• বুধবার, ১৬ জুলাই ২০২৫, ০৬:৪০ অপরাহ্ন

বাংলাদেশ সমৃদ্ধ হলে পুরো দক্ষিণ এশিয়া উন্নত হবে: প্রধান উপদেষ্টা

প্রভাত রিপোর্ট / ২ বার
আপডেট : মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই, ২০২৫

প্রভাত রিপোর্ট: প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশকে শুধু একটি ‘ভৌগোলিক সীমানা’ হিসেবে না দেখার জন্য বিশ্বব্যাংকের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি এর চেয়ে অনেক বড়। বাংলাদেশ সমৃদ্ধ হলে পুরো দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চল উন্নত হবে। আমরা যদি নিজেদের আলাদা করে ফেলি, তাহলে আমরা এগোতে পারবো না। আমাদের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সুবিধা ও পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন করতে হবে। আমাদের একটা সমুদ্র আছে। এটি আমাদের অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। সোমবার (১৪ জুলাই) রাতে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক নবনিযুক্ত ভাইস প্রেসিডেন্ট জোহানেস জাট, বাংলাদেশ ও ভুটান বিষয়ক নতুন বিভাগীয় পরিচালক জ্যঁ পেসমে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে এলে তিনি এসব কথা বলেন।
বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক নবনিযুক্ত ভাইস প্রেসিডেন্ট জোহানেস জাট বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধির প্রতি দৃঢ় সমর্থন ব্যক্ত করেন এবং অর্থনৈতিক খাতে সরকারের অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার এজেন্ডার জন্য প্রধান উপদেষ্টাকে প্রশংসা করেন। আলোচনায় জাট বাংলাদেশের প্রতি তার গভীর অনুরাগ প্রকাশ করেন এবং ২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ, ভুটান ও নেপালে কান্ট্রি ডিরেক্টর হিসেবে তার মেয়াদের কথা স্মরণ করেন।
ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রচেষ্টা, বিশেষ করে ‘আর্থিক খাতের কিছু চ্যালেঞ্জিং ইস্যু’ মোকাবিলায় সরকারের প্রচেষ্টার কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘ভালো কাজ করার জন্য আপনাকে এবং আপনার চমৎকার টিমকে অভিনন্দন। আমরা আমাদের যাত্রা অব্যাহত রাখতে এবং বাংলাদেশের জনগণের আকাঙ্ক্ষা ভাগ করে নিতে প্রস্তুত।’ তিনি গত বছরের জুলাইয়ের অভ্যুত্থানে প্রাণ হারানো শিক্ষার্থীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে বলেন, ‘বাংলাদেশের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবার জন্য এটি অত্যন্ত মর্মস্পর্শী মুহূর্ত।’
প্রধান উপদেষ্টা তার সমর্থন ও প্রশংসার জন্য তাকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, ‘আমরা যখন দায়িত্ব গ্রহণ করি, তখন এটি একটি বিপর্যয়কর অঞ্চলের মতো ছিল, ভূমিকম্পের পরে বিধ্বস্ত একটি জায়গার মতো। আমাদের কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না। তারপরও সব উন্নয়ন সহযোগীরা আমাদের সহযোগিতা করেছে এবং এটি আমাদের অনেক সাহায্য করেছে; এটা আমাদের আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছে।’
ড. ইউনূস জুলাই অভ্যুত্থানে তরুণদের ভূমিকার কথা তুলে ধরে বলেন, ‘তারা এই জাতিকে নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখিয়েছে। গত জুলাইয়ে আমাদের তরুণরা যা করেছে তা ঐতিহাসিক; বিশেষ করে আমাদের মেয়ে ও নারীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। আমরা আজ জুলাই নারী দিবস পালন করছি। তাদের আত্মত্যাগ যেন বৃথা না যায়। তরুণরাই আমাদের দেশের কেন্দ্রবিন্দু। আমাদের তরুণদের দিকে মনোনিবেশ করতে হবে এবং তাদের উচ্চাকাঙ্ক্ষার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘বেশিরভাগ দেশে তরুণ জনগোষ্ঠীর অভাব রয়েছে, তাই আমরা তাদের কারখানাগুলো এখানে আনতে বলেছি। আমরা শিল্পের জন্য একটি উৎপাদন কেন্দ্র তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সরবরাহ করবো।’
বিশ্বব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট নারীর ক্ষমতায়নে ড. ইউনূসের কাজের প্রশংসা করে বলেন, ‘বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় বাংলাদেশে নারী শিক্ষা উপবৃত্তি কর্মসূচির অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে, যা অন্যান্য দেশেও অনুকরণ করা হচ্ছে। বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের তরুণদের জন্য সুযোগ তৈরিতে সহায়তা করবে। বৈশ্বিক ঋণদাতা গত অর্থবছরে বাংলাদেশে ৩ বিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থায়ন করেছে এবং আগামী তিন বছরেও একই ধরনের সহায়তা অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।’
বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকীও উপস্থিত ছিলেন। তিনি চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) সম্পর্কে একটি আপডেট তুলে ধরেন। তিনি উল্লেখ করেন, নতুন অপারেশনাল ব্যবস্থাপনার ফলে চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালে (এনসিটি) কনটেইনার হ্যান্ডলিং বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের পরিকল্পনা হচ্ছে এটাকে আরও কার্যকর করা। আন্তঃকোম্পানি ঋণ এবং শক্তিশালী ইক্যুইটি বিনিয়োগের তীব্র বৃদ্ধির কারণে আমরা ২০২৫ সালের জানুয়ারি-মার্চ ত্রৈমাসিকে নেট প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের (এফডিআই) উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি দেখেছি।


আপনার মতামত লিখুন :
এই বিভাগের আরও