• সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫, ০২:২২ পূর্বাহ্ন

মিটফোর্ড হত্যাকাণ্ডে সমালোচনার মুখে বিএনপি

প্রভাত রিপোর্ট / ৪ বার
আপডেট : রবিবার, ১৩ জুলাই, ২০২৫
মিটফোর্ড হাসপাতাল চত্বরেই ঘটে নির্মম এই ঘটনা: ছবি সংগৃহীত

প্রভাত রিপোর্ট: দুষ্কৃতকারীদের অপরাধের দায় দল নেবে না-বিএনপির নেতারা আগে এ কথা বলে এলেও একশ্রেণির নেতা-কর্মীর বেপরোয়া কর্মকাণ্ড দলটি নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। যার কারণে লাল চাঁদ হত্যাকাণ্ডের পর বিএনপিকে লক্ষ্য করে ক্ষোভ বিক্ষোভ ও নিন্দা-প্রতিবাদ বাড়ছে। অন্যদিকে বিএনপির নীতিনির্ধারকেরা এসব ঘটনার মধ্যে পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রেরও গন্ধ পাচ্ছেন। তাঁরা এসব ঘটনাকে আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপিকে বেকায়দায় ফেলার ‘পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র’ হিসেবে দেখছেন। সরকারের বিরুদ্ধে এসব অপরাধীকে দমনে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগও তুলেছেন কোনো কোনো নেতা। বিএনপির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে হত্যার ঘটনার নিন্দা জানিয়ে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে জাতীয়তাবাদী যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের পক্ষ থেকে পাঁচজনকে আজীবন বহিষ্কার করে তাঁদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও আইনের আওতায় আনার আহ্বান জানানো হয়েছে।
বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতার সঙ্গে আলাপকালে তাঁরা বলেন, দখল, টেন্ডার, চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে মূলত নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ছেন নেতা-কর্মীরা। এসব দ্বন্দ্ব রূপ নিচ্ছে সশস্ত্র সংঘাতে, ঘটছে প্রাণহানির ঘটনা। স্থানীয় পর্যায়ে আধিপত্য, কমিটিতে পদ-পদবি পাওয়াকে কেন্দ্র করে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হচ্ছে। বিএনপিতে অন্য দলের নেতা-কর্মীর অনুপ্রবেশ এবং দীর্ঘদিন নিষ্ক্রিয় অনেক নেতা-কর্মী আবার সক্রিয় হওয়াও এসব দ্বন্দ্ব-সংঘাতের কারণ বলে মনে করছেন দলের অনেকে।
গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকেই দেশজুড়ে বিএনপি ও তার অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দখল, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ উঠতে থাকে। দলীয় সূত্র বলছে, শুরু থেকেই এসবের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করে বিএনপি। সংগঠনবিরোধী কার্যকলাপের জেরে কড়া সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া শুরু হয়, যা অব্যাহত রয়েছে। ৫ আগস্টের পর থেকে এ পর্যন্ত দলীয় শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ডের অভিযোগে সারা দেশে দল এবং এর অঙ্গসংগঠনের সাড়ে ৪ হাজারের মতো নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন ঘটনায় ছাত্রদল এখন পর্যন্ত সারা দেশে ৩২৯ জনকে বহিষ্কার ও ৫৪১ নেতা-কর্মীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে। স্বেচ্ছাসেবক দলের কমপক্ষে ১০০ জনকে বহিষ্কার, ১০০ জনের পদ স্থগিত এবং প্রায় ২০০ জনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া যুবদলের ১৫০ নেতা-কর্মীকে বহিষ্কার, ৫৬ জনকে শোকজ এবং ৫ জনের পদ স্থগিত করে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। তৃণমূল থেকে কেন্দ্রের নেতারাও এই শাস্তির আওতা থেকে রেহাই পাচ্ছেন না। কিন্তু এরপরও দলের নেতা-কর্মীদের অপকর্মের লাগাম টানা সম্ভব হচ্ছে না।
