নজরুল ইসলাম, গাইবান্ধা : বর্ষার প্রতীক, প্রিয় ‘বর্ষার দূত’ কদমফুল আজ অপসৃতির পথে। একসময়ে জুন–আগস্ট মাসে সোনালি বোল আকৃতির কদমের অম্লান সৌন্দর্য পুরো বর্ষাকে পূর্ণ করে তুলতো গাইবান্ধা জেলার সাত উপজেলায়। তবে আজকের কংক্রিটবেড়ে শহর ও বাণিজ্যিক লাভজনক বৃক্ষরোপণে কদম দেখা মিলছে শুধু স্মৃতিশক্তির পাতায়। কদম ফুলের বৈশিষ্ট্য ভালোভাবে তুলে ধরেছে। ফুলগুলো দেখতে গোলাকার, মাঝে হলুদাভ ও বাইরে সাদা-হলদেটে স্পাইক জাতীয় পাপড়ি শরীরের মতো।
নামেই পরিচিত এই গাছ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আবহাওয়ায় খুব দ্রুত বাড়ে, এবং প্রায় ৪৫ মিটার পর্যন্ত উচ্চতা ছুঁতে পারে। কাঠমূলে একটি সরল সিলিন্ড্রিক গঠন দেখা যায়, এবং এর ঢাকা ছায়াময় গাছতলা প্রশস্ত উপত্রযুক্ত।
কদম ফুল হয় ছোট ছোট ফ্লোরেটের একত্রে গঠিত একটি ‘মঞ্জরী’, যার হারিক সূত্র প্রায় ৫–৫.৫ সেমি ব্যাসের গোলাকার গুচ্ছ হয়, এবং এটি চারিদিকে ফুলের তোড়ে ভরে উঠে। ফুলের রং সাধারণত হলুদ-কমলা, গন্ধ মিষ্টি ও আকর্ষণীয়; বর্ষা মৌসুমে এটি উচ্চতম ও ঘন ফোটা অবস্থায় দেখা যায়।
গ্রামের রাস্তাঘাট, বাড়ির উঠানে আর স্কুল– কলেজ,বিশ্ববিদ্যালয়ের পথ ধরে চোখে পড়ত কদম। তবে এখন ‘অসংখ্য কদমগাছ’ খুঁজে পাওয়া যায় না
ছোটবেলা কদম ফুল দিয়েই খেলতাম, দুলতে দিতাম; এখন তার অস্তিত্বই কল্পনা” — গাইবান্ধার সমাজ সেবক প্রকৃতি প্রেমী জিয়াউল হক জনি বলেন,একটি ফুল মনে হলেও আসলে অজস্র ছোট ফ্লাওয়ার দিয়ে গঠিত এক ‘মঞ্জরী’, যা প্রায় ৮,০০০টি ফুলের সমষ্টি — “বল আকৃতির গোলাকার, মাংসল ও সরু পাপড়িগুলো দিয়ে সাজানো।
সাবলীল সৌরভ আর নিভৃত সৌন্দর্যের ফুলটি বর্ষার সঙ্গে অন্তর্মিশ্রণ করেছে— বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথের তাঁর ছন্দে যেমন ‘বাদল দিনের প্রথম কদম ফুল করেছ দান’।
কদম কাঠ নরম, অর্থবহ না হওয়ায় মানুষ ও প্রশাসনিক পর্যায়েই মেহগনি বা রেইন্ট্রি-মত লাভজনক বৃক্ষ রোপণ করছে।
কদম বাণিজ্যিকভাবে চাষ হয় না; বিদ্যালয় বা সরকারি প্রতিষ্ঠানের উঠানে উদ্দ্যাগও কম। কংক্রিটে জেলা ও উপজেলা শহর– কদম গাছের উপস্থিতি অপেক্ষাকৃত অনেক দুর্লভ।
পরিবেশ-বিজ্ঞানীরা আগেই সতর্ক করেছেন, কদম গাছ কমে গেলে তা ‘প্রজাতি’ সংকটে পতিত হতে পারে। ফল ও বীজ ছাড়াও স্থানীয় জীববৈচিত্র্য ক্ষতির মুখে পড়তেপারে। তারা বলেন, মানুষ যেন যোজন যোজন দূর থেকে কেটে নিয়ে না যায়; বর্ষায় তার সৌরভ মানুষের মন নাড়িয়ে তোলে এবং পাখি–বাদুড়ের খাদ্য সরবরাহ করে
কদম শুধু বর্ষার সৌন্দর্য নয়, বাঙালির শৈশব, স্মৃতি, প্রেম ও সাহিত্য এক সাথে ধারণ করে। তার অস্তিত্ব রক্ষার জন্য প্রয়োজন ব্যক্তি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, প্রশাসন ও পরিবেশ-প্রেমীদের সমন্বিত উদ্যোগ। তা না হলে ‘বর্ষার দূত’ কদম একদিন শুধু শোভাময় গানের লাইন হয়ে থাকবে স্মৃতির জাদুঘরে।