আজ
|| ৩রা জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ || ১৯শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ || ৭ই মহর্রম, ১৪৪৭ হিজরি
মূলধারার গণমাধ্যমও ভুয়া তথ্যের উৎস: প্রধান উপদেষ্টা
প্রকাশের তারিখঃ ২ জুলাই, ২০২৫
প্রভাত রিপোর্ট: মূলধারার গণমাধ্যমও ভুয়া তথ্যের উৎস উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস গুজব ও ভুয়া তথ্য (ডিসইনফরমেশন) মোকাবিলায় জাতিসংঘকে একটি কার্যকর কৌশল প্রণয়নের আহ্বান জানিয়েছেন । বুধবার (২ জুলাই) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় বাংলাদেশে ইউনেস্কোর প্রতিনিধি ও প্রধান সুসান ভাইজ এবং ইউনেস্কোর ফ্রিডম অব এক্সপ্রেশন অ্যান্ড সেফটি অব জার্নালিস্টস বিভাগের সিনিয়র প্রজেক্ট অফিসার মেহদি বেনচেলাহ সাক্ষাতে এলে তিনি এ আহ্বান জানান।
‘মুক্ত, স্বাধীন ও বহুমাত্রিক গণমাধ্যম ইস্যুতে বাংলাদেশের অবস্থান মূল্যায়ন’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে ইউনেস্কোর কর্মকর্তারা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। প্রতিবেদনটি যৌথভাবে প্রস্তুত করেছে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) ও ইউনেস্কো। প্রতিবেদনটির বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এই প্রতিবেদনের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, এখন আমাদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ গুজব ও ভুয়া তথ্য। কিছু কিছু তথ্য দেশের বাইরের কিছু উৎস থেকে ছড়ানো হয়, আবার কিছু স্থানীয়ভাবে ছড়ায়। এটা যেন নিয়মিত বোমাবর্ষণ।
সোশ্যাল মিডিয়ার পাশাপাশি মূলধারার সংবাদমাধ্যমও অনেক সময় ভুয়া তথ্যের উৎস উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা এই গুজব ও ভুয়া তথ্য মোকাবিলায় জাতিসংঘের সহায়তা চান। তিনি বলেন, এক্ষেত্রে জাতিসংঘের শুধু সরকারের সঙ্গে নয়, গণমাধ্যমের সঙ্গেও কথা বলা উচিত।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, গণমাধ্যমের জন্য স্বাধীন নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা প্রয়োজন। যদি কোনো গণমাধ্যম অব্যাহতভাবে গুজব ছড়ায়, তাহলে সেই গণমাধ্যমকে মনে করিয়ে দিতে হবে, তারা আর বিশ্বাসযোগ্য নয়। আপনারা জাতিসংঘ, আপনাদের বক্তব্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ, আপনাদের সহায়তা দরকার।
ড. ইউনূসের এ অনুরোধের জবাবে ইউনেস্কোর প্রতিনিধি সুসান ভাইজ বলেন, বৃহস্পতিবার যে প্রতিবেদন প্রকাশিত হতে যাচ্ছে, সেখানে বিভিন্ন বিষয়ে মূল্যায়নের পাশাপাশি আত্ম-নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি বিশেষভাবে তুলে ধরা হয়েছে। সুসান বলেন, নানা গুরুত্বপূর্ণ মূল্যায়নের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী সুপারিশও রয়েছে প্রতিবেদনে। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে সামঞ্জস্য আনতে বিচারক, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।
ইউনেস্কোর সিনিয়র প্রজেক্ট অফিসার মেহদি বেনচেলাহ বলেন, প্রতিবেদনটিতে সাংবাদিকদের কাজের পরিবেশ এবং নারী সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিয়েও সুপারিশ থাকবে। তিনি বলেন, বিষয়গুলোতে সরকারের কার্যকর পদক্ষেপ অনেক বড় প্রভাব ফেলতে পারে।
ইউএনডিপির ‘স্ট্রেনদেনিং ইনস্টিটিউশনস, পলিসিস অ্যান্ড সার্ভিসেস (এসআইপিএস)’ প্রকল্পের আওতায় এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও গণমাধ্যম উন্নয়নে ইউনেস্কোর ম্যান্ডেট অনুসরণ করে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে বলে জানান দুই কর্মকর্তা।
ডিজিটাল প্লাটফর্মের পাশাপাশি নিয়মিত গণমাধ্যমও অনেক অপপ্রচারের উৎস উল্লেখ করে এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জাতিসংঘের ভূমিকা কামনা করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আপনারা শুধু সরকারের সঙ্গে কথা বলেন না, আপনারা মিডিয়ার সঙ্গেও কথা বলুন। একটি স্বাধীন নীতিমালা প্রয়োজন, যদি কোনও মিডিয়া আউটলেট মিথ্যা তথ্য ছড়ানো অব্যাহত রাখে, তবে সেই গণমাধ্যমকে যেন মনে করিয়ে দেয়া যায়,সেটি বিশ্বাসযোগ্য নয়।’
তিনি বলেন, ‘আপনারা জাতিসংঘ। আপনার কথাগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা আপনাদের সমর্থন চাই।’
ইউনেস্কোর প্রতিনিধি সুসান ভাইজ বলেন, বৃহস্পতিবার যে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হচ্ছে, তাতে অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি ‘স্ব-নিয়ন্ত্রণের’ বিষয়টি তুলে ধরা হবে। তিনি বলেন, কী কাজ করছে, কী কাজ করছে না-তা নিয়ে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে এবং মূল্যায়নে আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ রয়েছে। কর্মকর্তা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং বিচার বিভাগকে এই মানের সঙ্গে তাদের অনুশীলনকে আরও ভালোভাবে সামঞ্জস্য করার জন্য প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হবে।
ইউনেস্কোর জ্যেষ্ঠ প্রকল্প কর্মকর্তা মেহদি বেনচেলাহ বলেন, প্রতিবেদনে সাংবাদিকদের কাজের পরিবেশ, যা বিশ্বব্যাপী উদ্বেগের বিষয় এবং বার্তাকক্ষে নারী সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিয়েও কিছু সুপারিশ করা হবে। এসব বিষয়ে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ ব্যাপক প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করেন তিনি।
ইউএনডিপির স্ট্রেনদেনিং ইনস্টিটিউশনস, পলিসি অ্যান্ড সার্ভিসেস (এসআইপিএস) প্রকল্পের কাঠামোর আওতায় এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও গণমাধ্যমের উন্নয়নে ইউনেস্কোর ম্যান্ডেটের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।
Copyright © 2025 প্রভাত. All rights reserved.