আজ
|| ১লা জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ || ১৭ই আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ || ৫ই মহর্রম, ১৪৪৭ হিজরি
ভারতের ক্রিকেটে শুবমান গিল-যুগের শুরুটা হলো হার দিয়ে
প্রকাশের তারিখঃ ২৬ জুন, ২০২৫
প্রভাত স্পোর্টস: ভারতের ক্রিকেটে শুবমান গিল-যুগের শুরুটা হলো হার দিয়ে। পাঁচ টেস্ট সিরিজের প্রথমটিতে হেডিংলিতে ইংল্যান্ডের কাছে ৫ উইকেটে হেরেছে ভারত। এমন হারের পর দলের ভেতরে তো অবশ্যই, ভারতের সাবেক ক্রিকেটার-বিশ্লেষকেরাও কাঁটাছেড়া করছেন, কোথায় কী কী ভুল হলো গিলের দলের।
শেষ পর্যন্ত যত ভুলভ্রান্তির কথাই উঠে আসুক, দিন শেষে যা পাওয়া যায়, তা হচ্ছে ‘পাঠ’ বা ‘শিক্ষা’। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম স্পোর্টসকিডা বলছে, হেডিংলিতে হেরে তিনটি কঠোর বাস্তবতা টের পেয়েছে ভারত। যে শিক্ষা কাজে লাগাতে না পারলে সিরিজের পরের টেস্টগুলোতেও ভুগতে হবে।
ফলের ঘরে ইংল্যান্ড জয়ী। তবে পাঁচ দিনের খেলায় বেশির ভাগ ভালো অবস্থানে কিছু ভারতই ছিল। ম্যাচে কিছু সময় ভারতই ছিল এগিয়ে। যেমন প্রথম দিনের খেলা শেষে ভারতের রান ছিল ৩ উইকেটে ৩৫৯ (যদিও দ্বিতীয় দিনের সকালে ব্যাটিং-ব্যর্থতায় সংগ্রহটা ৫০০–তে পৌঁছায়নি)। প্রথম ইনিংসে বোলাররাও খারাপ করেননি। ৬ রানের লিড এনে দিয়েছেন তাঁরা। আবার চতুর্থ দিন চা–বিরতির সময়ও ম্যাচে ইংল্যান্ডের চেয়ে মোট ৩০৪ রানে এগিয়ে ছিল ভারত, হাতে ছিল ৬ উইকেট। এমনকি শেষ পর্যন্ত বেন স্টোকসের দলকে লক্ষ্যও দেওয়া গেছে ৩৭১ রানের, যা চতুর্থ ইনিংসের জন্য কম নয়।
কিন্তু ভারতের এসব ‘ভালো ক্রিকেট’ ইংল্যান্ডের মতো দলের বিপক্ষে যে যথেষ্ট নয়, সেটিই টের পাওয়া গেল পঞ্চম দিনে। সেদিন সকালে ইংল্যান্ড প্রথমে চাপ সামলেছে, এরপর যখন দরকার হয়েছে, তখনই রানের গতি বাড়িয়েছে। কখন রয়েসয়ে খেলতে হবে আর আক্রমণ করতে হবে, ইংল্যান্ডের এই বোঝাপড়াটা ছিল চোখে পড়ার মতো। এরও আগে ইংল্যান্ড ম্যাচে যখনই বেকায়দায় পড়েছে, ম্যাচের পরিস্থিতি অনুসারে খেলার চেষ্টা চালিয়ে গেছে। মোটের ওপর গিলদের চেয়ে ‘স্মার্ট’ ক্রিকেটই খেলেছেন স্টোকসরা।
পাঁচ ব্যাটসম্যানের সেঞ্চুরির পরও ম্যাচ হেরে অনাকাঙ্ক্ষিত এক ‘রেকর্ডে’ নাম লিখিয়েছে ভারত। এ রেকর্ডের দায় মূলত লোয়ার অর্ডার ব্যাটিংয়ের। ৫টি সেঞ্চুরি এসেছে বটে, দুই ইনিংস মিলিয়ে ৬টি শূন্যও দেখা গেছে। দুই ইনিংসেই ভারতের লোয়ার অর্ডার ব্যাটিং ভুগেছে। প্রথম ইনিংসে ভারত ৩ উইকেটে করেছিল ৪৩০ রান, সেখান থেকে ৪১ রান যোগ করতেই অললাউট। অথচ ইংল্যান্ড ৩৯৮ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে ফেলার পর শেষ ৩ উইকেট থেকে পেয়েছে ৬৭ রান। আবার দ্বিতীয় ইনিংসেও ভারত ৩৩৩/৫ উইকেট থেকে হুট করেই ৩৬৪ রানে অলআউট হয়ে গেছে। ভারতের লোয়ার অর্ডার ৪০-৫০ রান যোগ করতে পারলে ইংল্যান্ডের জন্য লক্ষ্য হতো ৪০০–এর বেশি, ম্যাচের ফলও হতে পারত ভিন্ন কিছু।
ভারতের লোয়ার অর্ডার ব্যাটিংয়ের এ দুর্বলতায় প্রথমেই হয়তো চোখে পড়বে রবীন্দ্র জাদেজাকে, যিনি দুই ইনিংসে করতে পেরেছেন ১১ ও ২৫ রান। তবে আরেকটি দিকও বিশেষভাবে লক্ষণীয়। বিরাট কোহলি আর রোহিত শর্মার না থাকা নিয়ে সবাই কথা বললেও ভারতের এই দলে রবিচন্দ্রন অশ্বিনের অনুপস্থিতি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। গত বছর বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফির সময় অবসর নেওয়া অশ্বিন দীর্ঘদিন ধরে ভারতের লোয়ার অর্ডার ব্যাটিংয়ে লেজের সারির ব্যাটসম্যানদের নিয়ে ইনিংস টেনে নিয়েছেন।
প্রথম ইনিংসে ৬টিসহ পুরো ম্যাচে মোট ৮টি ক্যাচ মিস করেছে ভারত। ইংল্যান্ডের মাটিতে গত ২০ বছরে কোনো দল এক টেস্টে এত বেশি ক্যাচ মিস করেনি। ইংল্যান্ডের ব্যাটসম্যানরা ‘নতুন জীবন’ পেয়ে যে রান করেছেন, তাতে ভারত ক্যাচ মিসের কারণেই ২০০–এর বেশি রান হজম করেছে। প্রথম ইনিংসে সেঞ্চুরি করা যশস্বী জয়সোয়াল একাই ফেলেছেন চারটি ক্যাচ। যা এক টেস্টে কোনো ভারতীয় ফিল্ডারের যৌথভাবে সর্বোচ্চ।
ফিল্ডিংয়ের বাইরে ভারতের বোলিংও দেখেছে করুণ বাস্তবতা। যশপ্রীত বুমরা ছাড়া অন্য কোনো বোলারই ইংল্যান্ডের ব্যাটসম্যানদের জন্য ‘হুমকি’ হয়ে উঠতে পারেননি। শার্দূল ঠাকুর, মোহাম্মদ সিরাজ ও প্রসিধ কৃষ্ণা—এই তিন পেসার ৯২ ওভার করে ৯ উইকেট নেওয়ার পথে দিয়েছেন ৪৮২ রান, ওভারপ্রতি ৫.২০ গড়ে। ইংল্যান্ড যে শেষ দিনে সাড়ে ৩০০–এর বেশি রান তুলেছে, তাতে বড় কারণ পেসারদের এই হাঁসফাঁস করা বোলিংই।
Copyright © 2025 প্রভাত. All rights reserved.