প্রভাত রিপোর্ট: বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের বহির্বিভাগের দৈনন্দিন পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, কয়েক দিন ধরে জ্বর, সর্দিকাশি ও শরীর ব্যথার উপসর্গ নিয়ে আসা রোগীর সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। বহির্বিভাগে সাধারণ সময়ে একজন চিকিৎসক গড়ে ৪০ জন রোগী দেখলেও এখন তাঁদের রোগী দেখতে হচ্ছে ৭০-৮০ জন। পরীক্ষা করে ১০ শতাংশ ডেঙ্গু রোগী পাওয়া যাচ্ছে। এ ছাড়া চিকুনগুনিয়া ও টাইফয়েডের উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে অনেক রোগী আসছে।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, করোনা, ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, টাইফয়েড ও মৌসুমি জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে বেশির ভাগ মানুষ। এই জ্বরগুলোর সবই ভাইরাসজনিত। উপসর্গও প্রায় একই রকম। বেশি আক্রান্ত হচ্ছে সাধারণ ভাইরাস ও শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণজনিত জ্বরে।
দেশে ভাইরাসজনিত জ্বরের প্রকোপ দেখা দিয়েছে। শিশু থেকে বৃদ্ধ কেউ বাদ যাচ্ছে না। কয়েক দিন ধরে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতাল ও চেম্বারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চার থেকে পাঁচ দিনের জ্বর নিয়ে আসছে রোগীরা। একজনের জ্বর হলে পরিবারের অন্যরাও আক্রান্ত হচ্ছে।
বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের এপিডেমিওলজিস্ট ডা. এ বি এম মাহফুজ হাসান আল মামুন বলেন, একজন জ্বরে আক্রান্ত হলে দেখা যাচ্ছে, পরিবারের অন্য সদস্যরাও জ্বরে ভুগছে। এসব রোগীর মধ্যে ১০ শতাংশ ডেঙ্গু শনাক্ত হচ্ছে। ধারণা করা হয়, ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা আরো বেশি। তবে নমুনায় শনাক্তের হার কম। এ ছাড়া চিকুনগুনিয়া ও টাইফয়েডের উপসর্গ নিয়ে অনেক রোগী আসছে।
চিকিৎসকরা বলেন, জ্বর আসলে কোনো রোগ নয়; এটি রোগের একটি লক্ষণ বা উপসর্গ। অনেক কারণে জ্বর হতে পারে। সবচেয়ে কমন হলো ঠাণ্ডা লেগে জ্বর হওয়া বা সর্দিকাশির কারণে জ্বর। এর বাইরে শরীরের ভেতরে কোনো কারণে ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসের আক্রমণ হলে, অর্থাৎ ইনফেকশন হলে জ্বর হতে পারে। এ ছাড়া টিকা নিলে, ফোড়া বা টিউমার হলে, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, প্রস্রাবের রাস্তায় ইনফেকশন হলে, পিরিয়ডের কারণে, আকস্মিক ভয় পেলে বা মানসিক আঘাত পেলেও জ্বর হতে পারে।
প্রিভেন্টিভ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, আবহাওয়া পরিবর্তনের এই গরম-ঠাণ্ডার মধ্যে প্রায় প্রতিটি পরিবারে মৌসুমি জ্বরের প্রকোপ দেখা দিয়েছে। আবার বন্যাকবলিত এলাকায় পানিবাহিত রোগ, বিশেষ করে টাইফয়েড, পেটের অসুখও হচ্ছে। এসব রোগীর একটু জটিলতা বেশি দেখা দিচ্ছে। এসব জ্বরে প্যারাসিটামল খেলেই হয়; কোনো অ্যান্টিবায়োটিকের দরকার নেই।
তিনি বলেন, বাইরের প্রচণ্ড গরম থেকে ফিরে অনেকে বাসায় বা অফিসে গিয়ে এসির নিচে বসে যান। অথবা বাইরে তীব্র গরম থেকে এসে ঠাণ্ডা পানি পান করছেন। এই ঠাণ্ডা-গরমের সংমিশ্রণ থেকেই জ্বর-সর্দি চলে আসতে পারে। এসব রোগীর কারো সারা গায়ে ব্যথা, হালকা জ্বর, কারো কাঁপুনি, মাথা ব্যথা, হাত-পায়ের গিরায় ব্যথা, নাক দিয়ে অঝোরে পানি পড়া বা সর্দির মতো উপসর্গ দেখা যায়।
বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. ফজলে রাব্বি চৌধুরী বলেন, সাধারণ জ্বরে সর্দিকাশির সঙ্গে হালকা গায়ে ব্যথার মতো উপসর্গ দেখা দিচ্ছে। জ্বর থাকছে চার থেকে পাঁচ দিন। তবে চার দিনের বেশি জ্বর থাকলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে পরামর্শ নেওয়া উচিত।
ডা. মো. ফজলে রাব্বি চৌধুরী বলেন, ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তির চিকুনগুনিয়ার চেয়ে গায়ে ব্যথা কম হয়। চিকুনগুনিয়ায় জয়েন্টে জয়েন্টে ব্যথা, মাংসের পেশিতে অনেক বেশি ব্যথা হয়ে থাকে। গায়ে র্যাশ চলে আসে দ্রুত। ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে মাথা ব্যথা, চোখের পেছনে ব্যথা, পাতলা পায়খানা হওয়া, পেটে ব্যথা এগুলো একটু বেশি দেখা যাচ্ছে। তিনি বলেন, করোনা রোগীদের জ্বরের সঙ্গে কাশি, নাকে গন্ধ না পাওয়া, শ্বাসকষ্ট হওয়াÍএসব উপসর্গ ছিল। এখন কভিড রোগীদেরও জ্বরের সঙ্গে প্রচণ্ড গায়ে ব্যথা, মাথা ব্যথার মতো উপসর্গ নিয়ে আসছে। যার কারণে এসব পরীক্ষা ছাড়া আলাদা করা অনেক সময় কঠিন যায়।