আজ
|| ১২ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ || ২৮শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ || ১৬ই মহর্রম, ১৪৪৭ হিজরি
অবশেষে নিরস্ত্রীকরণের পথে হাঁটলো কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টি
প্রকাশের তারিখঃ ১১ জুলাই, ২০২৫
প্রভাত ডেস্ক: চার দশকের সশস্ত্র লড়াইয়ের পর অবশেষে নিরস্ত্রীকরণের পথে হাঁটলো কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টি (পিকেকে)। শুক্রবার ইরাকের উত্তরাঞ্চলের কুর্দি অঞ্চলে প্রতীকী এক অনুষ্ঠানে নিজেদের অস্ত্র ধ্বংস করা শুরু করেছে সংগঠনটির যোদ্ধারা। এতে তুরস্কের সঙ্গে রক্তাক্ত সংঘাতের দীর্ঘ অধ্যায়ের অবসানের ইঙ্গিত মিলছে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এ খবর জানিয়েছে।
পিকেকে’র সশস্ত্র আন্দোলন শুরুর পর ১৯৮৪ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত সংঘাতে নিহত হয়েছেন অন্তত ৪০ হাজার মানুষ। তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল থেকে বহু কুর্দি নাগরিক প্রাণ বাঁচাতে দেশের অন্য অঞ্চলে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন।
পিকেকে’র এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোয়ান। তিনি বলেন, আমাদের দেশের পায়ে পরানো রক্তাক্ত শিকল ছিঁড়ে ফেলার সময় এসেছে। এই পদক্ষেপ গোটা অঞ্চলের জন্যই মঙ্গলজনক হবে।
পিকেকে চলতি বছরের মে মাসে সশস্ত্র সংগ্রাম পরিত্যাগের ঘোষণা দেয়। এরই ধারাবাহিকতায় সংগঠনের ২০ থেকে ৩০ জন যোদ্ধা নিজ উদ্যোগে অস্ত্র ধ্বংস করেছেন। এই প্রক্রিয়া পুরো গ্রীষ্মজুড়ে ধাপে ধাপে চলবে। তবে অস্ত্রগুলো কোনও রাষ্ট্র বা সংস্থার কাছে হস্তান্তর করা হচ্ছে না।
পিকেকে-র কারাবন্দি নেতা আবদুল্লাহ ওজালান এ পদক্ষেপকে ‘সশস্ত্র সংঘাতের যুগ থেকে গণতান্ত্রিক রাজনীতির যুগে স্বেচ্ছায় উত্তরণের প্রতীক’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। জুন মাসে ধারণকৃত এক ভিডিওতে তিনি বলেন, এই রূপান্তর একটি ঐতিহাসিক অগ্রগতি।
১৯৯৯ সাল থেকে তুরস্কের ইমরালি দ্বীপের একটি কারাগারে একাকী বন্দি আছেন ওজালান। তবুও তিনিই সংগঠনের মূল আদর্শিক ও কৌশলগত নেতা হিসেবে গণ্য হন।
ইরাকের সুলেমানিয়ায় আয়োজিত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় ও কুর্দি আঞ্চলিক সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। আল জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, যদিও পদক্ষেপটি প্রতীকী, তবে তাৎপর্যপূর্ণ। তবে এটি প্রক্রিয়ার শুরু মাত্র—এখনও বহু পথ বাকি।
সাংবাদিক মাহমুদ আবদেলওয়াহেদ বলেন, পিকেকে তাদের নেতার মুক্তি চায়। তারা চায় তিনি যেন ইরাকের কুর্দি অঞ্চলে এসে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নেতৃত্ব দেন।
তুরস্কের সীমান্ত লাগোয়া ইরাকের আমেদি জেলার পাহাড়ি এলাকাগুলোতে এখনও পিকেকে-র নিয়ন্ত্রণে শত শত গ্রাম রয়েছে। সেখানকার অনেক এলাকায় এখনও কৃষিজমি ও ঘরবাড়ি ধ্বংসাবশেষে পরিণত।
স্থানীয় এক কৃষক শিরওয়ান সিরকলি বলেন, তুর্কি গোলাবর্ষণে আমার খামার পুড়ে ছাই হয়েছে। আমার ভাই তার ৩ লাখ ডলারের পশু খামার হারিয়েছেন। একসময় যে গ্রামে ১০০টি পরিবার ছিল, এখন মাত্র ৩৫টি রয়ে গেছে।
স্থানীয় আরেক নেতা আহমাদ সাদুল্লাহ বলেন, পিকেকে-র উপস্থিতির কারণে আমাদের ওপর দুর্যোগ নেমে এসেছে। যদি তারা সরে যায়, গোলাবর্ষণও বন্ধ হবে। আমরা চাই, শান্তি বাস্তবে কার্যকর হোক, যাতে নিজের জমিতে ফিরে যেতে পারি।
এই নিরস্ত্রীকরণ প্রক্রিয়া নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে তুরস্কের কুর্দিপন্থি ডিইএম পার্টি, মিডিয়া এবং আন্তর্জাতিক মহল। তুরস্ক, ইরাক ও কুর্দি আঞ্চলিক সরকারের যৌথ সমন্বয়ে এই প্রক্রিয়ার পরবর্তী ধাপগুলো বাস্তবায়িত হবে।
তুরস্কের অভ্যন্তরে রাজনৈতিকভাবেও এই মুহূর্তের গুরুত্ব অপরিসীম। এমনকি অতীতে শান্তি উদ্যোগকে ‘দেশদ্রোহিতা’ আখ্যা দেওয়া জাতীয়তাবাদী আন্দোলন পার্টিও (এমএইচপি) এখন এই উদ্যোগকে সমর্থন জানিয়েছে। প্রধান বিরোধী দল সিএইচপিও বলছে, তারা এবার শান্তির পক্ষে। তবে পিকেকে-কে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে তালিকাভুক্ত রেখেছে তুরস্ক, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
কূটনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, পিকেকে-র নিরস্ত্রীকরণ একটি সম্ভাবনাময় অধ্যায়ের সূচনা হলেও স্থায়ী শান্তি নিশ্চিত করতে আরও গভীর রাজনৈতিক সংলাপ এবং আস্থার পরিবেশ তৈরি করা জরুরি।
Copyright © 2025 প্রভাত. All rights reserved.