প্রভাত রিপোর্ট: জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ‘চাঁদাবাজ ও দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে আগামীতে বড় ধরনের আন্দোলন আসছে’ বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, ‘যারা দুর্নীতি করবে, চাঁদাবাজি করবে- এনসিপি তাদের বিরুদ্ধেই আন্দোলন করবে।’ সেই লড়াইয়ে সবাইকে প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। শুক্রবার (১১ জুলাই) বিকালে যশোর শহরের কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মোড়ে আয়োজিত পথসভায় নাহিদ ইসলাম আরও বলেন, ‘একটি রাজনৈতিক দল তাদের লাখ লাখ, কোটি কর্মীর কথা বলে। আমাদের এসব কথা শোনাবেন না। ফ্যাসিবাদীদের আমলে আমরা দেখেছি, আপনাদের কত মানুষ ছিল। যদি ইনসাফের সঙ্গে থাকেন, ন্যায়ের পক্ষে থাকেন– তাহলে একজন মানুষ এক লাখ মানুষের চেয়েও শক্তিশালী হয়ে যায়।’
এনসিপি দুর্নীতির ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে একটি ইনসাফভিত্তিক সমাজ গড়তে চায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘দেশের মানুষ বিচার, সংস্কার ছাড়া কোনও নির্বাচন হতে দেবে না। যারা সংস্কারে বাধা দিচ্ছে, তারাই নির্বাচনকে পিছিয়ে দিচ্ছে।’
সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে রাজনৈতিক দলীয়করণ করতে না দেওয়ার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমরা কোনও সরকারি প্রতিষ্ঠানকে রাজনৈতিক দলীয়করণ করতে দেবো না। পুলিশ প্রশাসন নির্দলীয় থাকবে। আমরা চাই না সেনাবাহিনীর কোনও অফিসার গুমের সঙ্গে জড়িত থাকুক।’
নির্বাচন কমিশনের দলীয়করণের তীব্র সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘গত ১৬ বছরে নির্বাচন কমিশনকে সব থেকে বেশি দলীয়করণ করা হয়েছে। অতএব, এই নির্বাচন কমিশনে নিরপেক্ষ নিয়োগ দিতে হবে। কিন্তু একটি রাজনৈতিক দল সেটি করতে দিতে চায় না। ‘আমরা বাংলাদেশে আর কোনও ফ্যাসিবাদী সরকার প্রতিষ্ঠা করতে দেবো না। আমরা ইনসাফভিত্তিক অর্থনীতি প্রতিষ্ঠা করতে চাই।’
যশোরের স্থানীয় সমস্যাগুলো নিয়েও এনসিপি অবগত আছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা ভবদহ এলাকার জলাবদ্ধতার কথা জানি, যশোরের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার দুরবস্থার কথা জানি। বেনাপোলের দুর্নীতি আর মানবপাচারের কথাও আমরা জানি। আমরা চাই দ্রুত এই সমস্যাগুলোর সমাধান হোক।’
পথসভায় জাতীয় নাগরিক পার্টির সদস্যসচিব আকতার হোসেন তার বক্তব্যে বলেন, ‘আমরা শাপলা মার্কার কথা বলেছি, আর তারা জাতীয় ফুলের উছিলায় ক্যাম্পেইন শুরু করেছে। আমরা সংস্কারের কথা বলছি, আর তারা সংস্কার ছাড়া নির্বাচনের কথা বলছে। এখনও শেখ হাসিনার পুলিশ বহাল আছে, শেখ হাসিনার প্রশাসন বহাল আছে, আর তারা শুধু নির্বাচন চায়।’ তিনি আরও বলেন, ‘হাসিনা ভারতের কাছে বাংলাদেশকে বন্ধক দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, আমরা ভারতকে যা দিয়েছি ভারত তা সারাজীবন মনে রাখবে। আমরা বলছি, আমরাও মনে রেখেছি। আমরা ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক চাই, কিন্তু তাদের দাদাগিরি মেনে নেবো না। বাংলাদেশ একটি স্বাধীন ভূখণ্ড, এখানে কোনও বিদেশির দাদাগিরি চলবে না।’ নতুন বন্দোবস্তের কথা উল্লেখ করে আকতার হোসেন বলেন, ‘যতক্ষণ না পর্যন্ত নতুন বন্দোবস্ত কার্যকর হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে। আমাদের বর্তমান লড়াই ফ্যাসিবাদী কাঠামো থেকে মুক্তির লড়াই।’
পথসভায় অন্যদের মধ্যে বক্তৃতা করেন– এনসিপির মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণ) হাসনাত আব্দুল্লাহ, যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, কেন্দ্রীয় নেতা ডা. মাহমুদা রিকু, মো. আতাউল্লাহ, সাকিব শাহরিয়ার, খালেদ সাইফুল্লাহ জুয়েল, ইয়াহিয়া জিসান ও সালমান জাভেদ।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন এনসিপির মুখ্য সংগঠক (উত্তর) সারজিস আলম। উপস্থিত ছিলেন মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরউদ্দীন পাটোয়ারী, ডা. তাসনিম জারা প্রমুখ।