আজ
|| ১১ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ || ২৭শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ || ১৫ই মহর্রম, ১৪৪৭ হিজরি
বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী, তবুও কমছে না মশা
প্রকাশের তারিখঃ ৮ জুলাই, ২০২৫
প্রভাত রিপোর্ট: দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ৪২৫ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ১২০ জনই বরিশাল বিভাগে সিটি করপোরেশনের বাইরের এলাকার। আর এ সময়ের মধ্যে মারা গেছেন ৩ জন। চলতি বছর এখনও পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে ৫১ জনের এবং হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৩ হাজার ১৮৮ জন। মঙ্গলবার (৮ জুলাই) স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের দেওয়া তথ্য থেকে এসব জানা যায়। স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, জুলাইয়ে এখনও পর্যন্ত ২ হাজার ৮৯২ জন রোগী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে এবং মারা গেছেন ৯ জন। সারা দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে বর্তমানে ১ হাজার ৩৫১ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছেন। তাদের মধ্যে ঢাকায় ৩৮৬ জন, বাকি ৯৬৫ জন ঢাকার বাইরে বিভিন্ন বিভাগে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য বলছে, চলতি বছরের জানুয়ারিতে ১ হাজার ১৬১ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৩৭৪ জন, মার্চে ৩৩৬ জন, এপ্রিলে ৭০১ জন এবং মে’তে ১ হাজার ৭৭৩ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাদের মধ্যে জানুয়ারিতে ১০ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৩ জন, এপ্রিলে ৭ জন, মে’তে ৩ জন মারা গেছেন ।
ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন মশা নিয়ন্ত্রণে যে টাকা খরচ করে, তাতে পরিবর্তন হওয়ার কথা। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে উত্তরে ১১০ কোটি, দক্ষিণে ৪৪ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। তবু মশা কমে না। ১৩টি ওয়ার্ডে লার্ভার ঘনত্ব সীমার চেয়েও বেশি। এডিস মশা মারতে বিশেষ কর্মসূচি চালানো হচ্ছে কিছু ওয়ার্ডে, মাইকিং, মোবাইল কোর্ট, লার্ভিসাইডিং, লিফলেট বিতরণ চলছে। তবু মশা কমছে না। পরিস্থিতি বলছে, সরকার ও স্থানীয় কর্তৃপক্ষ যতটা ব্যস্ত রোগী দেখভালে, ততটা নয় মশা মারায়। ফলে রোগী বাড়ে, হাসপাতাল ভরে, পরিবারে কান্না নামে। অথচ সমাধানটা সরল যদি মশা না থাকে, রোগও থাকবে না।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রশাসক মো. শাহজাহান মিয়া বলেন, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও বিশেষ মশক নিধন এবং পরিচ্ছন্নতা অভিযানের চতুর্থ পর্ব চলছে। বিশেষ এই অভিযানের মূল উদ্দেশ্য হলো স্থানীয় নাগরিকদের সম্পৃক্তকরণ ও জনসচেতনতা বৃদ্ধি। তিনি বলেন, এডাল্টিসাইডিংয়ে ব্যবহৃত প্রতিটি ফগার মেশিন প্রতি কীটনাশক ৩০ লিটার থেকে দ্বিগুণ বৃদ্ধি করে ৬০ লিটার করা হয়েছে। এ ছাড়া, মশার ওষুধ ছিটানো নিশ্চিতকরণে অঞ্চলভিত্তিক তদারকি টিম গঠন করা হয়েছে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান বলেন, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজন সবার সচেতনতা। সবাই মিলে সমন্বিতভাবে কাজ করলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হবে। একই সঙ্গে বিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের এডিস মশার উৎপত্তিস্থলের বিষয়ে সচেতন করা হচ্ছে, যেন তারা তাদের বাসাবাড়ির আশপাশে পরিত্যক্ত পাত্রে পানি জমে থাকতে না দেয়।
ডিএনসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইমরুল কায়েস চৌধুরী বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কীটতাত্ত্বিক জরিপ অনুসারে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের আওতাধীন ছয়টি ওয়ার্ডে মশার লার্ভার ঘনত্ব বেশি পাওয়া গেছে। সেসব ওয়ার্ডে সমন্বিতভাবে লার্ভা ও উড়ন্ত মশা নিধনে আজ থেকে একযোগে কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। অভিযানের আওতায় এডিস মশার প্রজননস্থল অপসারণ, লার্ভিসাইডিং ও ফগিং, জনসচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ, মাইকিং, সতর্কতামূলক নোটিশ প্রদান এবং ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে।
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় বিভাগের সচিব মো. রেজাউল মাকছুদ জাহেদী বলেন, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন জনগণের অংশগ্রহণ। স্থানীয় বাসিন্দাদের অংশগ্রহণ ছাড়া বিশাল জনসংখ্যার এই ঢাকা শহরে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সম্ভব নয়। আমরা যদি সচেতন হই, অন্তত নিজের আঙিনা নিজে পরিষ্কার করি, তাহলে ডেঙ্গুর প্রকোপ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
সারাদেশেই ছড়িয়ে পড়েছে। আগে বর্ষার পূর্বেই মশা নিধনের কর্মসূচি চোখে পড়ত, এখন সেটা চোখে পড়ে না। রোগী বাড়তে থাকলে হাসপাতালে শয্যা বাড়ানো, ওষুধ মজুত, ডাক্তার-নার্স আনা, ফি নির্ধারণসবই হয় দ্রুত। এ ব্যাপারে চিকিৎসা নিয়ে কিছু বিষয় দৃশ্যমান হলেও মশা মারার দিকে নজর ততটা নেই। ফলে মশার উপদ্রবে নাজেহাল নগরবাসী। মশক নিধনে কোনো কাজ করছে না ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। দিন-রাত ২৪ ঘণ্টাই বাসাবাড়িতে মশা কামড়ায়। তবে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) দাবি, মশা নিধনে তারা নিয়মিত ওষুধ ছিটান। কিন্তু যে হারে মশার উপদ্রব বাড়ছে, তা নিধনে সিটি করপোরেশনকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তার পরও তারা জনগণকে সম্পৃক্ত করে মশা নিধনের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ২৩ বছরের যে হিসাব দিয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ডেঙ্গুর বিস্তার বাড়ছে। অথচ মশা মারার কাজটা বারবার ঢিলেঢালা। বছরে শতকোটি টাকা ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন মশক নিধনে খরচ করে। কিন্তু মশা কমে না; বরং বাড়ে। এর সবচেয়ে বড় প্রমাণ মারা যাওয়া আর হাসপাতালে ভর্তি হওয়া মানুষের সংখ্যা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তন, অপরিকল্পিত নগরায়ণ, পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকা, আর সচেতনতার অভাবে ডেঙ্গুর বিস্তার রোধ করা যাচ্ছে না। অধ্যাপক ডা. মুশতাক হোসেন বলছেন, মশা না মেরে শুধু চিকিৎসায় জোর দিলে কিছু হবে না। বাহক নিয়ন্ত্রণ ছাড়া রোগ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। এ মুহূর্তে ভেক্টর ম্যানেজমেন্টে জোর দেয়া দরকার।
Copyright © 2025 প্রভাত. All rights reserved.