আজ
|| ১১ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ || ২৭শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ || ১৫ই মহর্রম, ১৪৪৭ হিজরি
জুলাই গণহত্যার দায় স্বীকার, রাজসাক্ষী হলেন চৌধুরী মামুন
প্রকাশের তারিখঃ ১০ জুলাই, ২০২৫
প্রভাত রিপোর্ট: জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায় স্বীকার করেছেন সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন। তিনি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বলেছেন, ‘জুলাই-আগস্টে আন্দোলন চলাকালে আমাদের বিরুদ্ধে হত্যা-গণহত্যা সংঘটনের যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা সত্য। এ ঘটনায় আমি নিজেকে দোষী সাব্যস্ত করছি। আমি রাজসাক্ষী হয়ে জুলাই-আগস্ট আন্দোলন চলাকালে যে অপরাধ সংঘটিত হয়েছে, তার বিস্তারিত আদালতে তুলে ধরতে চাই। রহস্য উন্মোচনে আদালতকে সহায়তা করতে চাই।’ বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) দুপুরে বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ দায় স্বীকার করে এমন বক্তব্য দেন তিনি। এ সময় ট্রাইব্যুনাল তার রাজসাক্ষী হওয়ার আবেদন মঞ্জুর করে আদেশ দেন।
রাজসাক্ষী হওয়ায় চৌধুরী মামুনের আইনজীবী জায়েদ বিন আমজাদ সাবেক পুলিশ প্রধানের পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করার জন্য প্রার্থনা করেন। ট্রাইব্যুনাল এ বিষয়ে যথাযথ আদেশ দেবেন বলে জানান চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। এর কিছুক্ষণ আগে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। একইসঙ্গে এই মামলায় প্রসিকিউশনের সূচনা বক্তব্য উপস্থাপনের জন আগামী ৩ আগস্ট দিন ধার্য করেছেন আদালত। পাশাপাশি আসামিদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আগামী ৪ আগস্ট দিন ধার্য করা হয়েছে। মামলা থেকে আসামিদের অব্যাহতির আবেদন খারিজ করে বৃহস্পতিবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ আদেশ দেন। ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী। এর মাধ্যমে জুলাই গণহত্যা মামলায় শেখ হাসিনাসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হলো।
আদালতে প্রসিকিউশনের পক্ষে ছিলেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। আসামিদের মধ্যে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান পলাতক। তাদের পক্ষে ছিলেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন। অপর আসামি সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী জায়েদ বিন আমজাদ।
চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত ছিলেন। অভিযোগ গঠনের আগে ট্রাইব্যুনাল তাকে কথা বলার সুযোগ দেন। এসময় চৌধুরী মামুন জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায় স্বীকার করে বক্তব্য রাখেন। এরপর ট্রাইব্যুনাল ৫টি অপরাধে অভিযোগ গঠন করে তিন আসামির বিরুদ্ধে বিচার শুরুর নির্দেশ দেন। গত ৭ জুলাই শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের বিষয়ে আদেশের জন্য দিন ধার্য করা হয়।
গত ১ জুলাই এ মামলায় অভিযোগ গঠনের পক্ষে শুনানি শেষ করে প্রসিকিউশন। সেদিন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন। শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন। সাবেক পুলিশ প্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের পক্ষে আইনজীবী জায়েদ বিন আমজাদ উপস্থিত ছিলেন।
গত ১৭ জুন পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়ে নোটিশ জারি করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এ বিজ্ঞপ্তি জারি করেন ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার। ট্রাইব্যুনালের নির্দেশে পত্রিকায় এই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। ৭ দিনের মধ্যে হাজির না হলে তাদের অনুপস্থিতিতে বিচারকাজ চলবে বলে জানানো হয়।
গত ১ জুন জুলাই-আগস্টে গণহত্যার ঘটনায় মানবতা বিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে ৫টি অভিযোগ আমলে নেয় ট্রাইব্যুনাল। একইসঙ্গে এই মামলায় শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান কামালের বিরুদ্ধে নতুন করে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। সেদিন আদালতে শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ পড়ে শোনান চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর আব্দুস সোবহান তরফদার ও মিজানুল ইসলাম। যা সব গণমাধ্যমে সম্প্রচার করা হয়।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের একটি মামলায় রাজসাক্ষী হয়েছেন পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। নিজের অপরাধের দায় স্বীকার করে তিনি ট্রাইব্যুনালে বলেছেন ‘আই ফিল গিলটি’। এরপর তার নিরাপত্তা চেয়ে ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন তার আইনজীবী। বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) দুপুরে অভিযোগ গঠনের আদেশের সময় ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারিক প্যানেলে দায় স্বীকার করেন চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। এসময় ট্রাইব্যুনাল তার রাজসাক্ষী হওয়ার আবেদন মঞ্জুর করে আদেশ দেন। এরপর জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে আজ আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফর্মাল চার্জ) গঠন করে আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।
ট্রাইব্যুনালের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে তিনি তার লিখিত বক্তব্যে আদালতকে জানান, যারা এ অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত তাদের মুখোশ উন্মোচন করতে চান তিনি। এসময় চৌধুরী মামুনের আইনজীবী জায়েদ বিন আমজাদ সাবেক পুলিশপ্রধানের পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করার জন্য প্রার্থনা করেন। ট্রাইব্যুনাল এ বিষয়ে যথাযথ আদেশ দেবেন বলে জানান চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।
মামলায় অভিযোগ গঠনের মধ্যদিয়ে তিন আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হলো। একই সঙ্গে মামলার সূচনা বক্তব্য উপস্থাপনের জন্য আগামী ৩ আগস্ট ও রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ৪ আগস্ট দিন ঠিক করেন আদালত।
চিফ প্রসিকিউটর বলেন, ‘মামুন বলেছেন, তিনি একজন সাক্ষী হিসেবে ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের যে সব ঘটনা ঘটেছে সমস্ত কিছু জানবার কথা। তিনি সব তথ্য আদালতকে উদ্ঘাটনের ব্যাপারে অ্যাপ্রুভার হতে চেয়েছেন। সেই প্রার্থনা আদালত মঞ্জুর করেছেন। সুতরাং তিনি পরবর্তীসময়ে আদালতের সুবিধাজনক সময়ে তার বক্তব্য উপস্থাপনের মাধ্যমে আদালতকে প্রকৃত ঘটনা উদ্ঘাটনে সাহায্য করবেন। এতে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে গণ্য হবেন।’
যেহেতু তিনি অ্যাপ্রুভার হতে চেয়ে আবেদন করেছেন, তার নিরাপত্তার সংকট হতে পারে। তাই চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের আইনজীবী জায়েদ বিন আমজাদ তার পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে আদালতে প্রার্থনা জানান। আদালত এ সংক্রান্ত বিষয়ে যথাযথ আদেশ দেবেন।
রাজসাক্ষী হওয়াই তিনি ক্ষমা পাবেন কি না এমন প্রশ্নে চিফ প্রসিকিউটর বলেন, সেটা আদালতের এখতিয়ার। আদালত চাইলে তাকে ক্ষমা করতে পারেন বা অন্য কোনো আদেশ দিতে পারেন।
Copyright © 2025 প্রভাত. All rights reserved.