আজ
|| ২০শে জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ || ৫ই শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ || ২৪শে মহর্রম, ১৪৪৭ হিজরি
ফৌজদারি কার্যবিধির নতুন ধারায় পুলিশ হত্যা মামলায় অব্যাহতি পেলো কিশোর ফাইয়াজ
প্রকাশের তারিখঃ ২০ জুলাই, ২০২৫
প্রভাত রিপোর্ট : রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানায় করা পুলিশ হত্যার মামলায় সংশোধিত ফৌজদারি কার্যবিধির ১৭৩(এ) ধারায় দাখিল করা অন্তর্বর্তী প্রতিবেদনের ফলে মুক্তি পেয়েছে ১৭ বছরের কিশোর হাসনাতুল ইসলাম ফাইয়াজ। গত ১০ জুলাই অধ্যাদেশ জারির পাঁচ দিনের মাথায় তদন্তাধীন মামলা থেকে এই প্রথম কাউকে অব্যাহতি দেওয়া হলো।
গত ১৩ জুলাই মামলার দায় থেকে ফাইয়াজের অব্যাহতি চেয়ে আদালতে অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন দাখিল করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা (ওয়ারী) বিভাগ। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৫ জুলাই ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জি এম ফারহান ইশতিয়াকের আদালত প্রতিবেদনটি গ্রহণ করে তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেন। ফলে এ আইনের প্রথম সুবিধাভোগী হলো কিশোর ফাইয়াজ। রবিবার (২০ জুলাই) ডিএমপির প্রসিকিউশন বিভাগের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার মাঈন উদ্দিন চৌধুরী এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, অন্তর্বর্তী প্রতিবেদনের আলোকে যাত্রাবাড়ী থানার হত্যা মামলায় এই কিশোরকে অব্যাহতি দেন আদালত। নতুন আইনে দেশে প্রথমবারের মতো কাউকে তদন্তাধীন মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হলো।
অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন নিয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও গোয়েন্দা (ওয়ারী) বিভাগের পুলিশ পরিদর্শক মোল্লা মো. খালিদ হোসেন জানান, মামলার ঘটনার সঙ্গে শিশু ফাইয়াজের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি। যেহেতু মামলাটির তদন্ত শেষ করা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার, এ কারণে নতুন আইনে ফাইয়াজের অব্যাহতি চেয়ে সংশোধিত ফৌজদারি কার্যবিধির ১৭৩ (এ) ধারায় অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন জমা দিয়েছি। তবে মামলাটির তদন্ত কার্যক্রম স্বাভাবিক গতিতে চলবে।
ফৌজদারি কার্যবিধির ১৭৩(এ) ধারায় বলা হয়েছে, ‘পুলিশ কমিশনার, এসপি বা কোনও জেলার এসপি পদমর্যাদার কোনও পুলিশ কর্মকর্তার এখতিয়ারাধীন কোনও মামলার বিষয়ে তিনি যৌক্তিক মনে করলে ইনভেস্টিগেশন অফিসার বা তদন্ত কর্মকর্তাকে ম্যাজিস্ট্রেট বরাবর সেই মামলার তদন্তের ব্যাপারে প্রাথমিক বা প্রিলিমিনারি ইনভেস্টিগেশন রিপোর্ট দাখিল করার নির্দেশ দিতে পারবেন। ম্যাজিস্ট্রেট তার বিবেচনাবলে নিরপরাধ ও যার বিরুদ্ধে উক্ত অপরাধের কোনও সাক্ষ্যপ্রমাণ নেই, তাদের প্রি ট্রায়াল বা বিচার পূর্ববর্তী স্টেজেই মামলা থেকে অব্যাহতি দিতে পারবেন।
অন্তর্বর্তী প্রতিবেদনে বলা হয়, মামলার তদন্ত কার্যক্রম চলমান রয়েছে। সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণ, ডিজিটাল সাক্ষ্যগ্রহণ, ফরেনসিক পরীক্ষা ও বিচার্য বিষয় প্রমাণের জন্য অন্যান্য প্রাসঙ্গিক বিষয়াদি যাচাই করা সময় সাপেক্ষ। কিন্তু আদালত ইতোমধ্যে এ মামলার আইনের সহিত সংঘাতে জড়িত হাসনাতুল ইসলাম ফাইয়াজকে শিশু হিসেবে ঘোষণা করেছেন। তদন্তে ঘটনার সঙ্গে তার কোনও সম্পৃক্ততা প্রমাণিত না হওয়ায় মামলার তদন্ত সমাপ্ত হওয়ার পর তাকে এ মামলার দায় থেকে অব্যাহতি প্রদান করলে শিশু তার অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে। চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্রে শিশু পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডারে ভুগছে মর্মে তদন্তে জানা যায়। এক্ষেত্রে তার চাপমুক্তভাবে বেড়ে উঠা, স্বাভাবিক পরিবেশে পড়াশোনা নিশ্চিত করার বিষয়টি অত্যন্ত জরুরি।
