আজ
|| ১৪ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ || ৩০শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ || ১৮ই মহর্রম, ১৪৪৭ হিজরি
রেইড ২ সিনেমায় অজয় কি রিতেশের কাছে হেরে গেলেন
প্রকাশের তারিখঃ ১৪ জুলাই, ২০২৫
প্রভাত বিনোদন: ২০১৮ সালে রাজকুমার গুপ্তার রেইড সিনেমাটি মুক্তির পর ব্যাপক প্রশংসিত হয়। বক্স অফিসেও ভালো ব্যবসা করে। পুলিশ কর্মকর্তা অজয় দেবগন যখন একের পর এক রেইড দিতে থাকেন, সে সময়ের টান টান রোমাঞ্চ এখনো মনে করতে পারবেন দর্শকেরা। তাই রেইড-প্রেমীদের জন্য ‘রেইড ২’ ছিল এক প্রতীক্ষিত সিকুয়েল। কিন্তু প্রথম পর্বের সেই সামাজিক বার্তা আর টান টান উত্তেজনা কি এই পর্বেও ধরে রাখতে পেরেছেন নির্মাতা? ‘রেইড ২’ সিনেমাটি ১ মে মুক্তি পায়। ওটিটি প্ল্যাটফর্ম নেটফ্লিক্সে আসে জুনের ২৬ তারিখ। মুক্তির দুই সপ্তাহ পরও তা এখনো বাংলাদেশি দর্শকদের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে। রেইড ২’ সিনেমায় আবার ফিরে আসেন সেই আইআরএস অফিসার অময় পাটনায়েক (অজয় দেবগন)। তবে এবার তিনি নতুন জায়গায় বদলি হন এমন এক অভিযোগে, যা তাঁর চরিত্রের একদম বিপরীত।
নতুন জায়গায় এসেই তিনি পরিচিত হন দাদা মনোহর ভাইয়ের (রিতেশ দেশমুখের) সঙ্গে। এলাকার সবাই তাঁকে দাদাভাই ডাকেন। সবার কাছে তিনি ঈশ্বরতুল্য, গরিবের বন্ধু। তাঁর মাতৃভক্তি হার মানায় গল্পকেও। দাদাভাইয়ের সঙ্গে অময় পাটনায়েক শুরুতে বেশ বন্ধুসুলভ ছিলেন। কিন্তু হঠাৎ করেই তিনি রেইড ঘোষণা করেন দাদাভাইয়ের বিপক্ষে। এ ঘোষণায় পুলিশ বিভাগের মধ্যেও দ্বিধাদ্বন্দ্ব শুরু হয়। তবে চমকে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটে, যখন জীবনের প্রথমবারের হানা দিয়ে কিছুই উদ্ধার করতে পারেন না অময়; বরং শহরজুড়ে বিক্ষোভ শুরু হয় তাঁর বিপক্ষে। এ ঘটনায় অময় বিতাড়িত হন পুলিশ ডিপার্টমেন্ট থেকে। অময় কি জীবনের প্রথমবার ভুল ছিলেন? নাকি দাদাভাইয়ের কাছে হার মানলেন তিনি? এ ঘটনাই উঠে এসেছে ‘রেইড ২’ সিনেমায়। ‘রেইড ২’ সিনেমার প্রধান চরিত্রে রয়েছেন অজয় দেবগন, যিনি আয়কর অফিসার অময় পাটনায়কের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন। তাঁর পারফরম্যান্স যথারীতি পরিমিত, শান্ত, দৃঢ়। অজয়ের বিপরীতে ছিলেন রিতেশ দেশমুখ। তিনি দাদাভাই চরিত্রে বেশ ভালো অভিনয় করেছেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তিনি অজয়কেও ছাড়িয়ে গেছেন। প্রথম কিস্তিতে অজয়ের স্ত্রীর চরিত্রে ছিলেন ইলিয়ানা ডিক্রুজ। সিকুয়েলে ইলিয়ানার জায়গায় বাণী কাপুর অভিনয় করেন। কিন্তু তাঁর অভিনয় ছিল একেবারেই সাদামাটা। সিনেমায় বেশ শক্ত একটা চরিত্র হিসেবে দাদাভাইয়ের মা