দখল, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডসহ সব ধরনের অপকর্মের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ ঘোষণা, দ্রুত সাংগঠনিক ব্যবস্থা-কোনো কিছুতেই যেন কিছু হচ্ছে না। বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের হুঁশিয়ারি, সাংগঠনিক বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে দল ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের অপকর্ম অব্যাহত রয়েছে। এ নিয়ে দেশজুড়ে জনমনে ক্ষোভ ও হতাশার কারণে প্রচণ্ড চাপে পড়েছে বিএনপি। সর্বশেষ মিটফোর্ড এলাকায় বিএনপির সঙ্গে যুক্ত নেতা-কর্মীদের হাতে ভাঙারি ব্যবসায়ীর নৃশংস হত্যাকাণ্ড সমালোচনার আগুনে ঘি ঢেলে দিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন পরিসরে এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা যাচ্ছে।
বিরাজমান পরিস্থিতিতে বিএনপির কাছে আরও ‘দায়িত্বশীল ভূমিকা’ প্রত্যাশা করেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা। বিএনপির নেতা-কর্মীদের নানা অপকর্ম বৃদ্ধির কারণ হিসেবে দলটির নেতৃত্বের দুর্বলতার কথাও তুলেছেন তাঁদের কেউ কেউ। একই সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক রাজনৈতিক বিশ্লেষক মোহাম্মদ মজিবুর রহমান বলেন, ‘বিএনপিকে আরও দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে। আমার মনে হয়, অনেক সময় গেছে, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের এখন দেশে আসা উচিত। দেশে এসে তাঁর শক্তভাবে দলের হাল ধরা উচিত।’ একই সঙ্গে সরকারের সমালোচনা করে অধ্যাপক মোহাম্মদ মজিবুর রহমান আরও বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, অপরাধীর বিচার ও শাস্তির দায়িত্ব সরকারের, কোনো দলের নয়। বিএনপি দল হিসেবে নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে, বহিষ্কার করছে এবং তাঁদের বিচারের জন্য সরকারকে বলছে। তারা যদি ব্যবস্থা না নিত, তাহলে বলা যেত, বিএনপি ব্যবস্থা নিচ্ছে না। কিন্তু সরকার নিজেদের দায়িত্ব পালন করতে পারছে না। এ বিষয়ে তারা সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ। তাদের যোগ্যতা, দক্ষতা ও দায়বদ্ধতা নেই।’
পুরান ঢাকায় নৃশংস হত্যাকাণ্ডে বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের সম্পৃক্ততার ঘটনায় ব্যাপকভাবে চাপে পড়েছে দলটি। এ ঘটনায় জড়িত যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের পাঁচ নেতা-কর্মীকে সংগঠন থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হলেও বিএনপি তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন এলাকায় হামলা, খুন, দখল, অর্থ দাবি, আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সংঘাত, দলীয় পদপদবি নিয়ে সংঘর্ষের ঘটনায় এমনিতেই বিব্রত দলটির নেতারা।
দুষ্কৃতকারীদের অপরাধের দায় দল নেবে না-বিএনপির নেতারা আগে এ কথা বলে এলেও একশ্রেণির নেতা-কর্মীর বেপরোয়া কর্মকাণ্ড দলটি নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। যার কারণে লাল চাঁদ হত্যাকাণ্ডের পর বিএনপিকে লক্ষ্য করে ক্ষোভ-বিক্ষোভ ও নিন্দা-প্রতিবাদ বাড়ছে। এরই মধ্যে গত বুধবার সন্ধ্যায় পুরান ঢাকায় ভাঙারি ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগকে হত্যা করা হয়। বর্বরোচিত এই হত্যাকাণ্ডের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে মানুষের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি হয়।
এদিকে আগামী জাতীয় নির্বাচন, গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার, জুলাই ঘোষণাপত্রসহ কয়েকটি বিষয়ে যখন অন্য দলগুলোর সঙ্গে বিএনপির মতবিরোধ চলছিল; সে সময়ে পুরান ঢাকার এ হত্যাকাণ্ড বিএনপিকে রাজনৈতিকভাবে বেশ বেকায়দায় ফেলেছে। এ হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অঙ্গনও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। ঘটনার নিন্দা জানিয়ে ইতিমধ্যে জামায়াতে ইসলামী, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, ইসলামী আন্দোলনের ছাত্র ও যুব সংগঠন রাজধানীতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে। তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) বিভিন্ন দল ও সংগঠন।


আপনার মতামত লিখুন :
এই বিভাগের আরও