আজ
|| ১১ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ || ২৭শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ || ১৫ই মহর্রম, ১৪৪৭ হিজরি
প্রতিদিনের নরকযন্ত্রণা ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের রূপগঞ্জের নয় কিলোমিটার পথ
প্রকাশের তারিখঃ ৯ জুলাই, ২০২৫
প্রভাত সংবাদদাতা, রূপগঞ্জ : ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের রূপগঞ্জ অংশে যানজট এখন নিত্যদিনের যন্ত্রণার নাম। বিশেষ করে তারাবো বিশ্বরোড থেকে ভুলতা গাউছিয়া পর্যন্ত মাত্র ৯ কিলোমিটার রাস্তা পার হতে প্রতিদিন মানুষকে ব্যয় করতে হচ্ছে ৩ থেকে ৫ ঘন্টা সময়।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, সকাল, দুপুর, রাত – কোনও সময়ই এই সড়কে স্বস্তি নেই। কর্মজীবী মানুষ, স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রী, রোগী পরিবহন এমনকি পণ্যবাহী যানবাহনও এই যানজটের কারণে পড়ছে চরম ভোগান্তিতে।
ঢাকা-সিলেট মহাসড়ককে আট লেনে উন্নীত করার কাজ চললেও রাস্তার সংস্কার ও সম্প্রসারণে ধীরগতি মানুষের দুর্ভোগ আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
এ সড়ক দিয়ে সিলেট, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ভৈরব, নরসিংদী, কিশোরগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, গাজীপুরসহ বিভিন্ন জেলার প্রতিদিন শত শত দূরপাল্লার মালবাহী ট্রাক, বাস ও অন্যান্য গণপরিবহণ চলাচল করে। রাস্তার কাজ চলার কারণে যানবাহন নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারছে না এতে সৃষ্টি হচ্ছে দীর্ঘ যানজট।বৃষ্টি দিন বা দুর্ঘটনার সময় পরিস্থিতি হয়ে ওঠে অবর্ণনীয়।
ঢাকা সিলেট মহাসড়কের ওপর যত্রতত্র যাত্রী ওঠানামা করায় যানজট আরও তীব্র হচ্ছে। তারাবো, বরাবো,রূপসি,বরপা ,কর্ণগোপ, ভুলতা, গাউছিয়া প্রতিটি পয়েন্টে দেখা যায় বাস-লেগুনা-অটোরিকশা দাঁড়িয়ে যাত্রী ডাকছে। নেই নির্দিষ্ট স্টপেজ, নেই শৃঙ্খলা।
এই মহাসড়কের দুইপাশে রয়েছে অসংখ্য শিল্পকারখানা, মার্কেট, হাট-বাজার। বিশ্বরোড হতে গাউছিয়া পর্যন্ত প্রতিটি পয়েন্টেই রয়েছে বিপুল লোক চলাচল। রাস্তার পাশে অবৈধ পার্কিং এবং অটো-টেম্পুর স্ট্যান্ডও যান চলাচল ব্যাহত করছে।যানজট নিয়ন্ত্রণে ট্রাফিক পুলিশের উপস্থিতি পর্যাপ্ত নয়। যেখানে নিয়মিত ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট প্রয়োজন, সেখানে একপাশে যানবাহন থামিয়ে রাখাই যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে।প্রতিদিন এই মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে হাইওয়ে পুলিশের চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে। ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, বাস থেকে টাকা তোলার কারণে রাস্তার পাশে দীর্ঘ সময় ধরে যানবাহন দাঁড়িয়ে থাকে, এতে যানজট আরও বাড়ে।
রূপগঞ্জের অভ্যন্তরীণ সড়কগুলোর উন্নয়ন না থাকায় সব ধরনের গাড়ি মহাসড়কেই চলে, ফলে চাপ বহুগুণে বৃদ্ধি পায়।
রাজধানী ঢাকার একেবারে গেটে অবস্থান রূপগঞ্জের। এই সুবিধাজনক অবস্থান চাকরি, ব্যবসা ও জীবিকার জন্য আশীর্বাদ হলেও যানজটের কারণে প্রতিদিন এই এলাকাবাসীকে পোহাতে হচ্ছে চরম ভোগান্তি।
সামসুল হক খান স্কুল এন্ড কলেজ এর ছাত্রী সামিয়া জাহান বলেন,সকাল ৭টায় বের হই, কলেজে পৌঁছাই ১০টার পরে। ক্লাস মিস হয়। আবার ফেরার সময়ও বাসায় পৌঁছাতে রাত হয়ে যায়। পড়তে বসতে পারি না।
ব্যাংক কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন,
রূপগঞ্জ থেকে ঢাকায় অফিসে যেতে একঘন্টা সময় লাগার কথা। কিন্তু যানজটে দুই-চার ঘন্টা লেগে যায়। সকালে সময়মতো পৌঁছানো যায় না, রাতে পরিবারের সাথেও সময় কাটানো যায় না।
গার্মেন্টস শ্রমিক জাহানারা বেগম বলেন সকালে বাসা থেকে বেরিয়ে দুপুরের আগে গার্মেন্টসে পৌঁছানো যায় না। ফেরার সময়ও একই অবস্থা। রাস্তায় সময় শেষ হয়, বাধ্য হয়ে পায়ে হেঁটে চলে যেতে হয়।
পণ্যবাহী ট্রাকচালক বলেন,
ঢাকা থেকে সিলেট যেতে ৬-৭ ঘন্টা লাগলেও এই ৯ কিলোমিটার পার হতে ৩-৪ ঘন্টা চলে যায়। তেলের খরচ বাড়ে, পণ্য পৌঁছাতে দেরি হয়, মালিক গালাগালি দেয়।
নিত্যদিনের এই যানজট নিরসনের জন্য নির্মাণকাজ সমন্বয় করে রাতের বেলা করা, ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট টিম বৃদ্ধি, যানবাহনের লেন ডিভাইডার নিশ্চিতকরণ এবং জরুরি ভিত্তিতে বিকল্প রোড চালু করা ছাড়া এই সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়।
প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ এ পথে যাতায়াত করে। ৯ কিলোমিটার রাস্তা পাড়ি দিতে ৩ থেকে ৫ ঘন্টা সময় ব্যয় একটি অমানবিক পরিস্থিতি। জনদুর্ভোগ লাঘবে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া না হলে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক রূপগঞ্জ অংশের যানজট ভবিষ্যতে আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করবে – যা অর্থনীতি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায় ব্যাপক প্রভাব ফেলবে।
ভুলতা হাইওয়ে পুলিশের ইনচার্জ মোঃ জাহানুর আলী বলেন,এশিয়ান হাইওয়ে নির্মাণ কাজ চলছে, সাথে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক আট লেনে উন্নয়ন প্রকল্পের কাজও চলমান। এছাড়া রাস্তা ভাঙা থাকার কারণেই মূলত এই অংশে যানজট লেগেই থাকছে।
তিনি আরও জানান, যানজট নিরসনে হাইওয়ে পুলিশ নিয়মিত কাজ করছে।
Copyright © 2025 প্রভাত. All rights reserved.