এজন্য সরকার কর্তৃক জারিকৃত গেজেট অনুযায়ী ফৌজদারি কার্যবিধির ১৮৯৮ এর ১৭৩ (এ) ধারার আলোকে মামলা চলমান অবস্থায় অন্তর্বর্তীকালীন তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের বিধান রয়েছে। ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত সাক্ষ্য-প্রমাণ না পাওয়ায় তদন্তাধীন মামলার দায় থেকে আইনের সহিত সংঘাতে জড়িত শিশুকে দ্রুত অব্যাহতি প্রদান করে অন্তর্বর্তীকালীন পুলিশ তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করার প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয়। মামলাটি চাঞ্চল্যকর এবং তদন্ত কার্যক্রম সম্পন্ন হওয় সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। এজন্য এজাহারভুক্ত আইনের সহিত সংঘাতে জড়িত শিশু হাসনাতুল ইসলাম ফাইয়াজকে (১৭ বছর ৩ মাস) পেনাল কোডের সাতটি ধারার অভিযোগের দায় থেকে অব্যাহতি চেয়ে অন্তর্বর্তীকালীন তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হল।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, এ মামলায় যাদের আসামি করা হয়েছে তাদের অধিকাংশ বিএনপি, জামায়াত ও কোটাবিরোধী ছাত্র-জনতা। ঘটনাস্থল রায়েরবাগের ফুটওভার ব্রিজ ও তার আশপাশ এলাকায় কোটা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের কয়েক হাজার আন্দোলনকারীর উপস্থিতি ছিল। গত বছরের ১৯ জুলাই আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীদের হামলা ও পুলিশের গুলিতে ঘটনাস্থলে একজন আন্দোলনকারী শহীদ হন। ছাত্র-জনতাকে মারধর ও খুন-জখম করে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের সহযোগী অন্যান্য অঙ্গ-সংগঠনের সন্ত্রাসীরা যাত্রাবাড়ী থানাধীন রায়েরবাগ ফুটওভার ব্রিজ ও তার আশপাশের এলাকা দখলে নেন। এ সময় অবস্থানরত সন্ত্রাসীদের মধ্যে কে বা কারা মৃত পুলিশ সদস্য গিয়াস উদ্দিনের মোটরসাইকেলের গতিরোধ করেন। পরে তাকে নির্মমভাবে হত্যা করে ফুটওভার ব্রিজের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখে এবং তার ব্যবহৃত মোটরসাইকেল চুরি করে নিয়ে যায়। এ হত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে যাত্রাবাড়ী থানায় মামলা হয়। এ মামলায় পুলিশ আটজনকে গ্রেফতার করে। এর মধ্যে এজাহারনামীয় ১৬ নম্বর আসামি শিশু হাসনাতুল ইসলাম ফাইয়াজকে গ্রেফতার করা হয়। তবে প্রাথমিকভাবে প্রাপ্ত সাক্ষ্য-প্রমাণাদি ও পারিপার্শ্বিকতায় এ মামলার ঘটনায় আসামি শিশু হাসনাতুল ইসলাম ফাইয়াজের কোনও সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, গত বছরের ২৪ জুলাই বছর ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে রাতে সাধারণ পোশাকের একদল লোক ফাইয়াজকে তার মাতুয়াইলের বাসা থেকে জিজ্ঞাসাবাদের কথা বলে তুলে নিয়ে যায়। পরে তাকে আদালতে তোলা হলে সাত দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন আদালত। পরে এ নিয়ে দেশব্যাপী সমালোচনা শুরু হলে তার রিমান্ড বাতিল করেন হাইকোর্ট এবং তাকে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
Copyright © 2025 প্রভাত. All rights reserved.