প্রভাত রিপোর্ট: সচিবালয়ে কেন্টিন পরিচালনা নিয়ে কর্মচারীদের দুই পক্ষের সংঘর্ষে অন্তত পাঁচজন আহত হয়েছেন। এ ঘটনার পর সচিবালয়ে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। কর্মচারীদের পরিচালিত দুটি কেন্টিনসহ অন্যান্য দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। সচিবালয়ের চার নম্বর পেছনের পদ্মা কেন্টিন এলাকায় পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। বাংলাদেশ সচিবালয় বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেড সচিবালয়ে দুটি কেন্টিন , ওএমএসের দোকান পরিচালনা করে আসছিল। অন্যদিকে, সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সংগঠন বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের রয়েছে দুটি অংশ। একটি অংশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন মো. বাদিউল কবীর ও নিজাম উদ্দিন আহমেদ এবং আরেক অংশে রয়েছেন মো. নুরুল ইসলাম ও মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর কর্মচারী সংগঠনের একটি পক্ষ কেন্টিন দখলে নেয়ার পাঁয়তারা করছিল। কিন্তু সমবায় সমিতি তাদের নির্ধারিত মেয়াদ পর্যন্ত দায়িত্ব চালিয়ে যেতে চাইছিল। কিন্তু আগের কমিটির (সমবায় সমিতি) নানা অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়টি সমবায় অধিদপ্তরের নজরে এলে তারা সমবায় সমিতি পরিচালনায় অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করে দেয়। কিন্তু আগের কমিটি দায়িত্ব হস্তান্তরে টালবাহানা করছিল। যদিও এর আগেই কর্মচারীদের একটি পক্ষ ক্যানটিন দখল করে পরিচালনা শুরু করে। এরমধ্যে অন্তবর্তীকালীন ব্যবস্থাপনা কমিটির কাছে দায়িত্ব হস্তান্তরও করেছিল সমবায় সমিতির আগের কমিটি। যদিও তারা এ বিষয়ে আদালতে রিটও করে।
কর্মচারীরা জানিয়েছেন, রিটের পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চ আদালত অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থাপনা কমিটির কার্যক্রমের বিষয়ে স্থগিতাদেশ দেন। সর্বশেষ মঙ্গলবার আদালতের এই রিটের রায়কে কেন্দ্র করে সমবায়ের আগের কমিটি ও সংযুক্ত পরিষদের বাদিউল গ্রুপ মিলে নুরুল ইসলাম গ্রুপের নেতাকর্মীদের হামলা করে বলে অভিযোগ করেছেন কর্মচারী নেতারা।
সংযুক্ত পরিষদের নুরুল ইসলাম গ্রুপের মহাসচিব মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম গণমাধ্যমকে বলেন, মঙ্গলবার (২৪ জুন) বিকেলে সমবায় সমিতির আগের কমিটি আদালতের রায়ের বিষয়টি আমাদেরকে জানায়। আমরা বলেছি, এটি তারা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও সমবায় বিভাগসহ সরকারের সংশ্লিষ্টদের জানাক। তারা ক্যানটিনের কার্যক্রম বন্ধ করতে বললে আমরা বন্ধ করে দেবো। তিনি বলেন, এরপর রাত সাড়ে ৮টার দিকে যখন কেন্টিনের বাজার এসেছিল, ট্রাক থেকে ওএমএসের পণ্য নামানো হচ্ছিল। তখনই বাদিউলরা আমাদের ওপর হামলা করে। তাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের দোসররাও ছিল। তারা ৩০/৪০ জন মিলে আমাদের ওপর রড, লাঠিসহ বিভিন্ন অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে অতর্কিতে হামলা চালায়। আমাদের সভাপতি নুরুল ইসলামসহ কয়েকজন আহত হয়েছে। আমিও আহত হয়েছি। আমাদের সভাপতির (নুরুল ইসলাম) মাথা ফেটে গেছে তিনি এখনো হাসপাতালে ভর্তি।
চাকরি অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে আন্দোলন বানচাল ও সমবায় সমিতির আর্থিক দুর্নীতি ঢাকতে পরিকল্পিতভাবে এ হামলা চালানো হয়েছে। এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। এ বিষয়ে কথা বলতে বাদিউল কবীরের ফোনে একাধিকবার ফোন দেয়া হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
সংযুক্ত পরিষদের বাদিউল গ্রুপের মহাসচিব নিজাম উদ্দিন আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, ঘটনার সময় আমি ছিলাম না। আমি যতটা শুনেছি, নুরুল ইসলামরা আদালতের রায় উপেক্ষা করে দখলের মাধ্যমে কেন্টিন চালাতে চাচ্ছিল। এটা নিয়ে তর্ক-বিতর্ক হয়েছে। সার্বিক বিষয়ে প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের অবহিত করা হয়েছে।
কর্মচারী নেতারা জানিয়েছেন, ঈদুল আজহার পর নুরুল ইসলাম গ্রুপের নেতা-কর্মীরা ক্যানটিন দখল করে নেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা পরিপ্রেক্ষিতে তারা পরিচালনায় দায়িত্ব নিয়েছে বলে দাবি করেছেন। এর আগে অভিযোগ জানালে সমবায় সমিতির বর্তমান কমিটির নানা অনিয়মের বিষয়ে তদন্ত করে ঢাকা জেলা সমবায় কার্যালয়। তদন্তে সমবায় কার্যালয় মঈনুল ইসলাম-মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বের কমিটির বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, স্বেচ্ছাচারিতা, অর্থ আত্মসাৎসহ নানা অনিয়ম-দুর্নীতির প্রমাণ পায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ৩ জুন সহকারী সচিব মো. গোলাম রাজ্জাককে সভাপতি করে ১১ সদস্যের অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করে দেয় সমবায় কার্যালয়। এ কমিটিতে মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমও সদস্য হিসেবে রয়েছেন।
আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর না হলেও ঈদের পর থেকেই এই কমিটি চালাচ্ছিল ক্যানটিন। পরে গত ২৩ জুন আগের কমিটির সম্পাদক মজিবুর রহমান মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করেন। যদিও আর্থিক ক্ষমতা পরবর্তীতে হস্তান্তর হওয়ার কথা ছিল। ঈদের পর ক্যানটিন দখলে সমবায় সমিতির আগের কমিটি আদালতে একটি রিট আবেদন করে। আদালত অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থাপনা কমিটির কার্যক্রমের ওপর স্থগিতাদেশ দিয়েছে বলে জানান সমবায় সমিতির নেতারা।
বুধবার (২৫ জুন) সকালে সচিবালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, চার নম্বর ভবনের পেছনে পদ্মা ক্যানটিন বন্ধ রয়েছে। ক্যানটিনের পাশে মিল্ক ভিটার দোকানটিও বন্ধ। এছাড়া ক্যানটিনের আশেপাশে খাবারের দোকানগুলো বন্ধ হয়েছে। ৪ নম্বর ভবনের নিচে খাবার ও মুদি-মনিহারীর দোকান এবং ওএমএসের দোকান বন্ধ রয়েছে। ৬ নম্বর ভবনের নিচে ২ নম্বর ক্যানটিনও বন্ধ। ৪ নম্বর ভবন এবং এর আশেপাশে বিপুলসংখ্যক পুলিশ অবস্থান নিয়েছেন। এ ভবনের নিচেই সমবায় সমিতির অফিস। সংযুক্ত পরিষদের নুরুল ইসলাম-মুজাহিদ গ্রুপের নেতা-কর্মীদের সচিবালয়ের বিভিন্ন স্থানে জটলা করে আলোচনা করতে দেখা গেছে।