প্রভাত ডেস্ক: ভারতে নির্বাসিত তিব্বতীয় আধ্যাত্মিক নেতা দালাই লামার উত্তরসূরি বাছাই সংক্রান্ত বিষয়গুলো দিল্লি-বেইজিং সম্পর্কের পথে ‘কাঁটা’ হয়ে আছে। রবিবার (১৩ জুলাই) দিল্লিতে অবস্থিত চীনা দূতাবাস এমন কথা বলেছে। চীনারা তিব্বতকে ‘শিজাং’ নামে ডাকেন। এক বিবৃতিতে চীনা দূতাবাসের মুখপাত্র ইউ জিং বলেন, আসলে শিজাং-সংক্রান্ত বিষয়গুলো চীন-ভারত সম্পর্কে একটা কাঁটার মতো হয়ে আছে এবং এটা ভারতের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের চীন সফর সামনে রেখে এমন মন্তব্য করল বেইজিং। ২০২০ সালে দুই দেশের সেনাদের মধ্যে সীমান্তে সংঘর্ষ হওয়ার পর এবারই প্রথম চীন সফরে যাচ্ছেন তিনি। চলতি মাসে দালাই লামার ৯০তম জন্মদিন উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। সেখানে ভারতের একাধিক জ্যেষ্ঠ মন্ত্রী যোগ দেন। সে অনুষ্ঠানে বক্তব্যে দালাই লামা বলেন, তাঁর উত্তরসূরি বাছাইয়ে চীনের কোনো ভূমিকা থাকবে না। তাঁর এ কথা চীনকে নতুন করে ক্ষুব্ধ করে তোলে।
তিব্বতিরা বিশ্বাস করেন, জ্যেষ্ঠ কোনো বৌদ্ধধর্মের গুরু মারা গেলে তাঁর আত্মা নতুন কোনো শিশুর মধ্যে ফিরে আসে। তবে চীন বলছে, দালাই লামার উত্তরসূরি কে হবেন, তা দেশটির নেতাদের অনুমোদন নিয়েই ঠিক করতে হবে। ১৯৫৯ সালে চীনের বিরুদ্ধে তিব্বতে বিদ্রোহ হয়েছিল। সে বিদ্রোহ ব্যর্থ হলে দালাই লামা ভারতে চলে যান। এর পর থেকে তিনি সেখানেই নির্বাসনে আছেন।
ভারতের পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক বিশ্লেষকদের মতে, দালাই লামার উপস্থিতি চীনের ওপর ভারতের একটা কৌশলগত চাপ। ভারতে প্রায় ৭০ হাজার তিব্বতির বসবাস। এখানে তাঁদের একটি নির্বাসিত সরকারও আছে। রবিবার (১৩ জুলাই) এক পোস্টে চীনা দূতাবাসের মুখপাত্র ইউ জিং বলেন, ভারতের কিছু কৌশলবিদ ও গবেষক দালাই লামার পুনর্জন্ম নিয়ে ‘অযথা কথা’ বলছেন। মুখপাত্র বলেন, পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে যাঁরা কাজ করেন, তাঁদের পুরোপুরিভাবে শিজাং–সংক্রান্ত (তিব্বত) বিষয়গুলোর সংবেদনশীলতা বোঝা উচিত। দালাই লামার পুনর্জন্ম আর উত্তরসূরি নির্বাচন একান্তই চীনের নিজস্ব বিষয়। এক সপ্তাহ আগে দালাই লামার ৯০তম জন্মদিন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ভারতের সংসদীয় ও সংখ্যালঘুবিষয়ক মন্ত্রী কিরেন রিজিজু তাঁর পাশে বসে ছিলেন। তিনি বলেছিলেন, একজন বৌদ্ধ হিসেবে তিনি বিশ্বাস করেন, দালাই লামার উত্তরসূরি নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকার একমাত্র এই আধ্যাত্মিক নেতার এবং তাঁর কার্যালয়ের। তবে ভারত সরকার এ বিষয়ে সরাসরি কিছু বলছে না। দালাই লামার জন্মদিনের দুই দিন আগে ৪ জুলাই ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছিল, ধর্মীয় বিশ্বাস ও আচার-অনুষ্ঠান নিয়ে সরকার কোনো মন্তব্য করে না বা অবস্থান নেয় না।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ১৫ জুলাই চীনের উত্তরাঞ্চলীয় তিয়ানজিন শহরে সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন আয়োজিত একটি আঞ্চলিক নিরাপত্তা সম্মেলনে অংশ নিতে যাচ্ছেন। সম্মেলনের ফাঁকে তাঁর কিছু দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করার কথা আছে। ২০২০ সালে সীমান্তে হওয়া সংঘর্ষে ভারতের ২০ জন ও চীনের ৪ জন সেনা নিহত হওয়ার পর দুই দেশের সম্পর্ক অনেক খারাপ হয়ে পড়ে। জয়শঙ্করের এ সফর হতে যাচ্ছে সে ঘটনার পর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উচ্চপর্যায়ের বৈঠক।