মহাসচিবের জন্য প্রার্থী হবেন। জিএম কাদেরকে বাদ দিয়েই কি জাতীয় পার্টি হচ্ছে, জানতে চাইলে এ নেতা বলেন, তিনি সম্মেলনে না এলে তো দলের চেয়ারম্যান পদ থেকে বাদ পড়বেন। কারণ উপস্থিত না থাকলে প্রার্থী হতে পারবেন না। তবে দল থেকে বাদ পড়ছেন না। জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান বলেন, আমরা আসলে জিএম কাদেরকে বলেছিলাম ২০(ক) ধারা পরিবর্তন করার জন্য। কিন্তু উনি এটা করবেন না। সেজন্য আমরা বলেছি তাহলে এটা নিয়ে কাউন্সিলের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত হবে। সেখানে আমরা চেয়ারম্যান ও মহাসচিব পদে আমাদের প্রার্থিতা দেব।
কারা চেয়ারম্যান ও মহাসচিব পদে প্রার্থী হবেন সেটা কাউন্সিলের আগে ঠিক করা হবে বলেও জানান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। যেহেতু আমি দলে আছি নিশ্চয়ই একটা পদে প্রার্থী হব, উল্লেখ করেন তিনি।
এবার জাতীয় পার্টি ভাঙনের পেছনে সরকারের ইন্ধন রয়েছে বলে মনে করছেন জিএম কাদেরের অনুসারীরা। তারা বলেন, জাতীয় পার্টির সর্বশেষ সম্মেলন হয়েছিল ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে। তিন বছর পরপর সম্মেলন হওয়ার কথা রয়েছে। সেই হিসেবে বর্তমান কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ। নির্বাচন কমিশন আমাদেরকে নতুন করে কাউন্সিল করে কমিটি হালনাগাদ করার জন্য তাগিদ দিচ্ছে। অথচ বিগত ১৬ বছরের বেশি সময় ধরে বিএনপির কাউন্সিল হয় না, তাদেরকে তো কোনো চাপ দিচ্ছে না ইসি। এ কারণেই সরকারের প্রতি আমাদের সন্দেহ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে জিএম কাদেরপন্থি জাতীয় পার্টির একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য বলেন, পার্টির কাউন্সিল করার তো একটা বাধ্যবাধকতা আছে। আমরাও দ্রুত কাউন্সিল করতে চাইছি। কিন্তু হল রুম পাচ্ছি না। এ ছাড়া বিভিন্ন সময় আমাদের মিটিংয়ে হামলা হওয়ার কারণে কেউ জায়গা দিতেও চাইছে না। অথচ নির্বাচন কমিশন মৌখিকভাবে আমাদেরকে কাউন্সিল করার জন্য চাপ দিয়েছে। অন্যদিকে বিএনপি ১৭ বছর কোনো কাউন্সিল করেনি কিন্তু তাদেরকে কিছু বলছে না। এ কারণে সরকারের ওপর আমাদের সন্দেহ। এই নেতা আরও বলেন, অতীতেও দেখা গেছে জাতীয় পার্টি যতবারই ভেঙেছে, তৎকালীন সরকারের ইশারাতে হয়েছে। তবে, এটাও মনে রাখতে হবে যতবার পার্টি ভেঙেছে সেটা এক কিংবা দুইজন এমপির দল হয়েছে। বড় কোনো পার্টি হতে পারেনি।
সরকারের ইন্ধন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ গণমাধ্যমকে বলেন, এটা কোনোক্রমেই সত্য নয়। উনাকে (জিএম কাদের) বলেছি, আমরা আপনার সঙ্গে আছি। ২০(ক) ধারাটা পরিবর্তন করুন। আপনি তো মানুষকে ভয় দেখিয়ে কিছু করতে পারবেন না। ২০(ক) হচ্ছে এমন– তিনি আমাকেও বহিষ্কার করতে পারবেন। যদিও এখন সম্মেলনের তারিখ ঘোষণার কারণে পারবেন না। আমি ৪৫ বছর এই পার্টি করছি। একটা দলে তো এরকম অগণতান্ত্রিক ধারা থাকতে পারে না। জাতীয় পার্টির এই ২০(ক) ধারা দীর্ঘসময় ধরে আছে, তাহলে এতদিন কেন এটা পরিবর্তন করতে বলেননি, জানতে চাইলে তিনি বলেন, দীর্ঘসময় ধরে আছে বলে কি এখনো থাকতে হবে। আজ দেশের সংবিধান পরিবর্তন হচ্ছে। তাহলে আগে ছিল দেখে এখন রাখতে হবে, এটা কি যুক্তি হতে পারে? অন্যদিকে কাউন্সিল স্থগিত করতে হলে দলের চেয়ারম্যানকে প্রেসিডিয়ামের মিটিং ডেকে অনুমতি নিতে হবে এমনটি জাতীয় পার্টির গঠনতন্ত্রের কোথাও নেই উল্লেখ করে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, এখানে যেটা ব্যাখ্যা আসতে পারে যে, নতুন করে আবার কোনো তারিখ ঘোষণা করতে হলে আবার প্রেসিডিয়ামের মিটিং ডাকতে হবে। এটা হতে পারে। আবার এখানে বাস্তবতা হচ্ছে কোনো হলরুম পাওয়া যাচ্ছিল না। রাস্তায় তো একটা দলের কাউন্সিল হতে পারে না। তিনি আরও বলেন, উনাদের যে ২০(ক) ধারা নিয়ে আপত্তি সেটার তো সমাধান আছে। আমাদের গঠনতন্ত্র সংশোধনের জন্য কমিটি গঠন করা হয়েছে। সেই কমিটি এখানে কোনো সংশোধন আনার প্রয়োজন মনে করলে বিষয়টি তুলে ধরবে। তারপর পার্টিতে আলোচনার মাধ্যমে একটা সমাধান করা যাবে। তবে আমি মনে করি এরকম মুখোমুখি কাউন্সিল করে কোনো সমাধান হবে না।


আপনার মতামত লিখুন :
এই বিভাগের আরও