সুপ্রিয়া পাঠককে উপস্থাপন করার সুযোগ ছিল। কিন্তু প্রথম দিকে চরিত্রটি ভালোভাবে দেখালেও পরে যেন তাঁর দিকে কোনো নজর দেওয়া হয়নি। শেষ দিকে যখন তিনি আবার পর্দায় আসেন, তখন সে অংশটুকুও অপ্রয়োজনীয় লাগে। তবে এ সিনেমার পার্শ্বচরিত্রগুলোর কথা না বললেই নয়। আগের সিনেমার তাউজি রামেশ্বর সিং চরিত্রে সৌরভ শুক্লা এখানেও ছিলেন। এ দুই সিনেমার মধ্যে তাঁর ব্যঙ্গাত্মক সংলাপ আগের সিনেমার সঙ্গে একটা সামঞ্জস্য রেখেছে। অমিত সিয়ালের চরিত্র ছোট হলেও তাঁর অভিনয় এবং কমেডি সংলাপের কারণে তিনি আলাদাভাবে দর্শকমনে জায়গা করে নিয়েছেন।
এবার আসা যাক সিনেমার নির্মাণে। রেইড সিনেমায় দুর্নীতিবাজ নেতা রমেশ সিংয়ের বাড়িতে একের পর এক অর্থ উদ্ধারের ঘটনা টান টান উত্তেজনাপূর্ণ ছিল। কিন্তু ‘রেইড ২’তে সেই রোমাঞ্চ ছিল অনেকটাই ম্লান। প্রথম কিস্তির জনপ্রিয়তা ও বাস্তবভিত্তিক থ্রিলের ওপর ভিত্তি করে ‘রেইড ২’-কে গতি দিতে চেয়েছেন নির্মাতা। কিন্তু সেদিক থেকে এ প্রচেষ্টা পুরোপুরি সফল হয়নি। গল্পে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই, আদর্শবান অফিসারের সংগ্রাম থাকলেও, এইবার চিত্রনাট্য অনেকটাই ছকে বাঁধা। অনুমানও করা যায় সহজে। আবেগের গভীরতাও কম। অজয় দেবগন নিজের চরিত্রে ভালো অভিনয় করলেও চিত্রনাট্যের দুর্বলতার কারণে তাঁর অভিনয়ও আগের মতো প্রভাব রাখতে পারেনি। রিতেশ দেশমুখকে দারুণ প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে প্রথমদিকে উপস্থাপন করা হলেও দ্বিতীয় অংশে তাঁর ভূমিকা ছিল সাদামাটা। রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতা হয়েও তিনি যেভাবে বারবার হার মানছিলেন, সেটা একঘেয়ে লাগে। এ সিনেমার সংলাপ দারুণ। কমেডির অংশগুলো ভালো ছিল। নির্মাণ ধীরগতির হলেও সুধীর কে চৌধুরীর সিনেমাটোগ্রাফি ও অমিত ত্রিবেদীর ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর ভালো হওয়ায় গল্প এগিয়ে যেতে সমস্যা হয় না।
তবে এ সিনেমায় যে গানগুলো ব্যবহার করা হয়েছে, তা কোনোটাই ঠিক জায়গামতো খাপ খায় না। যাঁরা ‘স্ত্রী ২’ সিনেমার আইটেম গানে তামান্না ভাটিয়াকে দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন, তাঁরা এখানে তাঁকে দেখে ততটাই হতাশ হবেন। আইটেম গানের আমেজ আনতেও এ গান ব্যর্থ। যাঁরা শুধুই অজয় দেবগনের ভক্ত অথবা প্রথম ‘রেইড’ দেখে দ্বিতীয়টি দেখতে আগ্রহী, তাঁরা সিনেমাটি দেখতে পারেন। কিন্তু যাঁরা একটি কঠিন, বাস্তবধর্মী থ্রিলার দেখতে চাচ্ছেন, তাঁদের এ সিনেমা হতাশ করবে। সব মিলিয়ে ‘রেইড ২’ একটি একবার দেখার মতো সিনেমা, তবে ‘রেইড’-এর সঙ্গে তুলনা করলে এটি নিঃসন্দেহে ম্লান।
Copyright © 2025 প্রভাত. All rights reserved.