প্রভাত ডেস্ক: নিউইয়র্ক সিটি মেয়র নির্বাচনের ডেমোক্র্যাট প্রাইমারিতে অ্যান্ড্রু কুমোকে হারিয়ে অভাবনীয় জয় পেয়েছেন স্টেট অ্যাসেম্বলির সদস্য জোহরান মামদানি। ২০২১ সালে যৌন হয়রানির অভিযোগে পদত্যাগ করার পর রাজনৈতিকভাবে ফিরতে চেয়েছিলেন অ্যান্ড্রু কুমো। তবে নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের সাবেক এই গভর্নর এবার এক মুসলিম বামপন্থী তরুণের কাছে হার মানতে বাধ্য হলেন। সমর্থকদের উদ্দেশে দেওয়া বক্তৃতায় কুমো (৬৭) বলেন, ‘মামদানি ৩৩ বছর বয়সী ডেমোক্র্যাট সমাজতন্ত্রী—আজকের প্রাইমারিতে জয় পেয়েছে। আমরা ফলাফল পর্যালোচনা করে পরে সিদ্ধান্ত নেব।’ বক্তৃতায় কুমো আরও বলেন, ‘আজ তার (জোহরান মামদানি) রাত।’ নির্বাচিত হলে নিউইয়র্ক সিটির ইতিহাসে প্রথম মুসলিম ও ভারতীয় বংশোদ্ভূত মেয়র হবেন মামদানি। অতি উদারপন্থী শহর হিসেবে পরিচিত নিউইয়র্কে সাধারণত ডেমোক্র্যাট প্রার্থীই জয়ী হন। ফলে এই প্রাইমারির ফলাফলই আগামী নভেম্বরে মেয়র নির্বাচনে কে জিতবেন, তা নির্ধারণ করে দিতে পারে।
গত নভেম্বরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বে রিপাবলিকানরা কংগ্রেসের দুই কক্ষেই জয় পাওয়ার পর ডেমোক্র্যাটদের জন্য মামদানির এ সাফল্য এক গুরুত্বপূর্ণ বার্তা। তাঁদের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক কৌশলের দিকনির্দেশনা হিসেবে এই মেয়র নির্বাচনকে দেখা হচ্ছে।
মঙ্গলবার (২৪ জুন) রাতে প্রাথমিক বাছাইয়ের ফলাফলে দেখা গেছে, মামদানি স্পষ্ট ব্যবধানে এগিয়ে থাকলেও সরাসরি জেতার জন্য প্রয়োজনীয় ৫০ শতাংশ ভোট পাননি। তবু হেরে যাওয়া নিয়ে কুমোর ওই আগাম স্বীকারোক্তি অনেককে চমকে দিয়েছে। কারণ, নিউইয়র্কে র্যাংকড চয়েস পদ্ধতিতে ভোট গণনা আগামী সপ্তাহ পর্যন্ত চলতে পারে। এ পদ্ধতিতে ভোটাররা তাঁদের পছন্দের পাঁচ প্রার্থীকে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে বেছে নিতে পারেন।
নিউইয়র্কের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ইতিহাসে এটিকে সবচেয়ে বড় অঘটন বলে মন্তব্য করেছেন রাজনৈতিক কৌশলবিদ ট্রিপ ইয়াং। তাঁর ভাষায়, ‘মামদানির জয় দেখিয়ে দিল, ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন হোয়াইট হাউসে, তখন নিউইয়র্কের ডেমোক্র্যাটরা এমন নেতৃত্ব চান, যাঁরা সাহস ও স্পষ্ট বার্তা নিয়ে এগিয়ে আসতে পারেন। নিউইয়র্ক টাইমসকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে কুমো বলেছেন, নভেম্বরের নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন কি না, এখনো ভাবছেন। করোনা মহামারি চলাকালে গভর্নরের ভূমিকার জন্য সারা দেশে পরিচিত মুখ ছিলেন মধ্যপন্থী রাজনীতিবিদ কুমো। ক্ষমতাসীনদের কাছেও তিনি ছিলেন জনপ্রিয়। অন্যদিকে মামদানি একেবারেই ভিন্ন রকমের মুখ। প্রথাগত রাজনীতির বাইরে থাকা এই তরুণ এখন পর্যন্ত অনেকটাই অচেনা ছিলেন।
মামদানির জন্ম উগান্ডায়। মামদানির বয়স যখন সাত বছর, তখন তাঁর পরিবার নিউইয়র্কে চলে আসে। তাঁর নির্বাচনী প্রচারে দেখা গেছে উর্দু ভাষার ভিডিও, বলিউড সিনেমার ক্লিপ, এমনকি স্প্যানিশ ভাষায় দেওয়া নিজের ভাষণ। ফিলিস্তিনিদের প্রতি মামদানির প্রকাশ্য সমর্থন ও ইসরায়েলের সমালোচনা ডেমোক্র্যাট নেতৃত্বের বড় অংশের সঙ্গে তাঁর দূরত্ব তৈরি করে। নির্বাচনী প্রচারের সময় মামদানি কিছু ভিডিওর জন্য ভাইরাল হন। ওই সব ভিডিওতে ট্রাম্পকে ভোট দেওয়া ভোটারদের মুখোমুখি হয়ে তাঁদের এ অবস্থানের পেছনের কারণ জানার চেষ্টা করেন তিনি। প্রশ্ন করেন, কী কারণে তাঁরা ট্রাম্পকে ভোট দেন এবং কী করলে তাঁরা ডেমোক্র্যাটদের দিকে ফিরবেন।
মামদানির নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বেশ উচ্চাভিলাষী। এসবের মধ্যে আছে, নগরবাসীর জন্য ফ্রি বাস সার্ভিস, সর্বজনীন শিশুযত্ন, সরকারি ভর্তুকিপ্রাপ্ত বাসার ভাড়া বৃদ্ধি করতে না দেওয়া ও নগর কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে মুদিদোকান চালানো। এসবের অর্থ জোগান দিতে ধনীদের ওপর নতুন কর আরোপের প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি। এই শহরে প্রতি চারজনের একজন দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করছে। পাঁচ লাখ শিশু রাতে না খেয়ে ঘুমায়,’ বিবিসিকে বলেন মামদানি। আরও বলেন, এই শহরের বিশেষত্বটাই আজ হুমকির মুখে। আমরা সেটা রক্ষা করতে চাই।
মামদানির প্রচারে তাঁকে সমর্থন দিয়েছেন কংগ্রেস সদস্য আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও কর্টেজ ও সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্সও। দুজনই ডেমোক্র্যাট সমাজতন্ত্রী।